ফাইল ছবি।
ইংরেজি অনার্সে নাম উঠেছে সানি লিওনির! বছর দুই আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের সেই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। দেখা যায়, মেধা তালিকায় সানির নাম রয়েছে প্রথমেই। বেস্ট অব ফোর, অর্থাৎ যে চার বিষয়ে সব চেয়ে বেশি নম্বর উঠেছে, তার হিসেবে ৪০০-র মধ্যে ৪০০ পেয়েছেন সানি। তিনি পাশ করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ থেকে! বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন সানি নিজেও। লেখেন, ‘কলেজে পরের সিমেস্টারে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, আমার ক্লাসেই থাকবে তোমরা।’
বলিউডের অভিনেত্রীর সেই টুইট এবং গোটা বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে হাসাহাসি চললেও এ রাজ্যের শিক্ষা মহলের অনেকেই সরব হয়েছিলেন ছাত্র ভর্তিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গে। কারণ, শুধু সানির নামই নয়, দেখা যায়, ওই কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের জেনারেল বিভাগের তালিকায় ২ থেকে ২৮ নম্বরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের নামের জায়গায় কিছু অক্ষর লেখা। সকলেই বেস্ট অব ফোর-এ ৩৯৭ পেয়েছেন! যদিও ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন মেধা তালিকা প্রকাশের পরিবর্তে ইংরেজির ক্ষেত্রে সানিকে এবং কম্পিউটার সায়েন্সের ক্ষেত্রে ২ থেকে ২৮ নম্বর নাম বাদ দিয়েই ভর্তি শুরু করে দেন। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে ইচ্ছে করেই টাকা হাতানোর পথ রাখা হয়েছিল? যে হেতু ভুয়ো নাম, ফলে কেউ ভর্তি হতে আসবেন না। সেই সুযোগেই কি ওই আসনে টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি করানো হবে ভিতর থেকে? এ ক্ষেত্রে সানির নাম ব্যবহার করাতেই কি ধরা পড়ে গিয়েছে বিষয়টি? কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও রকম ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো হয়। উল্টে দায় চাপানো হয় ওয়েবসাইট নির্মাতা সংস্থার উপরে। তবে সেই সংস্থার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা যায়নি আজও।
তবে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ভর্তি-দুর্নীতির এমন একাধিক বিষয়ই ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সদ্য উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার মধ্যে ভর্তি-দুর্নীতিতে হাতানো টাকার ভাগ কতটা, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পার্থর সময়েই ছাত্র ভর্তিতে হাজার হাজার টাকা হাতানো হয়েছে। অধ্যক্ষ, উপাচার্যদের টাকা তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। টাকা তুলে দিতে পারলে পদ থাকবে, নয়তো নয়। টাকার স্বাদ পেয়েই শুরুর দিকে অনলাইনে ছাত্র-ভর্তি চালু করতে চাননি পার্থ। পরে অনলাইনে ভর্তি চালু করলেও টাকা তোলা বন্ধ হয়নি। শুধু সময়ে সময়ে কৌশল বদলে নেওয়া হয়েছে।’’ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘এমন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যেখানে যে ক্ষেত্রে যুক্ত থাকবেন, তার সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি থাকবে। সবটাই তদন্ত করে দেখা দরকার। পার্থর কোটি টাকার বস্তায় ছাত্র ভর্তির টাকা কত আছে, তদন্ত করলেই বেরোবে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, এক সময়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি করানো হয়েছে পার্থর প্রচ্ছন্ন মদতে। মুখ্যমন্ত্রী এই সব বন্ধ করতে পুলিশ নামাতে বাধ্য হলেও কলেজ পরিদর্শনে বেরোনো পার্থকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আসলে সব সাইবার কাফের গন্ডগোল।’’ পরবর্তীকালে পুলিশ শহরের নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক রাতের মধ্যে প্রায় কুড়ি জনকে (এঁদের বেশির ভাগই প্রাক্তন পড়ুয়া। তবু ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে পড়ে থাকার সুবাদে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন) গ্রেফতার করলেও পার্থকে বলতে শোনা যায়, ‘‘অনেকেই লটারিতে টাকা লাগান। তাতে আমি কী করব?’’
এর পরেও দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ায় ভর্তির পুরোটাই অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগ, এ বার মন্ত্রীর ভরসা হয়ে ওঠেন ছাত্ররাজনীতির নামে কলেজে পড়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই অশিক্ষক কর্মীর চাকরি পেয়ে যাওয়া ‘স্নেহধন্যরা’। বকলমে তাঁরাই ঠিক করতে থাকেন, কোন মেধা তালিকায় কত জনের নাম থাকবে, কোন নাম ভর্তি হতে আসবে না আর সেই জায়গায় কাকে ঢোকানো হবে ইত্যাদি। কলেজের অধ্যক্ষও ঘাঁটান না তাঁদের। কথার অবাধ্য হলেই আসে দূরে কোথাও বদলির হুমকি!
উত্তর কলকাতার একটি কলেজের এক অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘ভর্তির আবেদন করার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নির্দিষ্ট কিছু দিনে নতুন করে আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইট চালু করে দেওয়ার নির্দেশ আসত। রাজি না হলে ফোন আসত একেবারে উপরমহল থেকে। সরাসরি কড়া গলায় বলা হত, সুখে থাকতে ভাল লাগছে না? আপনার বোধহয় দূরে কোথাও বদলির সময় হয়ে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy