Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বাড়ি গিলেছে মেট্রো, মৃত্যু ২ প্রবীণের

সেকরাপাড়া লেনের ২/১বি নম্বর বাড়ির বাসিন্দা অঞ্জলিদেবী তালতলার হাসপাতালে মারা যান মঙ্গলবার রাতে। বৃদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পরিবারের লোকজন অঞ্জলিদেবীর দেহ বুধবার সকালে সেকরাপাড়ায় নিয়ে যান।

বাড়ির দাওয়ায় বসে বাজি পুড়িয়েছিলেন গত বছরও। সেকরাপাড়ার সেই ভিটেয় আর ফেরা হল না অঞ্জলি মল্লিকের। ফাইল চিত্র

বাড়ির দাওয়ায় বসে বাজি পুড়িয়েছিলেন গত বছরও। সেকরাপাড়ার সেই ভিটেয় আর ফেরা হল না অঞ্জলি মল্লিকের। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১৩
Share: Save:

বাড়ি ভেঙে পড়ার শোক ওঁরা সামলে উঠতে পারেননি বলে জানিয়েছে পরিবার। খোলামেলা বাড়ির আশ্রয় খুইয়ে হোটেলের বদ্ধ ঘরেও ঠিক মানিয়ে নিতে পারেননি দুই প্রবীণ। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বাড়ি ছাড়ার ১০ দিনের মাথায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সেকরাপাড়ার অঞ্জলি মল্লিক (৮৮) এবং গণেশপ্রসাদ গুপ্ত (৮৬)। তাঁদের মৃত্যুতে বুধবার নতুন করে শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন, গৌর দে লেন-সহ বৌবাজারের ‘ভাঙা মহল্লা’।

সেকরাপাড়া লেনের ২/১বি নম্বর বাড়ির বাসিন্দা অঞ্জলিদেবী তালতলার হাসপাতালে মারা যান মঙ্গলবার রাতে। বৃদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পরিবারের লোকজন অঞ্জলিদেবীর দেহ বুধবার সকালে সেকরাপাড়ায় নিয়ে যান। তবে ভাঙা পাড়ায় দেহ ঢোকানো যায়নি। ভিটে পর্যন্ত নয়, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে শববাহী গাড়ি দাঁড় করিয়েই মায়ের শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করতে হয় অঞ্জলিদেবীর মেয়েদের।

অঞ্জলিদেবীর তিন মেয়ে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তাঁরা পালা করে এসে মায়ের সঙ্গে দিন পনেরো থাকতেন। সেই মেয়েরা জানান, গত ৩১ অগস্ট রাতেই তাঁদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই রাতে তাঁদের পক্ষে চারতলা থেকে বৃদ্ধ মাকে নামানো সম্ভব হয়নি। পরের দিন সকালে অ্যাম্বুল্যান্সে অঞ্জলিদেবীকে ধর্মতলার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের ঘুপচি ঘরে মায়ের খাওয়াদাওয়া, ঘুম সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান অঞ্জলিদেবীর মেয়েরা। মেজো মেয়ে অনীতা আঢ্য বলেন, ‘‘হোটেলের শৌচাগারের দুর্গন্ধ এমনই যে, সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। মায়ের এত বয়স! ফলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।’’ তার পরেই, ৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বৃদ্ধাকে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

বিপর্যয়ের আগে, ২২ অগস্টও কাজের জন্য সেকরাপাড়ার বেশ কিছু পরিবারকে হোটেলে সরিয়ে দেয় মেট্রো। সেই সময় পরিবারের অন্যদের সঙ্গে অঞ্জলিদেবীকেও হোটেলে নিয়ে যেতে হয়েছিল। চারতলা থেকে বারবার নামানো-ওঠানোর সেই ধকলও মা নিতে পারেননি বলে অভিযোগ মেয়েদের।

বাড়িতে ফাটল ধরেছে শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০ সেকরাপাড়া লেনের গণেশবাবু। ১ সেপ্টেম্বর ভোরে তাঁকে বাড়ি থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তালতলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃদ্ধ সেখানে থাকাকালীনই জানতে পারেন, তাঁর বাড়িটা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাঁর ছোট ছেলে কিশোরপ্রসাদ জানালেন, বাবা ওই শোক নিতে পারেননি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেক বাসিন্দা এ দিন বলেন, নতুন প্রজন্মই বাড়ি ভেঙে পড়ার ব্যাপারটা মানতে পারছে না। বয়স্ক মানুষগুলোর কাছে তো বাড়ি থেকে হোটেলে গিয়ে থাকাটা শিকড়ছেঁড়া হয়ে পড়ার মতো!

অন্য বিষয়গুলি:

Bow bazar Goldsmith
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy