মনোনিবেশ: বাড়িতে বসেই হাতেকলমে নতুন কিছু করার চেষ্টায় অটিস্টিকেরা। নিজস্ব চিত্র
কেউ দেওয়ালে মাথা ঠুকছে। কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে যে কোনও মূল্যে। কেউ আবার নখ দিয়ে নিজের সারা শরীরে ক্ষত তৈরি করছে! করোনা-আতঙ্কে হঠাৎই স্কুল বা সব ধরনের থেরাপি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের বাড়িতে রাখাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অভিভাবকদের একটি বড় অংশ। তাঁরা বাড়িতেই নানা ভাবে চেষ্টা করছেন সন্তানদের ব্যস্ত রাখতে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই চেষ্টা যথার্থ হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষ অভিভাবকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে শহরের বেশ কিছু বিশেষ স্কুল ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কেউ অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাড়িতে থাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের। এ জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছে তারা। বাড়িতে বসা অভিভাবকদের অনলাইনেই আবার কেউ শেখাচ্ছেন সেন্সারি থেরাপি বা অকুপেশনাল থেরাপির পদ্ধতি। কোনও সংস্থা আবার প্রতিদিন অভিনব কিছু করার ভাবনা জুগিয়ে পাশে থাকছে অভিভাবকদের।
প্রায় ১৯ বছর ধরে অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করছে বেলেঘাটার প্রদীপ সেন্টার ফর অটিজ়ম ম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে সেখান থেকে উপকৃত হন প্রায় ২২০ জন। সংস্থার কর্তৃপক্ষ জানান, সেখানকার সকলেই প্রতিদিন স্কুলে আসতে অভ্যস্ত। হঠাৎ করেই রুটিন বদলে যাওয়ায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা বুঝেই বাড়ি থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। স্রেফ পড়ানোই নয়, নানা ধরনের হাতের কাজ, থেরাপিও অভিভাবকদের দিয়েই বাড়ি থেকে করাচ্ছেন। সংস্থার প্রোগ্রাম হেড তথা রিহ্যাবিলিটেশন সাইকোলজিস্ট অমৃতা পণ্ডা বলেন, “আমাদের প্রায় ৮০ জন শিক্ষাকর্মী অভিভাবকদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রেখে সবটা করছেন। শ্রেণিশিক্ষিকারা প্রতিটি পড়ুয়ার জন্য আলাদা করে অ্যাসাইনমেন্ট পাঠাচ্ছেন অভিভাবকদের কাছে। বাড়িতে বসে সেগুলি করানোর সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে অনলাইনে থাকছেন তাঁরা।’’ দিনের শেষে কাজ শেষ হলে তার ছবি বা ভিডিয়ো তুলে অভিভাবকদের পাঠাতে হচ্ছে ক্লাস টিচারদের কাছে। এর উপরে নম্বরও রাখা হচ্ছে বলে জানান অমৃতা।
অভিভাবক তাপসী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর ২৩ বছরের মেয়ে অটিস্টিক। তিনিও এখন বাড়িতেই। তাপসী বলেন, “অকুপেশনাল থেরাপি খুব দরকার হয় অটিস্টিকদের। স্কুলের থেরাপিস্টরা ভিডিয়ো ডেমো বানিয়ে পাঠাচ্ছেন, দারুণ লাগছে। এত দিন মেয়ে খুব একটা খুশি ছিল না। এখন বাড়িতেই স্কুলের কাজ পেয়ে যেন নিজের জগৎ ফিরে পেয়েছে।”
অটিজ়ম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত অভিভাবকদের রোজকার কাজের মধ্যেই নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করতে বলছেন। সংস্থার তরফে ইন্দ্রাণী বসু বলেন, ‘‘কোনও একটা দিন ঠিক করে ছাদে গিয়ে পিকনিক করা যেতে পারে। দিন ধরে নাচের ক্লাস বা গানের ক্লাসেরও পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা অভিভাবকদের।’’ একই সঙ্গে বাড়ি বসেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পাশে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশেষ শিক্ষকেরা। কেউ আগুন ছাড়াই রান্নার পদ্ধতি শেখাচ্ছেন, কেউ আবার হাতের কাজের পাশাপাশি ছবি আঁকা থেকে পড়াশোনার কাজও করাচ্ছেন। অনলাইনে চলছে ‘ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি’ও।
প্রদীপের প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ঊর্মিলা উকিল বলেন, “এই জরুরি পরিস্থিতিতে আমাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের জন্য আমরা বিশেষ ভাবে ভেবেছি। সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছেও সেই ভাবে কিছু ভাবার জন্যই আবেদন জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy