লকডাউনের জেরে ছেদ পড়েছে পঞ্জিকা কেনার ঐতিহ্যে। নিজস্ব চিত্র
পাতলা কাগজে ছোট হরফে ছাপা, গোলাপি, নীলচে বা খয়েরি মলাটের বইগুলির সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক বহু পুরনো। বৈশাখ শুরুর আগেই চৈত্রের শেষে অধিকাংশ বাঙালি ঘরে জায়গা করে নেয় সেই বই, অর্থাৎ পঞ্জিকা।
বার-তিথি-নক্ষত্র-যোগ-করণ— এই পাঁচটি বিষয়ের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয় পঞ্জিকা। শুভক্ষণ, লগ্ন, রাশিফল এমনকি একাদশী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা জানতেও বাঙালির ভরসা এই বই। কেউ আবার তা থেকে নতুন বছরের উৎসব-পার্বণের খোঁজ নেন। কিন্তু লকডাউন চলতে থাকায় অনেক পঞ্জিকাই এ বার চৈত্রের শেষে বাজারে আসেনি। তাই প্রশ্ন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দের সূচনায় কি ক্রেতারা তাঁদের পছন্দের পঞ্জিকা হাতে পাবেন?
যদিও পঞ্জিকা সংস্থাগুলির আশ্বাস, ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়বে না। কোনও পঞ্জিকা প্রকাশনা সংস্থা আবার পরিকল্পনা করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইচ্ছুক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেবেন বৈশাখ মাসের পিডিএফ সংস্করণ। কেউ আবার রয়েছেন লকডাউন ওঠার অপেক্ষায়।
প্রতি বারই নতুন বাংলা বছর শুরুর বেশ কিছু দিন আগে বাজারে চলে আসে বিভিন্ন পঞ্জিকা। কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া কিংবা প্রকাশক সংস্থার থেকে সরাসরি তা কিনে দোকানে নিয়ে আসেন বিভিন্ন এলাকার বই, খাতার ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত, গুপ্ত প্রেস, পি এম বাক্চি-সহ বিভিন্ন পঞ্জিকার মধ্যে ব্যক্তিগত পছন্দটি পৌঁছে যায় অন্দরমহলে।
এ বার ছেদ পড়েছে সেই ব্যবস্থায়। যেমন, গত ২৩ মার্চ গুপ্ত প্রেসের পঞ্জিকা প্রকাশের কথা থাকলেও দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে বাংলা নববর্ষের আগে বাঙালির ঘরে গুপ্ত প্রেস ফুলপঞ্জিকা এবং গুপ্ত প্রেস ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা পৌঁছনোর আশাও নেই। সংস্থার মার্কেটিং ম্যানেজার সুমনা সরকার বলেন, ‘‘চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এ বারেও সরস্বতী পুজোর দিন পঞ্জিকা ছাপার জন্য বিশেষ পুজো হয়েছিল। ছাপাও চলছিল। কিন্তু জনতা কার্ফুর পরের দিনই লকডাউন জারি হওয়ায় বাজারে ছাড়া সম্ভব হয়নি।’’ তিনি জানান, লকডাউন উঠে গেলে প্রকাশ করা হবে তাঁদের দু’টি পঞ্জিকা।
আবার ১২৯৭ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে প্রকাশিত বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ছাপা পুরো শেষ হলেও কর্মীর অভাবে তা বাঁধাই করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন প্রকাশক সুপর্ণ লাহিড়ী। তিনি বলেন, ‘‘সারা বছরে ২-৩ বার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা পুনর্মুদ্রণ হয়। প্রথম পর্যায়ে ৩৫-৪০ হাজার পঞ্জিকা ছাপা হয়ে গিয়েছে। কিছু গ্রাহককে বৈশাখ মাসের তথ্য পিডিএফ করে পাঠিয়েও দিয়েছি।’’ তিনি জানান, ১৪ এপ্রিল লকডাউন উঠে গেলে ৫-৬ দিনের মধ্যেই বাজারে ওই পঞ্জিকা মিলবে। তার আগে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা যোগাযোগ করলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের বৈশাখ মাসের তথ্য পিডিএফ করে পাঠানো হবে।
প্রতি বছর বইমেলায় প্রকাশ পেলেও এ বার খানিক দেরিই হয়েছে। তবে মার্চের প্রথমে বাজারে চলে আসায় লকডাউনের গেরোয় পড়তে হয়নি ১৩২ বছরের পুরনো পি এম বাক্চি ডাইরেক্টরি পঞ্জিকাকে। ওই পঞ্জিকা প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক পীযূষ বাক্চি বলেন, ‘‘বাঙালি যত দিন থাকবে, তত দিন এই পঞ্জিকাও থাকবে। ২১ মার্চের মধ্যে আমাদের ৭০ শতাংশ বই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy