Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Park Street

ভোল বদলেও পার্ক স্ট্রিটে বিশ্বরূপ দর্শন 

পার্ক স্ট্রিট বলতে একদা ডিনার জ্যাকেট পরে বিলিতি আহারের পীঠস্থানই বুঝত বাঙালি। সময়ের ফেরে সেখানে এখন যুগ পরিবর্তনের সঙ্কেত।

An image of Food

—প্রতীকী চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:

এ সব অনাসৃষ্টি নির্ঘাত হজম হত না টমাস ব্যাবিংটন মেকলের। তামাম ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিকে কার্যত অখাদ্য তকমা দেওয়া মেকলেসাহেবের বাড়ির পাশেই আজ গাদাগুচ্ছের নেটিভ খাবারের রমরমা। ঢাকাই পরোটা, ঘুগনি, লুচি, টক-ঝাল কষা মাংস থেকে হায়দরবাদি হালিম বা সুপে অসমের মহা ধানিলঙ্কা ভূত জলোকিয়ার ঝাঁঝ পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট পাড়ায় ঢুকে পড়েছে।

মেকলের বাড়ির জায়গায় এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে বেঙ্গল ক্লাব। বঙ্গজ ভদ্রজন যেখানে স্মোকড ইলিশ বা শীতকালীন কমলালেবুর সুফলে খেতে ছোটেন। পার্ক স্ট্রিট-রাসেল স্ট্রিটের মুখে পাশের তেতলা বাড়িটাই এ তল্লাটের নয়া আগন্তুক ‘সোশ্যাল’। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুণে, দিল্লির বাঙালির পরিচিত খানাপিনা, গানবাজনা, আড্ডার জনপ্রিয় ঠেক ‘সোশ্যাল’ সদ্য কলকাতায় পা রেখেছে। তারুণ্যের মেজাজের মধ্যে জলখাবার থেকে মহাভোজে দেশবিদেশে ঘোরা বাঙালির স্বাদভুবনের বৈচিত্র্যও তারা মেলে ধরছে।

পার্ক স্ট্রিট বলতে একদা ডিনার জ্যাকেট পরে বিলিতি আহারের পীঠস্থানই বুঝত বাঙালি। সময়ের ফেরে সেখানে এখন যুগ পরিবর্তনের সঙ্কেত। অনেকের কাছে পার্ক স্ট্রিট মানে ফ্লুরিজের চা-ঘরের ঔপনিবেশিক মেজাজ। আবার স্বাধীনোত্তর ভারতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু উদ্যোগপতিদের স্বপ্নও একাকার পার্ক স্ট্রিটে। মোক্যাম্বো-পিটার ক্যাট, বার্বিকিউ, কোয়ালিটি বা ট্রিংকাজের কর্ণধারেরা করাচি, লাহোর ইত্যাদি থেকেই কলকাতায় থিতু হয়েছিলেন। কিন্তু সে কলকাতা ব্যবসা, বিত্তে দিল্লি-মুম্বইকে টেক্কা দিত। ভোজ-ঐতিহ্যের সংস্কৃতি অনেক দিনের হলেও কলকাতার বাজার এখন কিছুটা সঙ্কুচিত। বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদের রেস্তরাঁ চেনগুলিও কিছুটা সাবধানে কলকাতায় পা ফেলে। সোশ্যাল বা দিল্লির এএমপিএম-এর মতো রেস্তরাঁগুলির আবির্ভাবে সেই পার্ক স্ট্রিটেই নতুন তারুণ্যের ছোঁয়াচ।

একদা ভোজ-রসিকদের তীর্থ স্কাইরুম বন্ধ হওয়ার পরে পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় চরিত্রদের দেখা যেত ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মোড় পর্যন্ত। এখন তা রাজপথ ছেয়ে গিয়েছে। শুধু পার্ক সেন্টার বিল্ডিংয়েই পুরনো ভারতের প্রতিনিধি বাটার চিকেন বিশারদ দিল্লির মোতিমহলের শাখার পাশে উচ্চাঙ্গের কোরিয়ান বার্বিকিউ মাংসের আড়ত সোল স্টোরি। ওই বাড়িতেই নয়া আকর্ষণ কফি ও ককটেল বার এএমপিএম। পিৎজা, বার্গার, ডিমসাম, স্পেনের টুকিটাকি টাকনা তাপাস সম্ভারের আদলে পর্ক, মাটন, স্যামনের নানা উপস্থাপনায় সে এক বিশ্বরূপ দর্শন। পাশেই পাহাড়ি পর্ক-মাটন-চিকেনের বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির ইয়েতি, দ্য হিমালয়ান কিচেন। পুণে, মুম্বইয়ে জনপ্রিয় এফিঙ্গাট কাফের নিজেদের তৈরি বেলজিয়ান বিয়ার চাখতে পারেন। অদূরে পার্ক ম্যানসন বাড়ির চুড়োয় চোখ রেখে আরামে চুমুক দিন।

সোশ্যালেও খোলা ছাদে কলকাতার শীত উপভোগ করতে করতে পানভোজনের সুযোগ। কর্ণধার রিয়াজ আমলানি বলছিলেন, “কলকাতার প্রথম সোশ্যাল আমরা পার্ক স্ট্রিটেই চেয়েছিলাম। কলকাতার পুরনো কেবিন রেস্তরাঁ থেকে অলি পাবের পান-বিলাসের মেজাজ— দু’টোই ধরতে চেয়েছি।” তাই ট্যাংরার চাইনিজ থেকে কলকাতার ভাজাভুজির অনুপ্রেরণায় পাকযন্ত্রের পক্ষে সহনীয় ঢাকাই পরোটারও আয়োজন সেখানে। তেতলা রেস্তরাঁর সাজসজ্জাতেও বাঙালি বা কলকাতার মেজাজ। এ দেশের দীর্ঘতম লঙ্গেস্ট লং আইল্যান্ড আইসড টি-র মাদকতা তো আছেই। মোক্যাম্বো কর্তাদের নতুন রেস্তরাঁ পিটার হু বা পিটার ক্যাটের দিকটায় পিঙ্গস ওরিয়েন্ট কাফেতে আবার আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়াচ। কিছুটা জাপান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাদের প্রাবল্য। সুর-সুরায় হিল্লোল তোলা সাবেক ব্লু ফক্সে বহু দিনই ম্যাকডোনাল্ডসের ঘাঁটি। তুলনায় এ কালের বদলগুলি অনেকেরই বেশি পছন্দের।

অন্য বিষয়গুলি:

Park Street Restaurants Foods
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE