তৃণমূলের ভরসা রাজন্যায়, রাজন্যার নজর সংগঠনে। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
অনেক কিছুর মতো রাজনীতিতেও ‘সময়’ ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোহা গরম থাকতে থাকতে, ঠিক সময়ে তাতে আঘাত করতে হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে যখন সমাজ থেকে রাজনীতি পর্যন্ত আন্দোলিত, তখন সেই ‘গরম লোহা’য় আঘাত করতে চাইছে তৃণমূল। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের ভিত তৈরি করতে, এমন একটা সময় নষ্ট করতে চাইছে না শাসকদল। সেই পরিকল্পনাতেই যাদবপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নতুন ইউনিটের সভাপতি করা হয়েছে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের ‘চমক’ রাজন্যা হালদারকে। শুক্রবার দায়িত্ব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোনারপুরের তরুণী পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনে কী কী আশু সাংগঠনিক কাজ তিনি এবং তাঁরা করবেন।
শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজন্যা বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ, মৃত পড়ুয়ার পরিবার যাতে বিচার পায় তা নিশ্চিত করা। তার জন্য যা যা করার, আমরা তা-ই করব।’’ সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসের ভিতরে কী কী সাংগঠনিক কাজ তাঁরা করতে চলেছেন কয়েক দিনে, সে ব্যাপারেও খানিক আভাস দিলেন রাজন্যা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দু’একটা দিন দেখব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সিসিটিভি না লাগান, তা হলে আমরাই তা লাগানোর বন্দোবস্ত করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন নেই। সেটাও যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ না বসান, আমরা বসিয়ে দেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচালয় কার্যত নরক হয়ে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি পরিষ্কার করানোর ব্যবস্থা না করেন, সেটাও বাইরে থেকে লোক নিয়ে গিয়ে আমরা করিয়ে দেব।’’
রাজন্যা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তরের পর এখন অন্যত্র পিএইচডি করছেন। একই সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড পড়ছেন। ভালই জানেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের সাংগঠনিক জমি পোক্ত তো নয়ই, বরং অতি দুর্বল। রাজ্যের প্রায় সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও ‘পাঁচতারা’ যাদবপুরে সে ভাবে কোনও কালেই জমি তৈরি করতে পারেনি পারেনি তারা। চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাফল্য আসেনি। যাদবপুর আবর্তিত হয়েছে বাম-অতিবাম কক্ষপথে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে যাদবপুরকেন্দ্রিক একাধিক ঘটনা শাসকদলকে কোণঠাসা হয়েই হজম করতে হয়েছে। ২০১৪ সালে ‘হোক কলরব’ তাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল বলেও মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে ক্ষোভের জায়গাটা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত ধরতে চাইছে টিএমসিপি। তা রাজন্যার কথাতেও স্পষ্ট। হস্টেলের তিন তলা থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু, তা নিয়ে তৈরি হওয়া গণক্ষোভ সামগ্রিক ভাবে বাম ও অতিবামেদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলেই মনে করছে তৃণমূল। মমতা নিজেও গত ১৪ অগস্ট বেহালার সভা থেকে বলেছিলেন, ‘‘যাদবপুরের ছেলেটাকে মেরেছে মার্কসবাদীরা। ওখানে কিছু আগমার্কা সিপিএম রয়েছে।’’ শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজন্যা বলেন, ‘‘বামপন্থীদের ঔদ্ধত্য এখনও যায়নি। গত কাল তিন জন গ্রেফতার হওয়ার পরেও, ওদের লোকেরা আমাদের দিকে অশ্লীল ভাবে মধ্যমা প্রদর্শন করেছে। আমরা এই ঔদ্ধত্য, এই কুৎসিত সংস্কৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে যাদবপুরে টিএমসিপিকে অক্সিজেন দেওয়ার কাজটা শুরু করেছেন স্বয়ং মমতাই। রাজন্যাও বলছেন, ‘‘দিদি যে ভাবে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটাই আমাদের কাছে বড় শক্তি।’’ যাদবপুরকে শাসকদলের যাঁরা কাছ থেকে বা ভিতর থেকে চেনেন, তাঁরা এই পরিস্থিতিটা সুবর্ণসুযোগ হিসেবে দেখলেও, কাজটা যে সহজ নয় তা অনেকেরই মত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘ভেন্ডিং মেশিন বসিয়ে দেওয়া বা শৌচালয় পরিষ্কার করিয়ে তাৎক্ষণিক কাজ হতে পারে। সংগঠন নজরেও আসতে পারে। কিন্তু আসল বিষয়, ভিতরের সংগঠনকে দাঁড় করানো। আশা করব, এই পরিস্থিতিতে রাজন্যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে তৃণমূলের রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।’’ রাজন্যাও জানেন, লোহা এখন গরম আছে। ঠিক মতো গড়েপিটে নেওয়ার এমন সুযোগ অতীতের ইউনিট সভাপতিরা পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy