সারিবদ্ধ: দাঁড় করানো রয়েছে গ্যারাজে সারাতে দিয়ে যাওয়া গাড়ি। বুধবার, মল্লিকবাজারে। নিজস্ব চিত্র
গ্যারাজ থেকে ভাড়া নেওয়া গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়ে পথ দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। জানা গিয়েছিল, গাড়িটি এক চিকিৎসকের। তিনি জানতেনই না যে, তাঁর সারাতে দেওয়া গাড়ি নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ। ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছিল, গ্যারাজে গাড়ি সারাতে দেওয়া কি আদৌ নিরাপদ? লকডাউনের শহরে সেই প্রশ্ন ফের নতুন করে উঠতে শুরু করেছে। জরুরি পরিষেবার স্টিকার লাগানো গাড়ির সংখ্যা রাস্তায় বাড়তে থাকায় পুলিশেরই একাংশের এখন আশঙ্কা, গ্যারাজে সারাতে দেওয়া গাড়িই মালিকের অজান্তে ভাড়া খাটছে না তো?
জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত না হয়েও ভুয়ো স্টিকার লাগিয়ে গাড়ি রাস্তায় নামার কিছু ঘটনা সামনে আসায় সতর্ক হয়েছে লালবাজার। চলতি সপ্তাহেই শহরের সমস্ত ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকার স্টিকার লাগানো থাকলেও সংশ্লিষ্ট গাড়ি থামিয়ে দেখতে হবে। গাড়ির নম্বর, কাগজপত্র পরখ করে প্রয়োজনে কথা বলতে হবে মালিকের সঙ্গেও। বেআইনি কিছু পেলে দ্রুত মামলা রুজু করতেও বলা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার ট্র্যাফিক গার্ডগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘গাড়ি ধরলেই অনেকে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন। চালকেরা দাবি করছেন, গাড়ির সমস্ত কিছু মালিক জানেন। তাঁরা স্রেফ চালান। কয়েক দিন আগে এমন একটি ভুয়ো স্টিকার লাগানো গাড়ি ধরে দেখা যায়, গাড়ি যে রাস্তায় নেমেছে মালিক তা জানেনই না!’’
লকডাউনের মধ্যেও কী ভাবে চলছে গ্যারাজের গাড়ির ব্যবহার? পুলিশ সূত্রের খবর, লকডাউনে হলুদ নম্বর প্লেটের গাড়ি দেখলেই বাড়তি তল্লাশি করা হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাই নজরে না-আসতে বেছে নেওয়া হচ্ছে গ্যারাজে সারাতে দেওয়া সাদা নম্বর প্লেটের গাড়ি। পুলিশে ধরলেও উতরে যেতে গাড়ি ভাড়ায় নেওয়া ব্যক্তিকে ওই গাড়িটির মালিকের নাম-ঠিকানাও শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকে ‘নিখোঁজ’ তিন জন বাড়িতে!
কয়েকটি সূত্র মারফত খোঁজ করে জানা গেল, শহরের বেশির ভাগ গ্যারাজই এখন বন্ধ। কিন্তু যে সমস্ত গ্যারাজের ভিতরে অনেকটা জায়গা রয়েছে, সেখানে গাড়ি সারাইয়ের কাজ চলছে। ওইসব গ্যারাজ থেকেই প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় এক দিনের জন্য মিলছে গাড়ি। তবে তার জন্য তাঁদের প্রশ্নের ঠিক জবাব দিতে হবে!
কড়েয়ার এমনই এক গ্যারাজে গিয়ে দেখা গেল, চার-পাঁচ জনের জটলা। কারও মাস্কের বালাই নেই। সেখানে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘কী চাই?’’ গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যাবে কি না, জানতে চাওয়ায় তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কে পাঠিয়েছে?’’ চেনা নাম বলার পরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘কী রকম গাড়ি লাগবে, তার উপরে ভাড়া। আড়াই-তিন হাজার টাকার কমে এখন কাজ করছি না।’’
মল্লিকবাজারের এক গ্যারাজ মালিক আবার বলছেন, ‘‘ভাড়া দেব না-ই বা কেন? লকডাউনে সব বন্ধ। মানুষকে তো খেতে হবে! যাঁরা গাড়ি নিচ্ছেন, জরুরি প্রয়োজনেই নিচ্ছেন। কেউ হয়তো গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারছিলেন না! পরিবার নিয়ে আটকে ছিলেন। কারও আবার টাকা দেওয়া হয়ে গেলেও শপিং মল থেকে কেনা জরুরি জিনিস বাড়ি নিয়ে যাওয়া আটকে ছিল। তবে চেনা লোকের মাধ্যমে না এলে আমরা গাড়ি দিই না।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘এই ভাবে গাড়ি নিয়ে যারা রাস্তায় বেরোচ্ছেন, তাঁদের প্রতিদিন ধরা হচ্ছে। সব ট্র্যাফিক গার্ডকে কড়া নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। গ্যারাজগুলিও দেখা হবে।’’
গাড়ি নিয়ে তবু দুশ্চিন্তা কাটছে না গিরিশ পার্কের বাসিন্দা তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ি সারাতে দিয়েছিলাম গত ১৫ মার্চ। গ্যারাজ মালিক বলেছিলেন, লকডাউন উঠলে গাড়ি পাব। কিছু কাজ বাকি আছে। এ বার কি তবে নিজের গাড়ির খোঁজে বেরোতে হবে?’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy