—প্রতীকী ছবি।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার মধ্যে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ঘিরে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে বিতর্ক। কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও হয়েছে। বুধবার ঠিক কী হয়েছিল থানার ভিতর, তা নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। পুলিশের দাবি, থানার ভিতরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অশোককুমার সিংহ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য দিকে, মৃতের পরিবার দাবি করেছে, থানার ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ, অশোককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিও জানিয়েছে পরিবার। পুলিশ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
লালবাজার সূত্রে খবর, শ্যামপুকুর থানায় একটি মোবাইল চুরির অভিযোগের তদন্তে নেমে উত্তর ডিভিশনের মনিটরিং সেল জানতে পারে, সেই ফোনটি ব্যবহার করছেন অশোক। বুধবার বিকেল ৫টা ৫ নাগাদ অশোককে ফোন করে তদন্তকারীরা জানতে চান, ফোনটি তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন। অশোক জানান, তিনি ২০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তখন মনিটরিং সেলের তরফে স্থানীয় থানায় ফোন জমা দিতে বলা হয়। এর পরে অশোক এক বিজেপি নেতাকে পুরো ঘটনা জানান। ওই নেতা তাঁকে বলেন, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় তাঁর পরিচিত এক অফিসার আছেন। তিনি যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেই মতো অশোক আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় যান। পুলিশের দাবি, থানার সিসি ফুটেজে অশোককে ডিউটি অফিসারের ঘরেও ঢুকতে দেখা গিয়েছে। পরে সেই ঘর থেকেই অশোককে অসুস্থ অবস্থায় বার করে পুলিশের গাড়িতে করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেল ৫টা ৪৩ থেকে সন্ধ্যায় ৬টা ১০ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু তার মধ্যে যাবতীয় রহস্য তৈরি হয়েছে মাত্র এক মিনিটকে কেন্দ্র করে। মেরেকেটে ওই এক মিনিটই ডিউটি অফিসারের ঘরে অশোক ছিলেন! থানার ভিতর অশোক কখন কী করছেন, তা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা গেলেও, ওই এক মিনিট ঠিক কী হয়েছে, তা জানা যাচ্ছে না। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, তার কারণ, ডিউটি অফিসারের ঘরে সিসি ক্যামেরা নেই!
তবে বিকেল ৫টা ৪৩ থেকে সন্ধ্যায় ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত থানায় কী কী হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এনেছে লালবাজার সূত্রে। তা হল—
বিকেল ৫টা ৪৩— অশোক থানায় ঢুকছেন।
বিকেল ৫টা ৪৫— অশোক থানা থেকে বার হন।
বিকেল ৫টা ৪৬— আবার থানায় ঢোকেন অশোক। আইও রুমের (তদন্তকারী অফিসারের ঘর) দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিন্তু জায়গাটি সিসিটিভির আওতার বাইরে।
বিকেল ৫টা ৫৪— অশোক থানার ভিতরে বসেই বিজেপি নেতা মদনলাল গুপ্তকে ফোন করেন। ১৩২ সেকেন্ড কথা হয় দু’জনের মধ্যে। অশোক ফোনে মদনকে জানান, থানায় কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তিনি বুঝতে পারছেন না। যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি থানায় নেই!
সন্ধ্যা ৬টা— মদন ওই পুলিশ অফিসারকে ফোন করেন। কিন্তু ৪৫ সেকেন্ড ‘হ্যালো হ্যালো’ করেই কেটে যায়। নেটওয়ার্ক সমস্যা।
সন্ধ্যা ৬টা ০২— মদন আবার অফিসারকে ফোন করে গোটা বিষয়টি বলেন।
সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড— আইও রুমের দিকে যেতে সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, ওই অফিসার যান অশোকের সঙ্গে দেখা করতে।
সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিট— আইও রুমে ঢুকছেন অশোক। (এটি অবশ্য পুলিশের অনুমান)
সন্ধ্যা ৬টা ৪— আইও রুম থেকে বেরোতে দেখা যায় অফিসারকে। তিনি অশোকের ভাইঝি ঋতু জায়সওয়ালের স্বামী শরৎ জায়সওয়াল ও এক মহিলাকে থানায় ঢুকতে দেখেন। পরে অফিসার জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা নিজেদের পরিচয় জানান। অফিসারই তাঁদের জানান, অশোক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে।
সন্ধ্যা ৬টা ১০— অশোককে থানা থেকে বার করে হাসপাতালের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
অশোকের পরিবার দাবি করেছে, মারের চোটে অশোকের মাথা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। গ্যাঁজলাও বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে। শরৎ অভিযোগ করেছেন, থানায় গিয়ে তিনি দেখেন, অশোক অচৈতন্য অবস্থায় থানার মেঝেতে পড়ে আছেন। শরতের কথায়, ‘‘কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় পুলিশ বলে, অশোকের মৃগী আছে।’’ পাল্টা পুলিশ দাবি করেছে, অশোক অসুস্থ হয়ে পড়ার তাঁর পরিবারের লোকেরাই জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মৃগী আছে। এর জন্য জুতোও শোঁকানোর চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় আইও রুমে তিন পুলিশ-সহ চার জন ছিলেন। এ ছাড়াও ওই সময় থানায় থাকা ১৫ জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক চাওয়ালা এবং থানায় জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করতে আসা এক ব্যক্তিও রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy