গোবিন্দ হাজরা। ছবি ফেসবুক।
তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ বিক্রি করতেন। এমনকি বাড়ির দরজায় হাজির হতেন মুড়ি নিয়েও। এ হেন গোবিন্দ হাজরা, আজ কয়েকশো কোটি টাকার মালিক! কিন্তু কোন জাদুকাঠির স্পর্শে সম্ভব হল এই আমূল পরিবর্তন? গোবিন্দ হাজরা এক সময়ে হাওড়ার জগদীশপুরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিজেপি নেতা। তাঁর কুবেরের ধন এল কোন সাধনায়, সেই খোঁজ নিতে নেমে চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। তাঁদের ধারণা, তাঁর কোটিপতি হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক মানুষের চোখের জল। টানা ১৮ বছর জগদীশপুরের প্রধান থাকা ওই নেতার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করার একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে লিলুয়া থানায়। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় নাগরিক মঞ্চও তৈরি হয়েছে। কিন্তু শাসক দলে থাকায় তাঁর টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারেননি এত দিন।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পরে সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন গোবিন্দ হাজরা। ২০০৩ সালে তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন। সেই থেকে টানা ১৮ বছর ওই পদে ছিলেন। এত বছরে তিনি সেখানকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। চলতি বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদানের পরে গত ৬ মে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পদত্যাগ করেন গোবিন্দ।
তবে তার আগে তিনি বেচে দিয়েছেন আস্ত একটা হাট! অভিযোগ উঠেছে, জগদীশপুর হাটকে মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন গোবিন্দ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রধান থাকার সময়ে সরকারি পদ ব্যবহার করে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যেমন, পঞ্চায়েত থেকে কেউ ওয়ারিশন সার্টিফিকেট (সম্পত্তির উত্তরাধিকার শংসাপত্র) বার করতে চাইলে তাঁকে ৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রধানকে ঘুষ দিতে হত। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানাতে তাঁকে ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হত। ট্রেড লাইসেন্স দিতে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা ‘নজরানা’ নিতেন গোবিন্দ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জগদীশপুর মৌজায় বৃহৎ গোষ্ঠীর আবাসন প্রকল্পে নির্মাণ সামগ্রীর সিন্ডিকেটও চালানোর অভিযোগ রয়েছে ধৃত নেতার বিরুদ্ধে। জগদীশপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ের পাশে জেলা পরিষদের খাস জমিতে পুকুর ভরাট করে ‘মল্লিকা ব্যাঙ্কোয়েট’ নামে অনুষ্ঠান বাড়ি তৈরির কথাও জেনেছে পুলিশ।
এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, লক্ষাধিক টাকার জিনিস কিনে দাম না মেটানোর। পুলিশ সূত্রের খবর, হার্ডওয়্যারের দোকানের মালিকের থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার জিনিস কিনে টাকা না দেওয়া, দোকানঘর কেনার জন্য এক ব্যক্তির থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে দোকান না দেওয়া, চাকরি দেওয়ার নাম করে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, জগদীশপুরে তিন বিঘা সম্পত্তি দখল করে বাগানবাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। হাওড়া জেলা ও জেলার বাইরে মোট ২০টি বাড়ির মালিক এই বিজেপি নেতা। জগদীশপুর ছাড়াও শিবপুর, কদমতলা ও বেলগাছিয়ায় বাড়ি রয়েছে তাঁর। দিঘা, পুরী এবং মন্দারমণিতে রয়েছে তাঁর হোটেল। বর্ধমানে রয়েছে পেট্রল পাম্প। এই সব সম্পত্তির খতিয়ান খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
কাল, বৃহস্পতিবার ফের গোবিন্দকে হাওড়া আদালতে তোলা হবে। জেলা বিজেপি তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে অবশ্য দাবি করছে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এখন নানা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে গোবিন্দকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy