হুড়োহুড়ি: করোনা রুখতে নয়া নির্দেশিকা আসার পরে দূরত্ব-বিধির পরোয়া না করে মুদির দোকানে ভিড়। শনিবার, বৌবাজারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
আশঙ্কাই সত্যি হল! শহরে ফিরল এক বছর আগের সেই পাকাপাকি লকডাউন ঘোষণার পরের ছবি। আগামী পনেরো দিনের জন্য তো বটেই, অন্তত এক মাসের সংস্থান ঘরে তুলে রাখতে পথে নেমে এল প্রায় গোটা শহর। লম্বা লাইন পড়ল মদের দোকানে। অনেকেই তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার তাড়নায় বাদুড়ঝোলা হলেন গণ পরিবহণে। যার জেরে বহু ক্ষেত্রেই ভাঙল করোনা বিধিও। অভিযোগ উঠল অটো-ট্যাক্সির দেদার ভাড়া হাঁকারও।
এ দিন দুপুরে সরকারের কড়া বিধিনিষেধ ঘোষণার পরেই বাজার-দোকানে ভিড় হতে শুরু করে। কার্যত শিকেয় ওঠে দূরত্ব-বিধি। মাস্ক পরে থাকার কথাও ভোলেন অনেকে। মাইকিং করতে থাকা পুলিশকে কিছু বাজার কমিটি কার্যত ঘিরে ধরে বোঝাতে থাকে, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগের দিনে মানুষের চাহিদার কথা। মুচিবাজারে তেমনই একটি মুদির দোকানের বাইরে লম্বা ভিড় দেখিয়ে দোকানের মালিক সুনীল ঘোষ বললেন, “প্রতিদিন দোকান খুলব জেনেও কেউ নিশ্চিত হতে পারছেন না। আসলে গত বারের লকডাউন দেখে মানুষের এমন ভয় চেপে বসেছে, যে ফের বিধিনিষেধ জারি হওয়ার কথা শুনেই বেরিয়ে পড়েছেন। ক’দিন সে ভাবে বিক্রি হবে না, আজই মুনাফা ঘরে তুলতে নেমে পড়েছি।” সেখানেই লাইনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির মন্তব্য, “এই বিধিনিষেধ এক বার হলে সহজে বন্ধ হয় না দেখেছি। তাই যত ভিড়ই হোক, আজই এক মাসের জিনিস তুলব। করোনা হলে হবে!”
কাজ সেরে রাখার তাড়নার ছবি শহরের মদের দোকানগুলির সামনেও। অরবিন্দ সরণির এমনই একটি মদের দোকানের লাইনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি ফোনে বলতে থাকেন, “সকালে ভাগ্যিস রেশনের লাইনে দাঁড়াইনি। না হলে এ বেলা এত লাইনে দাঁড়াতে পারতাম না। চাল-ডাল পরে হবে, আগে ১৫ দিনের ব্যবস্থাটা তো করে রাখতে হবে!” ভবানীপুরের যদুবাবু বাজারের একটি ওষুধের দোকানের মালিক শঙ্কর সিংহের আবার দাবি, “জরুরি জিনিসে ছাড় আছে বুঝেও লোকে ভিড় করছেন। তাঁদের বক্তব্য, পনেরো দিনে কিছুই নাকি স্বাভাবিক থাকবে না।”
স্বাভাবিক না থাকার সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এ দিন এসেছে গণ-পরিবহণ ঘিরে। বহু জায়গায় দেদার ভাড়া হাঁকার অভিযোগ উঠেছে অটো-ট্যাক্সির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বেলা চারটের পর থেকেই শোভাবাজার-উল্টোডাঙা রুটের ১৫ টাকা ভাড়া ৩০ টাকা, কাঁকুড়গাছি-গিরিশ পার্ক রুটের ১২ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা হয়ে গিয়েছে। রাত যত বেড়েছে ততই বেড়েছে গড়িয়া-টালিগঞ্জ, যাদবপুর, গোলপার্ক, তারাতলা রুটের ভাড়া। বেহালার অটোচালক সুকুমার মণ্ডল যেমন বলেই দিলেন, “কাল থেকে গাড়ি বন্ধ। এ দিন একটু বেশি করে টাকা তুলে নিতে হবে।” চার-পাঁচ কিলোমিটার যেতে দেদার ভাড়া হেঁকেছে ট্যাক্সিও। বাড়ি ফেরার তাড়নায় ধর্মতলা মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা নীহার দত্ত নামে এক ব্যক্তি বললেন, “কেষ্টপুর পর্যন্ত যেতে ট্যাক্সি আটশো টাকা চাইছে। বাসগুলোর এমন অবস্থা ওঠা যাচ্ছে না। আগামী ১৫ দিন কী হতে পারে, এ থেকেই বোঝা যায়।” হাজরা মোড় থেকে ভিড় বাসে কোনও মতে লাফিয়ে ওঠার আগে সুমনা ঘোষ নামে এক তরুণী আবার বললেন, “আজ শেষ অফিস ছিল। মেসে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বর্ধমানের বাড়ির জন্য রাতেই বেরিয়ে পড়ব। ১৫ দিন পরেও এই অবস্থা থাকলে চাকরিটা থাকবে কি না, জানি না। এ সবে কতটা সার্থকতা আসবে জানা নেই।”
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “লকডাউনের সার্থকতা নির্ভর করছে মানুষের সহযোগিতার উপরে। আমার বিশ্বাস, এত মৃত্যু মিছিল দেখে সেই সহযোগিতা নিশ্চয়ই আসবে।” মেডিসিনের চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বললেন, “এই কড়াকড়ি আরও আগে হলে ভাল হত। নিশ্চিত ভাবে কিছুটা সংক্রমণ কমবে। চিকিৎসকেরা আরও ভাল করে লড়াই করার সুযোগ পাব।”
গড়িয়াহাট বাজারের হকার নিখিল রায় অবশ্য বললেন, “এ লড়াই তো শুধু রোগের সঙ্গে নয়, পেটের সঙ্গেও। আশা করি সকলে মিলে দুই লড়াইয়েই জিতে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy