জাল ভ্যাকসিন কাণ্ডে ধৃত আরও দু’জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হচ্ছে মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
করোনার জাল টিকা-সহ নানা ধরনের প্রতারণায় দেবাঞ্জন দেবের সহচর বলে অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের এক জন হল দেবাঞ্জনের কাকার ছেলে কাঞ্চন দেব। অন্য যুবকের নাম শরৎ পাত্র। পুলিশের দাবি, দেবাঞ্জনের অফিস দেখাশোনা করত মূলত কাঞ্চনই। শরৎ বিভিন্ন শিবিরে আসা মানুষদের প্রতিষেধক টিকা দিত। সোমবার রাতে ধৃত ওই দু’জনকে ৫ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বছর তিনেক আগে মনোবিদের কাছে তাঁর মক্কেল দেবাঞ্জন দেবের চিকিৎসা হয়েছিল বলে মঙ্গলবার আদালতে জানান আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। আদালতে তাঁর দাবি, ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন মানসিক রোগী। দেবাঞ্জনকে এ দিন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তোলা হয়। সেখানে দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘পুলিশি হেফাজতে দেবাঞ্জনকে মনোবিদ দেখানোর প্রয়োজন আছে। ২০১৮ সালে এক মনোবিদের কাছে ওর চিকিৎসা হয়েছিল।’’ আদালত সূত্রের খবর, দেবাঞ্জনের যে এই সমস্যা আছে, তার কোনও তথ্যপ্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে কি না, ওই আইনজীবীর কাছে তা জানতে চান অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যদিও তেমন কোনও তথ্যপ্রমাণ এ দিন আদালতে পেশ করা যায়নি। ওই অভিযুক্তকে ৫ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে কী কী মামলা হয়েছে, কী কী নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, কলকাতা পুলিশের কাছে তার খতিয়ান চেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সাধারণত বড় কোনও আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় তদন্ত করে ইডি। তবে এ ক্ষেত্রে রাজ্য না-চাইলে তারা তদন্তে নামতে পারবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় আছে।
সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল এ দিন আদালতে বলেন, "দেবাঞ্জনের কাছে প্রচুর জাল স্টাম্প পাওয়া গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে জাল প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সেই কারণে দেবাঞ্জনকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার। জাল ওষুধ তৈরি করা, জাল ওষুধ বিক্রি করা এবং তা বিলি করা— এমন তিনটি নতুন ধারা এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে।"
দেবাঞ্জনের মা বন্দনা দেব এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁর ছেলে কোনও অপরাধ করতে পারে না বলে মনে করেন তিনি। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও আদালতের ন্যায় বিচারের উপরে তিনি আস্থা রাখেন বলেও আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে জানান বন্দনাদেবী।
প্রতারক দেবাঞ্জনের উত্থানে কাদের মদত ছিল, পুলিশ এখনও তা জানে না। তবে এর পিছনে যে পাকা কোনও মাথা রয়েছে, সেই বিষয়ে তারা নিশ্চিত। পুলিশের বক্তব্য, করোনার নির্দিষ্ট প্রতিষেধকের বদলে অ্যামিক্যাসিন ইঞ্জেকশন দিলে যে কোনও ক্ষতি হবে না, এটা দেবাঞ্জনের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। পুলিশ জানিয়েছে, নাকতলার বাসিন্দা কাঞ্চন ছিল দেবাঞ্জনের ছায়াসঙ্গী। দেবাঞ্জন যে ভুয়ো আইএএস অফিসার, তা জেনেবুঝেও চেপে গিয়েছিল কাঞ্চন। পুলিশের দাবি, সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কাঞ্চন দাবি করেছিল যে, সে কিছুই জানে না। কিন্তু তাদের সংস্থার কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কসবার অফিসে পৃথক রুমে বসে কন্ট্রোলিং অফিসার হিসেবে কাঞ্চনই দেবাঞ্জনের সব কাজ দেখত।
পুলিশ জানায়, বেশ কিছু লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল দেবাঞ্জন। আর সেই দেবাঞ্জনের সঙ্গেই নাকি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল কাঞ্চন। অন্তত গোয়েন্দাদের জেরার মুখে এমনটাই দাবি করেছে দেবাঞ্জন। তদন্তকারীরা জানান, কাঞ্চন জানত, দেবাঞ্জন ভুয়ো আইএএস সেজে কাজকর্ম চালাচ্ছে। সেটাকেই সামনে রেখে কার্যত ‘ব্ল্যাকমেল’ করে যাচ্ছিল কাঞ্চন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, অফিসের যাবতীয় কেনাকাটার বিষয়টি দেখত কাঞ্চন। সেই সুযোগে জিনিস কেনার জন্য সে দেবাঞ্জনের কাছ থেকে বাড়তি টাকাও আদায় করত বলে তদন্তকারীদের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, কাঞ্চনের যাবতীয় দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল দেবাঞ্জন।
দেবাঞ্জনের সহযোগী হিসেবে শরৎ সব ভুয়ো টিকা শিবিরের আয়োজন করত বলে জানায় পুলিশ। এক সময় সে তালতলা এলাকার এক ডাক্তারের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করত। তাই কসবা এবং সিটি কলেজের শিবিরে ভুয়ো প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন দেওয়া তার পক্ষে সহজ হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছু দিন আগে নিজের অফিসে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল দেবাঞ্জন। সেখানে কর্মীরা ভোট দেন। তার পরেই সে নিজেকে জয়ী বলে ঘোষণা করে। পুলিশের কাছে তার দাবি, সেটি ছিল রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নির্বাচন। যা ভুয়ো বলেই তদন্তকারীদের অনুমান।
তালতলার এক ব্যবসায়ী এ দিন পুলিশের কাছে দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে কয়েক লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ, তিনি দেবাঞ্জনকে পুরসভার অফিসার ভেবে টেন্ডারের মাধ্যমে অফিসের কাজের জন্য বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী দিয়েছিলেন। দেবাঞ্জন টাকা মেটায়নি।
তালতলার যে-সংস্থার নামফলকে দেবাঞ্জনের নাম উল্লেখ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, সেই ত্রিপুরাশঙ্কর সেনশাস্ত্রী স্মৃতি গ্রন্থাগারের সম্পাদক তাপস লাহাও সোমবার কসবা থানায় দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy