প্রতীকী ছবি।
গত বছর লকডাউন-পর্ব শুরু হতেই এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত অনলাইন প্রতারণার সংখ্যা বেশ বেড়েছিল। লালবাজার সূত্রের খবর, নভেম্বর পর্যন্ত লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখায় দিনে গড়ে প্রায় ১০-১৫টি অভিযোগ এসেছে। নভেম্বরের পর থেকে অভিযোগের হার তুলনামূলক ভাবে কমলেও অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগ কিন্তু দায়ের হচ্ছেই।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২ ফেব্রুয়ারি এক কলেজশিক্ষকের মোবাইল ফোন হ্যাক করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বৌবাজার থানা এলাকার গোপালচন্দ্র লেনের বাসিন্দা সৌরভ দে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি।
সৌরভ জানান, ঘটনার দিনে তিনি অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলেন। সে দিন দুপুরে ইন্টারনেট বেশ ধীরে চলছিল। তাঁর ফোনে যে সংস্থার সিম ছিল তাদের থেকে প্রথমে একটি এসএমএস আসে সৌরভের ফোনে। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল, সিমের ভেরিফিকেশন লাগবে। আমার ইন্টারনেট খুবই ধীরে চলছিল। তার পরে আমি ওই নম্বরে ফোন করায় আমাকে বলা হয়, একটু দেরি হবে। আমি ফোন কেটে দিলে ফের টেলিকম সংস্থার তরফে ফোন করা হয়। ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে আমাকে মেসেজ করে একটা সফটঅয়্যার ডাউনলোড করতে বলা হয়।’’ ওই সফটঅয়্যার ডাউনলোড করতেই সৌরভের অ্যাকাউন্ট থেকে পরপর টাকা কেটে নেওয়া হয়। ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে বেরিয়ে যায়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দাদের পরামর্শ, মোবাইলে ফোন করে এই ধরনের সফটঅয়্যার ডাউনলোড করার কথা বললেও কেউ যেন সেই ফাঁদে পা না দেন।
গত বছর জুলাইয়ে নিজের মোবাইল থেকে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন এক দমকল আধিকারিকের স্ত্রী। অনলাইন অর্ডার দেওয়ার পরেই ওই আধিকারিক ও তাঁর স্ত্রীর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ৭০ হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। লালবাজার জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ওই দম্পতিও অনলাইনে কেনাকাটার সময়ে অজানা সফটঅয়্যার ব্যবহার করেছিলেন।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনলাইনে জিনিসপত্র কেনাকাটার সময়ে নিজের ডেবিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য গোপন রাখবেন। নিজের এটিএম কার্ডের তথ্য অপরিচিত কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়ার বি গার্ডেনের বাসিন্দা তাপস কুশারীর স্ত্রী অণিমাদেবী গত বছর ১৪ জুন নিজের মোবাইলের মাধ্যমে একটি অনলাইনে গ্যাস ওভেন কিনতে যান। অণিমাদেবী জানান, তাঁর ডেবিট কার্ডে কাজ না হওয়ায় তাপসবাবুর মোবাইল নিয়েছিলেন। পুলিশকে তাপসবাবু জানান, ১৫ জুলাই অণিমাদেবী এটিএমে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই। এর পরের দিন তাপসবাবুও দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা উধাও। দম্পতি জানতে পারেন, ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৭০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। তাঁরা মোবাইলে কোনও বার্তাও পাননি। গত বছর ২২ জুলাই তাপসবাবু
লালবাজারের গোয়েন্দা প্রধানকে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি লেখেন। তবে টাকা ফেরত পাননি।
লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দমকলের ওই আধিকারিক নিশ্চয় এমন কোনও অজানা অ্যাপ ডাউনলোড
করেছিলেন, যা ওঁদের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে সংযোগ হয়ে গিয়েছিল। বৌবাজারের বাসিন্দা ওই শিক্ষকও তেমনই কোনও আপত্তিকর সফটঅয়্যার ডাউনলোড করেছিলেন।’’
লালবাজারের পরামর্শ, অজানা উৎস থেকে কোনও লিঙ্ক ডাউনলোড না করাই উচিত। ব্যাঙ্কের পরিচয় দিয়ে কেউ এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে, সন্দেহ হলে নিজের ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করা ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy