এক ক্লাবকর্তার হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
ক্লাবের দেওয়াল জুড়ে নানা সময়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ছবি। তারই শুরুতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ক্লাবের সদস্যদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেক তুলে দেওয়ার ছবি। সেই সব দেখাতে দেখাতেই ক্লাবের অন্যতম কর্তা বললেন, ‘‘টাকা পাওয়ার পরে সাত বছর কেটে গিয়েছে। এত দিন পরে কি আর সেই টাকা খাওয়ার স্বাদ মুখে থাকে! টাকা কবেই শেষ।’’
লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে রাজ্যে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। যুযুধান দুই দলের আসন পার্থক্য এখন মাত্র চারটি। এই পরিস্থিতিতে ভোটের ফল পর্যালোচনা করতে বসে তৃণমূলের অন্দরে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, নানা সময়ে ক্লাবগুলিকে দেওয়া খয়রাতি।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই রাজ্যের ক্লাবগুলিকে ঢালাও অর্থ সাহায্য দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের বাছাই করা সেই সব ক্লাবগুলিকে টাকা দিতেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের প্রায় ২২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম দফার দু’লক্ষ এবং আরও তিন দফায় এক লক্ষ করে মোট পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিল কলকাতা পুর এলাকার প্রায় ১০৫০টি ক্লাবের প্রতিটি। মুখ্যমন্ত্রী সেই সময়ে বলেছিলেন, ‘‘ক্লাবের ছেলেরাই আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে।’’ লোকসভা ভোটের ফল বেরোতেই এখন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য মনে করছেন, ক্লাবগুলিকে টাকা দিয়ে কোনও লাভই হয়নি। টাকা পাওয়া ক্লাবগুলির অধিকাংশ কর্তাদের বক্তব্য, সরাসরি রাজনীতির নাম করে তো টাকা দেওয়া হয়নি! তা ছাড়া ২০১২ সালে টাকা পাওয়ার পর থেকে ২০১৯ সালের সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত রাজ্যে একটি বিধানসভা, একটি লোকসভা-সহ বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তৃণমূলের প্রতি যে আনুগত্য দেখানো উচিত ছিল, তা সেই সব ভোটে দেখানো হয়ে গিয়েছে।
জোড়াসাঁকোয় এমনই একটি পুরনো ক্লাব বৃন্দাবন মাতৃমন্দির। একশো বছরের এই ক্লাবের অন্যতম কর্তা শিবেন্দু মিশ্র জানালেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তাঁরা। মূলত দুর্গোৎসব কেন্দ্রিক সেই ক্লাব টাকা পাওয়ার পরে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও নেয়। শিবেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘ক্লাব তো কোনও রাজনৈতিক কার্যালয় নয়। সদস্যদের যে কেউ যে কোনও দলকে সমর্থন করতে পারেন। যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁরা হয়তো এক ভেবে টাকা দিয়েছিলেন। যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা আর এক ভেবে নিয়েছেন।’’ উত্তর কলকাতায় এমনই আরও একটি ক্লাব, সঙ্ঘশ্রী স্পোর্টিং। ক্লাবের অন্যতম সদস্য অভিজিৎ পাত্র বললেন, ‘‘সাত বছর আগে টাকা দিয়েছিল। এখনও তার সুফল মিলবে! সুফলের সময় তো ফুরিয়ে গিয়েছে।’’
দক্ষিণ কলকাতায় অর্থ-সাহায্য পাওয়া ক্লাবগুলির মধ্যে অন্যতম কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার এই ক্লাবের কর্তা সত্যজিৎ দে-র দাবি, ‘‘ভোটের ফল শুধু ক্লাব দিয়ে বিচার করা যায় না। ক্লাবগুলি তাদের মতো করে ঠিকই চেষ্টা করেছে।’’ বিরোধীরা অবশ্য তৃণমূলের হয়ে ক্লাবের ছেলেদের নামাতেই এই খয়রাতি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন প্রথম থেকে। এমনকি, টাকার অভাব দেখিয়ে উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ কাটছাঁট করে, সরকারি কর্মীদের ডিএ বাবদ প্রাপ্য বকেয়া না মিটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা তুঘলকি কায়দায় খরচ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল আগেই।
ক্লাবকে খয়রাতি করাটা কি তবে ভুল পদক্ষেপ? তৃণমূলের কেউই অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। ক্লাবগুলিকে টাকা বণ্টন করে সেই সময়ে প্রশংসা কুড়োনো তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাসকেও এ নিয়ে ফোন করলে উত্তর মেলেনি। তবে উত্তর কলকাতা যুব তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘টাকা নিয়ে কেউ দিঘা, কেউ পুরী ঘুরতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে একতলা ক্লাব তিনতলা করে বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন। শুধু পকেট ভরেই অনেক ক্লাব দিন কাটিয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের প্রতি সামান্য আনুগত্যও তাঁদের নেই।’’ দক্ষিণ কলকাতায় দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতির দায়িত্ব সামলানো আরও এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘রাতারাতি কাউন্সিলর, বিধায়কদের কাছে তখন নামের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। বহু ভুয়ো ক্লাব ঢুকে টাকা খেয়ে নিয়েছে। ২২৫ কোটি টাকা খরচ করে ক্লাবগুলি থেকে এ বার কত ভোট এসেছে সন্দেহ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy