—ফাইল চিত্র।
র্যাগিংয়ের কারণেই কি মৃত্যু হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের? এই প্রশ্নের কিনারা করতে তথ্যপ্রমাণ হাতে পেল কলকাতা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দার কোণ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি নীল রঙের হাফপ্যান্ট এবং গেঞ্জি। ওই বারান্দা লাগোয়া ৬৮ নম্বর ঘরেই থাকতেন ‘নির্যাতিত’ ছাত্র। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই পোশাকগুলি মৃত ছাত্রের বলে দাবি করেছেন এক পড়ুয়া। অর্থনীতি বিভাগের ওই পড়ুয়ার এই বয়ান যাচাই করে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ওই বয়ান সত্যি হলে তা র্যাগিংয়ের অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ ‘পারিপার্শ্বিক’ তথ্যপ্রমাণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, হস্টেলের এ ১ এবং এ ২ ব্লকের মধ্যে আরও একটি গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে রক্তের দাগ রয়েছে।
গত ৯ অগস্ট রাতে হস্টেলের বারান্দা থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নীচে পড়ে যান বলে দাবি। পরের দিন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ, হস্টেলের নীচ থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছাত্রকে। র্যাগিং করা হয়েছে এবং নদিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রকে বিবস্ত্র করানো হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু বয়ানে মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এমন দাবিও করা হয়েছে যে, ঘটনার আগে বার বার বাথরুমে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্র। তাই শুধু গামছা পরেছিলেন তিনি। বিবস্ত্র অবস্থায় ছাত্রকে উদ্ধারের পরই র্যাগিং-যোগ জোরালো হয়। হস্টেলের তিন তলার ঘরে থাকতেন মৃত ছাত্র, সেই তলার বারান্দা থেকেই পাওয়া গিয়েছে হাফপ্যান্ট এবং গেঞ্জি। ওই পোশাক মৃত ছাত্রের বলে দাবি করেছেন এক পড়ুয়া। বারান্দায় কেন পড়েছিল ছাত্রের পোশাক? তা হলে কি বিবস্ত্র করানো হয়েছিল ওই ছাত্রকে? ওই ছাত্র কি ‘মানসিক চাপে’ নিজেই বিবস্ত্র হয়েছিলেন? যদি ছাত্র বাথরুম যাওয়ার জন্য পোশাক খোলেন, তা হলে তা সেখানেই (বাথরুম) থাকার কথা। বারান্দার এক কোণ থেকে কেন পাওয়া গেল পোশাক? যদি পোশাক ভিজে যায়, তা হলে ঘর বা বাথরুমে থাকত। কিন্তু তা বারান্দায় পড়ে থাকবে কেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতেই এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, এই প্রশ্নগুলির উত্তর মিললেই ছবিটা অনেকটা স্পষ্ট হবে। র্যাগিং হয়েছিল কি না, নির্যাতন হলে তা কী ভাবে হয়েছিল, সে ব্যাপারেও দিশা মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। যে হেতু হস্টেলে সিসিটিভি ছিল না, তাই বয়ান এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই অর্থনীতির পড়ুয়ার ওই বয়ানের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মৃত ছাত্রের তিনটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মেন হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকতে শুরু করেছিলেন ‘নির্যাতিত’ ছাত্র। ওই ঘরে ধৃত ছাত্র মনোতোষের ‘গেস্ট’ হিসাবে থাকতেন তিনি। মৃত ছাত্রের ব্যাগেও জামাকাপড় রয়েছে। তবে তা গোছানো অবস্থায় উদ্ধার হয়। তা হলে কী ভাবে বারান্দার এক কোণে ওই পোশাকগুলি পাওয়া গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পোশাকগুলি আদৌ মৃত ছাত্রের কি না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চান তদন্তকারীরা।
র্যাগিংয়ের কারণে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথম থেকেই সরব তাঁর পরিবার। আলিপুর আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীও সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল বলেছিলেন, ‘‘একটা অত্যাচারের গল্প পাচ্ছি।’’ এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর যাদবপুরের পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীদের একাংশ হস্টেলের ‘বীভৎসতা’ মুখ খুলেছেন। ফলে পোশাক উদ্ধার এবং ওই পোশাক মৃত পড়ুয়ার কি না, তা যাচাই করা এখন ‘বড় পরীক্ষা’ তদন্তকারীদের।
অন্য দিকে, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সে দিনের ঘটনায় আরও কয়েক জনের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তাঁদের নজরে রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy