ছবি: সংগৃহীত
প্রথম ধাক্কায় মনে হবে ছোট ডোবা। আসলে যা বড় রাস্তা। কোথাও পিচ উঠে বিপজ্জনক গর্ত হয়ে গিয়েছে। কোথাও বা তাপ্পি মারা ঝামা বেরিয়ে গিয়েছে। রাজপথের এমন ভগ্ন দশা উত্তর থেকে দক্ষিণের সর্বত্র। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, দমদম রোড, পার্ক সার্কাস সাতমাথার মোড়, এস পি মুখার্জি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ই এম বাইপাসের রুবি মোড় এবং বন্দর এলাকার হাইড রোড, ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড ও রিমাউন্ট রোড।
রাস্তার বেহাল দশা প্রতি বর্ষার চেনা ছবি। সেখানে একটানা দিন কয়েকের বৃষ্টিতে ভগ্নদশা চোখে পড়ার মতো। গত মার্চেই বেহাল রাস্তার খবর জানতে বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ডের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল লালবাজার। উদ্দেশ্য ছিল, ওই রিপোর্ট দেখে পুরসভাকে বলে বেহাল রাস্তার হাল ফেরানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু হাল ফেরানো তো দূর, আরও দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিস্থিতি।
প্রশ্ন উঠেছে, সংস্কারের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাস্তার এমন দশা কেন বার বার হয়? এর কারণ ব্যাখ্যা করে এক পুর ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, “বছরভর বিভিন্ন সংস্থা ও দফতর মাটির নীচ দিয়ে সংযোগ নিয়ে যেতে রাস্তা কাটছে। সেই কাটা অংশে হট মিক্স দিয়ে তাপ্পি মারা হয়। কাটা রাস্তায় বার বার হট মিক্স দিলেও পিচ উঠে যায়। এ জন্যই সমস্যা হচ্ছে।” যদিও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, রাস্তা তৈরিতে ব্যবহৃত জিনিস
নিম্ন মানের হওয়া রাস্তা খারাপের একটা কারণ।
সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গাতেও। তা হল, পুরসভারই বিভিন্ন দফতরের মধ্যের এবং বাইরের সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব। পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে একাধিক বার পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বাইরের যে কোনও সংস্থা বা পুরসভার অন্য দফতরকে পরিষেবামূলক কোনও কাজের কারণে রাস্তা খুঁড়তে হলে আগে তা পুরসভার রাস্তা দফতরকে জানাতে হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট দফতর জানতে পারে, শহরের কোন কোন রাস্তা খোঁড়া অবস্থায় পড়ে আছে। তার পরেও দেখা যাচ্ছে আদতে সেই বিজ্ঞপ্তি রয়ে গিয়েছে দলিল হিসেবে।
সমন্বয়ের অভাবের কথা কার্যত মেনে নিয়ে রাস্তা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রতন দে বলছেন, “বিভিন্ন সংস্থা যখন তখন না জানিয়ে রাস্তা কেটে কাজ করে। পুরসভা তাপ্পি মারার পরে টানা বৃষ্টি হলেই ফের তা গর্ত হয়ে যায়। যেমন, এস পি মুখার্জি রোডে জলের কাজ করতে গিয়ে
রাস্তা কেটেছিল। সেই মেরামত এখন ভেঙে গিয়েছে।”
সমন্বয়ের এই অভাব দেখা গেল পার্ক সার্কাস সাতমাথার মোড়, ই এম বাইপাসের রুবি মোড়-সহ একাধিক জায়গায়। ট্র্যাফিক আধিকারিকেরা জানান, ওই জায়গায় কয়েক বার গর্তে মোটরবাইকের চাকা পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই অবস্থা মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কলকাতার অধীনস্থ বন্দর এলাকার হাইড রোড, ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড বা রিমাউন্ট রোড নাগাড়ে বৃষ্টিতে ডোবার চেহারা নিয়েছে। দুর্ঘটনা সেখানে রোজকার ঘটনা। বন্দরের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “শীঘ্রই ১৯ কোটি টাকা খরচ করে ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড এবং হাইড রোডের সংস্কার শুরু হবে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারেরা রিমাউন্ট রোডের অবস্থা ঠিক আছে জানিয়েছেন। তবে আবার দেখে নেওয়া হবে।”
এ দিকে পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েক বছর ধরে শহরের রাস্তা তৈরির সময়ে বিটুমিনের পরিবর্তে ম্যাস্টিকই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছিল। ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের দাবি, রাস্তা বেশি মজবুত করতেই ম্যাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ভাঙা রাস্তার উপরিভাগ মেরামত করার পরেই পিচ বা ম্যাস্টিকের আস্তরণ দেওয়া উচিত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পুরো মেরামত না করেই ম্যাস্টিকে রাস্তা মুড়ে ফেলা হচ্ছিল। সে কারণেই বছর তিনেক আগে ম্যাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘ম্যাস্টিক দিয়ে ঠিক পদ্ধতিতে রাস্তা মেরামত বা তৈরি করা হলে অবশ্যই তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy