Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Presidency University

‘হকারকাকুদের’ পাশে প্রেসিডেন্সি

ছাত্র ইউনিয়নের তরফে ‘চুরমুরকাকু’ ও ‘চা-কাকু’র অ্যাকাউন্টে আপাতত কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবার পাঠানো হবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ০২:২৬
Share: Save:

সারা বছর ধরেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশে ঘোরেন ওঁরা। কেউ বিক্রি করেন চুরমুর, কেউ লাল চা, কেউ বাদাম, কেউ বা ঝালমুড়ি। প্রেসিডেন্সির অনেক পড়ুয়াই ওঁদের ডাকেন ‘বাদামকাকু’, ‘চুরমুরকাকু’ বা ‘চা-কাকু’ বলে। বছরভর বাদাম, চুরমুর কিনতে কিনতে এই কাকুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে পড়ুয়াদের অনেকেরই। লকডাউনের সময়ে যখন এই কাকুরা উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন ওই পড়ুয়ারা। তাঁদের কয়েক জন জানালেন, ছাত্র ইউনিয়নের তরফে ‘চুরমুরকাকু’ ও ‘চা-কাকু’র অ্যাকাউন্টে আপাতত কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবার পাঠানো হবে।

‘চুরমুরকাকু’, অর্থাৎ দিলীপ সাহার বাড়ি বিহারের জামুইয়ে। সেখান থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে যখন সব একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন বুঝলাম, প্রেসিডেন্সিও বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে পুরো কলেজ স্ট্রিটই। আমাদের রোজগারও আর থাকবে না। তখন দেশের বাড়ি চলে যেতে হবে। কিছু দিন পরে দেখলাম, ঠিক সেটাই হল। কী ভাবে সংসার চালাব, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না। তখন প্রেসিডেন্সির কয়েক জন পড়ুয়া আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর নিল। বলল, ওরা টাকা পাঠাবে।’’

দিন দুই আগে হাজার দুয়েক টাকা দিলীপের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। দিলীপ জানান, সত্যিই যে অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে, তা ভাবতে পারেননি তিনি। উপার্জন এখন পুরো বন্ধ। এই টাকা খুব কাজে লাগবে তাঁর।

‘চা-কাকু’, অর্থাৎ আনন্দ শীলের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে। ফোনে আনন্দ বললেন, ‘‘সারা বছর ক্যাম্পাস চত্বরে ঘুরে ঘুরে লাল চা বিক্রি করি। ওদের সঙ্গে কত রকম কথা হয়। আমাদের পরিবারের কথাও ওরা অনেকে জানে। কিন্তু এই দুর্দিনে যে ওরা এই ভাবে আমার ও আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, তা ভাবতেও পারিনি। ওদের পাঠানো কয়েক হাজার টাকা আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।’’

আনন্দ জানান, রেশন থেকে তাঁরা মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়েছেন সারা মাসের জন্য। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে মিলে পাঁচ জনের সংসার। এই ১০ কেজি চালে কি সারা মাস চলে? আনন্দ জানান, প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের পাঠানো টাকায় এই মাসের সংসার খরচ অনেকটাই সামলে যাবে।

‘চা-কাকু’, ‘চুরমুরকাকু’দের টাকা পাঠিয়ে বড় কিছু করেছেন বলে মনে করেন না প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি মিমোসা ঘড়াই বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে যখন সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, একে একে সকলে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, তখন আমাদের মনে হয়েছিল, এই ‘চা-কাকু’, ‘চুরমুরকাকু’দের চলবে কী করে? আর্থিক সাহায্য করার কথা ভেবেই ওঁদের অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়েছিলাম।’’

‘চা-কাকু’ ও ‘চুরমুর-কাকু’দের এখন একটাই প্রশ্ন, কবে লকডাউন উঠবে এবং ফের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? ফের কবে ফিরে যাবেন তাঁরা কলেজ স্ট্রিটে এবং প্রেসিডেন্সির দুর্দিনের বন্ধুদের লাল চা আর চুরমুর খাওয়াবেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency University West Bengal Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy