অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়
কোভিড-যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে কাজ করছিলেন। দু’বার তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে আর ফেরানো যায়নি কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর অভিজ্ঞান মুখোপাধ্যায়কে। পরে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর দু’দিন পরে করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে তাঁর স্ত্রী পাপিয়া মুখোপাধ্যায়েরও। কিন্তু তাঁদের পরিবারের প্রতি সমাজের একাংশের ব্যবহারে রীতিমতো ক্ষুব্ধ পাপিয়াদেবী বলছেন, ‘‘সে সময়ে ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার স্বামী সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর রিপোর্ট তখন নেগেটিভ এসেছিল। তবু সে সময়ে আমাকে দেখেও লোকে দূরে দূরে সরে গিয়েছেন। এটা কি হওয়া উচিত?’’
কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর অভিজ্ঞানবাবু মারা যান গত ২৪ জুলাই। অথচ তার আগে দু’বার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল তাঁর। তবে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় গত ১৮ জুলাই বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৩ জুলাই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আর একটি হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান তিনি। এর পরে সে দিন বিকেলেই কড়েয়ার পুলিশ আবাসন ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে হাওড়ার আন্দুলে নিজের শ্বশুরবাড়ি চলে যান তাঁর স্ত্রী পাপিয়াদেবী। অভিজ্ঞানবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তার পরে তাঁর স্ত্রী-মেয়েরও করোনা পরীক্ষা করানো হলে মেয়ে অগ্নিহোত্রীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু জানা যায়, আক্রান্ত হয়েছেন পাপিয়াদেবী।
কড়েয়া পুলিশ আবাসনে থাকার সময়ে আবাসিকদের একাংশের আচরণে রীতিমতো হতাশ এবং ব্যথিত পাপিয়াদেবী। বর্তমানে আন্দুলের বাড়িতে হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন তিনি। ফোনে বলছেন, ‘‘স্বামীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসা সত্ত্বেও অনেকে এমন ব্যবহার করেছিলেন, যা মনে পড়লে ভীষণ কষ্ট হয়। সে সময়ে আমার করোনা পরীক্ষা হয়নি। অথচ তখনও আমাকে আক্রান্ত ভেবে লোকে দূরে সরে গিয়েছেন। এ ভাবেই আক্রান্তের পুরো পরিবারকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রতিবেশী এক দিদি যে ভাবে প্রথম থেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তা ভুলব না।’’
কড়েয়া থেকে আন্দুলের শ্বশুরবাড়ি— মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা যে সর্বত্র একই, তা-ও টের পেয়েছেন পাপিয়াদেবী। বলছেন, ‘‘দিনকয়েক আগে আমার ভাশুর বাজারে গেলে কয়েক জন চিৎকার করে বলেন, ‘ওই দেখ করোনা আসছে’। এটা কেন হবে? হাতজোড় করে সকলকে বলতে চাই, দয়া করে আক্রান্তদের ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। এ ভাবে তাঁদের দূরে ঠেলে দেবেন না।’’
তবে এই কঠিন সময়েও কিছু মানুষকে পাশে পেয়েছেন পাপিয়াদেবী। লালবাজারের পুলিশকর্তারাও যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ। ‘‘পুলিশবাহিনীর থেকে ভীষণ সাহায্য পেয়েছি। ওঁদের অবদান ভোলার নয়।’’— বলছেন তিনি।
তবে অকালে স্বামীকে হারিয়ে চিকিৎসা পরিকাঠামোর বেশ কিছু খামতির দিকে আঙুল তুলছেন পাপিয়াদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘রাজারহাট ও এসএসকেএমে দু’বার ওঁর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। সে সময়ে ওঁর জ্বর হয়েছিল। মনে হচ্ছে, রিপোর্টেই কোথাও খামতি ছিল। পজ়িটিভ জানলে আগেই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানোর সুযোগ পেতাম।’’ মুকুন্দপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি ছিলেন অভিজ্ঞানবাবু, সেখানকার বিরুদ্ধেও অব্যবস্থার অভিযোগ তুলছেন তিনি। পাপিয়াদেবী জানান, ২৩ তারিখ সকালে আমরি মুকুন্দপুর থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অভিজ্ঞানবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সে দিন ওঁর সঙ্গে মিনিট দশেক কথা বলেছিলাম। ওঁর অবস্থা দেখে কষ্ট হয়েছিল। উনি আমাকে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভের কথা বলেছিলেন।’’ যদিও এ প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালের সুপার সমীরশীতল রাজ বলেন, ‘‘অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন। ওঁর অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’’
অকালে স্বামীকে হারানোর শোক ভুলে মেয়ের দিকে চেয়ে ফের জীবনযুদ্ধে ফিরতে চান পাপিয়া। কার্শিয়াঙের
একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অগ্নিহোত্রীর কথা ভেবেই কলকাতা পুলিশের চাকরিতে শীঘ্রই যোগ দিতে চলেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy