Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

লকডাউনে বন্ধ হোটেল, তবু থামেনি হাতা-খুন্তি

গত আট দিন ধরে ভোরে উঠে ক্লাব প্রাঙ্গণে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজেশ। তার পরে মাস্ক-গ্লাভস পরে খুন্তি হাতে সোজা উনুনে চাপানো গরম কড়াইয়ের সামনে।

রান্নায় ব্যস্ত রাজেশ শাহ (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

রান্নায় ব্যস্ত রাজেশ শাহ (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৯
Share: Save:

হোটেল বন্ধ। তাই কাজ নেই। তবুও ঘরে বসে নেই যুবকটি। প্রতিদিন অন্তত পাঁচশো থেকে ছ’শো জনের রান্না করছেন। তা-ও বিনা বেতনে। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে জড়িত লোকজনের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় ক্লাব। আর সেখানে রান্না করে নিজের সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন পেশায় রাস্তার ভাতের হোটেলের রাঁধুনি সেই যুবক।

লকডাউনের কারণে বিহারে নিজের দেশে যেতে পারেননি কাঁকুড়গাছির রাজেশ শাহ। কাঁকুড়গাছিরই একটি হোটেলে তিনি রাঁধুনির কাজ করেন। লকডাউনের পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, ভবঘুরে এমনকি রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। কিন্তু শহরের রাস্তার সব ভাত-রুটির হোটেল বন্ধ থাকায় মিলছিল না রাঁধুনি। শেষ পর্যন্ত খোঁজ মেলে রাজেশের। খাওয়া-দাওয়ার আয়োজকেরা জানিয়েছেন, রাজেশের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে রাজি হয়ে যায়।

গত আট দিন ধরে ভোরে উঠে ক্লাব প্রাঙ্গণে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজেশ। তার পরে মাস্ক-গ্লাভস পরে খুন্তি হাতে সোজা উনুনে চাপানো গরম কড়াইয়ের সামনে। রাত পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন ধরনের রান্না। তবে আনাজ কাটা, মশলা বাটার মতো কাজ করছেন ক্লাবের সদস্যেরা।

ক্লাবের সদস্য রণজিৎ দে-র কথায়, ‘‘২৩ মার্চ রাজেশের হোটেল বন্ধ হয়ে যায় আমার ২৭ তারিখ থেকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু রাঁধুনি পাচ্ছিলাম না। শহরে যারা রাঁধুনির কাজ করেন, তাঁরা চলে গিয়েছেন। কোনও ভাবে রাজেশের খোঁজ পাই। এই কাজের জন্য এক বারেই রাজি হয়ে যান ওই যুবক।’’

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাবের সদস্যেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে চাল, ডাল, আলু, আনাজ, ডিম জোগাড় করছেন। কী কী পদ রান্না করা হবে, জোগাড় দেখে তা ঠিক করছেন রাজেশ। কতটা আনাজ কাটা হবে, মশার ভাগ কী হবে— সবই দেখিয়ে দিচ্ছেন রাজেশ।

তাঁর কথায়, ‘‘আনাজ কাটাকাটিতে একটু ভুলচুক হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এই সময়ে ও সব দেখলে চলে না। রান্নার স্বাদ যাতে ভাল হয় আমি সে দিকে গুরত্ব দিচ্ছি। অনেকেরই এখন খাওয়া জুটছে না। খাবারটা ভাল হওয়া বেশি জরুরি।’’

ক্লাবের লোকজন জানান, গত আট দিন ধরে ভাত-ডাল, লাউ-চিংড়ি, ডিমের ঝোল, আলু সয়াবিনে ঝোল-সহ বিভিন্ন পদ তাঁরা পরিবেশন করেছেন। তাঁরা জানান, কোনও রাজনৈতিক দল, নেতা-মন্ত্রী কারও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে না। এলাকার ব্যবসায়ী, সাধারণ লোকজনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা চালু থাকবে বলে ক্লাবের সদস্যেরা জানিয়েছেন।

অবশ্য রাজেশ ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন না বিনা পারিশ্রমিকে রান্না করে তিনি মহৎ কোনও কাজ করছেন। শনিবার সকালে বরং নরম স্বরেই তাঁর উত্তর, ‘‘আমি ধন্য মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে। হোটেল বন্ধ। টাকা-পয়সায় টান পড়েছে। আমি আর আমার পরিবারের লোকজনও তো এখানেই খাওয়া-দাওয়া করছি। মানুষের কাজ করতে এসে আমাদেরও তো খাওয়া জুটছে। আর কী চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Cook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy