Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Accident

গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে সোজা পুকুরে, ডুবে মৃত্যু

দুর্ঘটনার প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ক্রেনের সাহায্যে পুকুর থেকে গাড়িটি তোলা হয়।

আচম্বিতে: পুকুরে ডুবে গিয়েছে গাড়িটি। ক্রেনের সাহায্যে সেটি তুলে আনা হচ্ছে। মৃত অশোক রায়। সোমবার, বেহালার জয়শ্রী পার্কের কাছে। নিজস্ব চিত্র

আচম্বিতে: পুকুরে ডুবে গিয়েছে গাড়িটি। ক্রেনের সাহায্যে সেটি তুলে আনা হচ্ছে। মৃত অশোক রায়। সোমবার, বেহালার জয়শ্রী পার্কের কাছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২৭
Share: Save:

চালককে পাশে বসিয়ে নিজের গাড়ি চালানো শিখছিলেন কলকাতা পুরসভার এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। সোমবার সকালে, বেহালার জয়শ্রী পার্কের কাছে। আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে একটি বড় পুকুরে পড়ে গিয়ে গাড়িটি ডুবে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুরে নেমে দু’জনকে উদ্ধার করে এলাকার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে ওই অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ জানায়, ওই পুকুরের লাগোয়া এলাকায় বাড়ি কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অশোক রায়ের (৬৪)। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ অশোকবাবু পাশের বাড়ির বাসিন্দা সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে ডেকে পাঠান। অশোকবাবু যখন গাড়ি নিয়ে বেরোতেন, সুভাষই তাঁর গাড়ি চালাতেন বলে জানিয়েছেন মৃতের ভাগ্নে সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। সুভাষের ভাই শুভদীপ বলেন, ‘‘দাদা পার্ট টাইম ড্রাইভার। অশোকবাবুর গাড়ি দাদাই চালাতেন। ওঁকে অফিসে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে বাজার হাট সবই করেন। এখন দাদা একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। এ দিন সকালে দাদা অফিস যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে অশোকবাবু দাদাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। উনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দাদা পাশে বসেছিলেন।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সুভাষ তাঁকে গাড়ি চালাতে আপত্তি করলেও অশোকবাবু কথা কানে নেননি। তিনি এক সময়ে গাড়ি চালাতেন বলে সুভাষকে জানিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, রাজশ্রী পার্ক থেকে পদ্মপুকুরের দিকে ঢুকে ডান দিকে বাঁক নিতে গিয়ে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। রাস্তার বাঁ দিকে ছোট পাঁচিলে ধাক্কা মারার পরে গাড়িটি একটি গাছেও ধাক্কা মারে। এর পরে একেবারে পুকুরে নেমে যায়।

স্থানীয়েরা ওই ঘটনা দেখে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। তাঁরা পুকুরে নেমে গাড়ি থেকে অশোকবাবু ও সুভাষবাবুকে বার করে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে অশোকবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে সুভাষবাবুকে ওই নার্সিংহোম থেকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

অশোকবাবুর দুই ছেলে। বড় ছেলে অরিন্দম রায় বেঙ্গালুরুতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ছোট ছেলে অভিষেক পোশাক ডিজ়াইনার। এ দিন বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে অরিন্দম বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে কলকাতা এসে পৌঁছন। দুঘর্টনা প্রসঙ্গে মৃতের ভাগ্নে সৌরভ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘এর আগেও একই ভাবে পদ্মপুকুরে তিন বার গাড়ি ডুবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার পাশে পুকুর লাগোয়া যে উচ্চতায় পাঁচিল রয়েছে তা ভীষণ নিচু। ওই সীমানা প্রাচীর আর একটু উঁচু থাকলে ওই দুঘর্টনা হয়তো বা এড়ানো যেত।’’

একই অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, স্থানীয়েরা গাড়ি চালানো শিখতে এই পদ্মপুকুরের চারপাশের রাস্তাকে বেছে নেন। কিন্তু পুরসভার তরফে পুকুরের চারপাশ ভাল ভাবে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরার ব্যবস্থা করলে এই ধরনের দুঘর্টনা এড়ানো যায়। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘ওই পুকুরটির চারপাশ যাতে ভাল ভাবে উঁচু করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

এ দিন দুর্ঘটনার প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ক্রেনের সাহায্যে পুকুর থেকে গাড়িটি তোলা হয়। বেহালা থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Driving Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE