যাদবপুরের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় এবং হস্টেল সুপার। —ফাইল চিত্র ।
হস্টেলে সমস্যা হচ্ছে বলে এক আবাসিকের থেকে ফোন পেয়ে হস্টেলের সুপারকে ফোন করেছিলেন। কী সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে এসে জানাতে বলেছিলেন তাঁকে। কিন্তু ছাত্রমৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার আগে পর্যন্ত না কি হস্টেল সুপার তাঁকে কিছু জানাননি। এমনটাই দাবি করেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়। রজতের দাবি, মৃত ছাত্রকে হস্টেলের নীচে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর হস্টেল সুপার তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, রাত ১১টা নাগাদ তিনি হস্টেলে ঘুরে এসেছিলেন। এক আবাসিককে ফোন করেছিলেন। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে, এমন আঁচ নাকি তিনি পাননি। পরিস্থিতি শান্ত ছিল বলেও নাকি রজতকে জানিয়েছিলেন হস্টেল সুপার। এমনটা জানিয়েছেন ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত।
রজতের কথায়, ‘‘ঘটনার দিন রাত ১০টা ৫ মিনিটে এক পড়ুয়া আমায় ফোন করে। সে জানায়, এক ছাত্রের সমস্যা হচ্ছে। আমি জানতে চাই কী সমস্যা? ওই পড়ুয়া তখন বলে, তার ‘পলিটিসাইজ়েশন’ হচ্ছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে বলার পর ওই ছাত্র বলে, এক পড়ুয়াকে ক্যাম্পাসে বলা হয়েছে হস্টেলে না থাকতে। কারণ, সেখানে থাকলে দোতলা, তিন তলা থেকে ঝাঁপাতে হয়।’’ এর পরেই ওই পড়ুয়াকে বিষয়টি হস্টেলের সুপার তপনকুমার জানাকে জানাতে বলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। কারণ, সুপার ক্যাম্পাসেই থাকেন। সেই সময় নৈশভোজ সারছিলেন ডিন অফ স্টুডেন্টস। তিনি বলেন, ‘‘রাত ১০টা ৮ মিনিটে খেতে খেতেই সুপারকে ফোন করি। যে পড়ুয়া ফোন করেছিল তার নাম করে সুপারকে জিজ্ঞাসা করি চেনেন কি না। উনি চেনেন বলায় ওঁকে বলি একটা সমস্যা হয়েছে এ-২ ব্লকে। আপনি দেখুন। আমায় রিপোর্ট দেবেন।’’
তবে এর পর নাকি কোনও সমস্যার কথা জানাননি হস্টেল সুপার। তাঁর কাছে আবার ফোন আসে রাত ১২টা নাগাদ। ফোন করেছিলেন হস্টেল সুপারই। জানিয়েছিলেন, মৃত ছাত্রের হস্টেলের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কথা। রজত বলেন, ‘‘আমার কাছে পরবর্তী ফোন আসে ১২টা নাগাদ। এর মাঝে আমার কাছে কোনও ফোন আসেনি, মিস্ড কলও হয়নি। হস্টেল সুপার ফোন করে বলেন, এক জন ছেলে হস্টেলের নীচে পড়ে রয়েছে। মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। আমি ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। আমি নিজেও রওনা দিই।’’
রজত জানিয়েছেন, দেখা হওয়ার পর হস্টেলে কোনও গোলমাল হয়েছে বলে হস্টেল সুপার তাঁকে জানাননি। তাঁর কথায়, ‘‘হস্টেল সুপারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর উনি রিপোর্ট দেন যে, উনি হস্টেলের এক জনকে ফোন করে জানতে পেরেছিলেন, হস্টেলে জিবি চলছে। আর কোনও সমস্যা নেই। উনিও কোনও সমস্যার খবর পাননি বলেও আমাকে জানান। ১১টা নাগাদ উনি হস্টেলে গিয়ে ঘুরে এসেছেন বলেও আমাকে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তখন কোনও ঝামেলা হয়নি। উনি বলেন, ওঁকেও কেউ ফোন করেননি। মিস্ড কলও ছিল না।’’
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকেই সন্দেহের তালিকায় থাকা এক বর্তমান এবং দুই প্রাক্তনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। রাতে তাঁদেরই গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ নাসিম আখতারকে। তিনি রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা নাসিম। হিমাংশু কর্মকার নামে আরও এক প্রাক্তনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে। এ ছাড়া সত্যব্রত রায় নামে চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র। তাঁর বাড়ি নদিয়ার হরিণঘাটায়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই সত্যব্রতই ঘটনার দিন অর্থাৎ, বুধবার রাতে ডিন অফ স্টুডেন্টসকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, হস্টেলে ‘পলিটিসাইজ়েশন’ হচ্ছে। ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছিলেন, হস্টেল থেকে এক ছাত্রকে ঝাঁপ দিতে বলা হচ্ছে। তাঁকেও টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে আরও খবর, হস্টেলে নবাগত প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কী কী ভাবে নির্যাতন চালাতেন হস্টেলের সিনিয়রদের একটা অংশ। ওই ধরনের নির্যাতন মৃত ছাত্রের উপরেও হয়েছিল কি না, এবং ওই নির্যাতনে আরও কেউ জড়িত কি না তা-ও দেখছেন তদন্তকারীরা।
যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং প্রাক্তনী মিলিয়ে মোট ১২ জন পুলিশের জালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy