Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
private hospitals

বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে নিয়মে বাঁধতে উদ্যোগ

রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। ওই বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বছরই পদক্ষেপ করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন।

An image of Private Hospital

এ বার রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে চাইল স্বাস্থ্য দফতর। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৭
Share: Save:

কোথাও বলা হচ্ছে, দাবি মতো টাকা জমা না করলে রোগীর চিকিৎসা শুরু হবে না। কোথাও আবার ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হলেও মোটা অঙ্কের বিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে ওঠা এমনই একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে পৌঁছেছে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। রোগীদের স্বার্থে ওই বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বছরই পদক্ষেপ করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন। তৈরি করা হয়েছিল ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেশন অ্যাক্ট-২০২২’। কিন্তু বছর ঘুরলেও সেই বিধি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

সেই বিধিতেই ছিল একগুচ্ছ প্রস্তাব, যেগুলি প্রণয়ন করার আগে এ বার রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে চাইল স্বাস্থ্য দফতর। সেই লক্ষ্যেই সোমবার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির দু’টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। এ ছাড়াও ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি করা বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসার খরচ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যেরা। যদিও এ দিনই চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কোনও পক্ষই। তবে, আগামী এক মাসের মধ্যে প্রস্তাবগুলি সম্পর্কে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম সংগঠনগুলিকে তাদের মতামত জানাতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

সূত্রের খবর, একগুচ্ছ প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে কয়েকটি বিষয়ে বলা হয়েছে। যেমন, রাতে কোনও রোগী জরুরি পরিস্থিতিতে ভর্তি হলে আনুমানিক খরচের ২৫ শতাংশ জমা নেওয়া যাবে এবং তা ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে না। ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হলে শয্যার ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভর্তির ছ’ঘণ্টার মধ্যে কেউ মারা গেলে বা ছুটি হয়ে গেলে ভাড়ার এক-চতুর্থাংশ এবং ১২ ঘণ্টা হলে অর্ধেক নেওয়া যাবে। তারও বেশি সময় থাকলে তবেই এক দিনের পুরো খরচ নিতে পারবে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম। প্রস্তাবে রয়েছে, সাধারণ শয্যায় ভর্তি থাকা রোগীকে দেখার জন্য দিনে এক বারই ফি নিতে পারবেন মেডিক্যাল অফিসার বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ক্ষেত্রে তা দু’বার।

আরও বলা হয়েছে, চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের জেনেরিক নাম লিখতে হবে। দামি ওষুধ দিলে রোগীর পরিজনদের অনুমতি নিতে হবে। চিকিৎসার প্যাকেজে লুকনো খরচ (হিডেন কস্ট) রাখা যাবে না। বহির্বিভাগের পাশাপাশি অন্তর্বিভাগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রস্তাব। যেমন, প্রতিটি চিকিৎসার খরচ বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে দিতে হবে ও প্রকাশ্যে টাঙাতে হবে। সেই খরচের বদল হোক বা না হোক, প্রতি বছর তা স্বাস্থ্য কমিশনে জমা দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রোগী পরিষেবায় যাতে সমস্যা না থাকে, তার জন্য ৩৩ দফা অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। সেগুলি-সহই ২০২২ সালে ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেশন অ্যাক্ট’-এর খসড়া তৈরি হয়।

বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, “বিভিন্ন সময়ে কমিশনের জারি করা অ্যাডভাইজ়রি অধিকাংশ হাসপাতালই মেনে চলছে। তা-ও যে প্রস্তাবগুলি আনা হয়েছে, সে সম্পর্কে সংগঠনের তিন সদস্যের কমিটি আলোচনা করে সরকারকে মতামত জানাবে।” ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “এই সব প্রস্তাবে মানুষের উপকার হবে। আমাদের ছয় সদস্যের কোর কমিটি বৈঠক করার পরে তবেই মতামত জানাবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE