দু’বছর পরে হওয়া ম্যাচ ঘিরে কার্যত মেলার চেহারা নিল মাঠ চত্বর।
ইডেন গার্ডেন্সের ক্লাব হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে দুই বন্ধু। এক জন পরেছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়কের নামের জার্সি, অন্য জন বর্তমানের। বর্তমান অধিনায়কের নামে জার্সি পরা যুবকের মন্তব্য ‘‘খেলা হবে, দু’বছর পর আবার খেলা হবে।’’ প্রাক্তন অধিনায়কের নামে ১৮ নম্বর জার্সি পরে থাকা বন্ধু শুনে বললেন, ‘‘খেলা হলেই বা কী, আমার নেতা তো নেই।’’ ঠিক সেই সময়েই ইডেন চত্বরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখে এক জন প্রশ্ন করলেন, ‘‘এত নিরাপত্তা, খেলা দেখতে দিদি আসবেন নাকি?’’ তা কানে আসতেই বর্তমান অধিনায়কের জার্সি পরা যুবক বললেন, ‘‘কে আছে কে নেই, ও সব ভেবে লাভ নেই, বাংলায় খেলা হলে নেতা এক জনই।’’
রবিবারের খেলা ঘিরে এমন নানা মন্তব্য এবং রং ভেসে বেড়াল ইডেন গার্ডেন্স চত্বরে। দু’বছর পরে হওয়া ম্যাচ ঘিরে কার্যত মেলার চেহারা নিল মাঠ চত্বর। পুলিশের কড়াকড়িও বহু ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ মানা নিশ্চিত করতে পারল না। বেলা যত গড়াল, ততই জনতার দখলে চলে গেল রেড রোড ও ময়দানের একাংশ। করোনা-বিধি মানার ঘোষণা থাকলেও দূরত্ব-বিধি মানার উপায় ছিল না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। মাস্ক পরে থাকার দায়িত্ববোধও দেখা যায়নি অনেক ক্ষেত্রে। যা দেখে ইডেন চত্বরে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে উৎসবের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইডেন ম্যাচ। ৪৭ হাজার মতো লোক হবে শুনেছিলাম। কিন্তু বিকেল থেকে পিঁপড়ের মতো যে পরিমাণ মানুষ আসতে দেখেছি, তাতে ভয় ধরে গিয়েছে।’’
ভিড় মোকাবিলার জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে অবশ্য তৎপরতার অভাব ছিল না। এ দিন ম্যাচ ঘিরে প্রায় দু’হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। গেট ধরে ধরে আলাদা পথে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুলিশের তরফে। ছিল লোক মেপে রাস্তা পারাপার করানোর জন্য দড়ির বন্দোবস্তও। ছিল জায়গায় জায়গায় উঁচু থেকে নজরদারির ব্যবস্থা। সন্দেহ হলেই দাঁড় চলেছে জিজ্ঞাসাবাদ।
পুলিশ সূত্রের খবর, টিকিটের কালোবাজারি করায় বেশ কয়েক জন ধরা পড়েছেন এ দিন। তার মধ্যে সন্ধ্যার কিছু আগে দেখা গেল, রেড রোডে গাড়ির চাপ রয়েছে ভালই। যা ধর্মতলা মোড়েও প্রভাব ফেলেছে। একই রকম পরিস্থিতি হয়েছে খেলা শেষের পরেও। বেশি রাত পর্যন্ত সরকারি বাস চালানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও ম্যাচ শেষে তা সে ভাবে পথে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বেশি রাতে মেট্রোপথে যাতায়াতের সুযোগ না পেয়ে অনেকেই নির্ভর করেছিলেন অ্যাপ-ক্যাবের উপরে। এই সুযোগে ঝোপ বুঝে কোপ মারার চেষ্টা করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এ দিকে, ম্যাচ ঘিরে সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল ইডেন চত্বরে। বেলা যত বেড়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে ইডেন চত্বরে। ভারতীয় দলের জার্সি, তেরঙা পতাকাও বিক্রি হয়েছে দেদার। ইডেনের বাইরে সকালের দিকে জার্সির দাম ১২০ টাকা থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই তা বিক্রি হতে থাকে ১৫০ টাকায়, আবার কখনও তারও বেশি দামে। জাতীয় পতাকারও দাম ছিল আয়তন অনুযায়ী ভিন্ন। মুখে তেরঙা পতাকা আঁকাতে এ দিন খরচ করতে হয়েছে ২০ টাকা। একটি মাস্ক বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দরে। যদিও তার ক্রেতার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ইডেনের সামনে ভারতীয় দলের জার্সি বিক্রি করা সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘একশো পিস রোহিতের জার্সি এনেছিলাম। বিকেল হতেই তা শেষ। হাতে রয়েছে গোটা কয়েক বিরাটের জার্সি আর মাস্ক। এ বছরটা দেখছি সত্যিই বিরাটের খারাপ যাচ্ছে!’’ বিকেল যত গড়িয়েছে, ভিড়ের চাপে ততই ইডেন চত্বরে আলগা হয়েছে বিধি-নিষেধের কড়াকড়ি। মাস্ক ছাড়াই দেদার ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চলে মুখে জাতীয় পতাকা এঁকে দেদার নিজস্বী তোলা। বান্ধবীকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন সোদপুরের তন্ময় চট্টোপাধ্যায়। মাস্ক না পরে ঘোরাঘুরির করার কথা বলতেই তাঁর উত্তর, ‘‘আর কী হবে! দু’বছর পর ইডেনে খেলা, করোনার ভয় পেলে চলবে?’’
দু’বছর পরে ইডেনে ম্যাচ ঘিরে নীল-সাদা শহরের রবিবারের রংও থাকল নীল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy