ছবি সংগৃহীত।
‘কেমন আছেন...?’
উত্তরের অপেক্ষা না করেই প্রশ্নকর্তা ও উত্তরদাতা হাসিমুখে একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন। খানিক কুশল বিনিময়ের পরে দু’কাপ কফি নিয়ে মুখোমুখি বসে শুরু হল খোশগল্প। তার পরে চলল অন্য আলোচনা।
চেনা এই ছবি এক জন মানুষের সঙ্গে অন্য জনের নিবিড় সম্পর্কটা যেমন প্রমাণ করে, তেমনই জনসংযোগের প্রকৃত অর্থটাও বহন করে। মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ছিল জাতীয় জনসংযোগ দিবস। করোনার আবহে এ বার জনসংযোগ রক্ষার ধরন যে খানিকটা বদলেছে, সে কথাই ঘুরেফিরে এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনের বর্তমান, প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কথায়। যাঁরা বলছেন, ‘‘বাজারে গিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে খোশগল্পেও জনসংযোগ গড়ে ওঠে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক ব্যবধান বিধির জেরে সেই খোশগল্পের দিন আজ আর নেই।’’
প্রশ্ন হল, লকডাউনে কি আদৌ পুরোমাত্রায় জনসংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব? তেমন ভাবে না-হলেও আপাত পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে একের সঙ্গে অপরের সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ বা সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করেন ‘পাবলিক রিলেশন্স সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র কলকাতা চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান সৌম্যজিৎ মহাপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১০ বছরে জনসংযোগের ধরনটাও কিছুটা বদলেছে। এখন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার চল শুরু হয়েছে। তাতেই পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। ফলে বলা যায়, প্রযুক্তির মাধ্যমেই করমর্দন হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: তালাবন্দি শহরে এলাকার অভুক্তদের পাশে ওঁরা
সৌম্যজিৎবাবুর মতো একাংশের মত, করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক ব্যবধান বিধি মেনে ঘর থেকে না বেরিয়ে জনসংযোগ বাড়ানো কিংবা বজায় রাখার মাধ্যম হল প্রযুক্তি। ফোনের দুই প্রান্তে থাকা দু’টি মানুষ একে অপরের কথা শুনতে পাচ্ছেন। কিন্তু অভিব্যক্তি কি বুঝতে পারছেন?
প্রযুক্তিতে ভরসা করা লোকজন অবশ্য অভিব্যক্তি বুঝতে ভিডিয়ো কলের পথ বাতলাচ্ছেন। যদিও বিষয়টি ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর’ মতো বলেই মনে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক অঞ্জন বেরা। তাঁর কথায়, ‘‘যন্ত্র একটা মাধ্যম। কিন্তু মুখোমুখি পরিচয়ের কোনও বিকল্প নেই।’’
আরও পড়ুন: ‘হকারকাকুদের’ পাশে প্রেসিডেন্সি
জানা যায়, ১৯০৩ সালে বস্টনে একটি প্রচারের অফিস খুলেছিলেন আইভি লি নামে এক মার্কিন নাগরিক। তাঁর মাধ্যমেই আমেরিকার দু’টি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনেছিলেন সাধারণ মানুষ এবং কর্মীরা। আইভি লি বলতেন, ‘‘অর্থ না থাকলে যেমন গরিব, তেমন তথ্য না থাকলেও মানুষ গরিব।’’ তবে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছনোর জন্য শুধু প্রেস বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েই পুরোমাত্রায় জনসংযোগ বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ‘পাবলিক রিলেশন্স সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র সর্বভারতীয় প্রাক্তন সভাপতি তথা পূর্ব রেলের প্রাক্তন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী।
সমীরবাবু জানান, কাজের পরে কিংবা ছুটির দিনে তাঁর মতো অনেকেই স্রেফ নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে বা পুরনো সম্পর্ক ধরে রাখতে বিভিন্ন জায়গায় বা সোর্সের কাছে যেতেন। এখনও কেউ কেউ যান। সেখানে চা, মুড়ি-তেলেভাজা সহযোগে মাছের দাম থেকে রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে জমে আড্ডা। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘ওই সময়ে কোনও কাজের কথা নয়। স্রেফ আড্ডাটাই একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করে। যার দ্বারা পরে নিজের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনটা ঠিক ভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়।’’
সময়ের সঙ্গে বদলেছে জনসংযোগের কায়দাও। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপণন। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিনোদন জগতের লোকজন তাঁদের নিজেদের প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে।
সমীরবাবুর কথায়, ‘‘জনসংযোগের একটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বা সুন্দর বোঝাপড়া তৈরি করা। যেটি না থাকলে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে।’’
তবে করোনার বিরুদ্ধে বোঝাপড়ায় এখন পৃথিবী সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছে বলেই মত অঞ্জনবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘বোধ হয় এই প্রথম একটি অভিন্ন ইতিবাচক লক্ষ্য পূরণে সব রাষ্ট্র, রাজ্য-সহ এত বেশি মানুষ একযোগে, একই সময়ে একই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। এটাই হল আসল জনসংযোগ।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy