(বাঁ দিকে) লিপিকা মান্না । সুশান্ত ঘোষ (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় যাদবপুর পাটুলি এলাকার দুই কাউন্সিলরকে শোকজ় করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রে খবর, আরও দুই কাউন্সিলরের উপর কড়া নজর রেখেছে দল। লোকসভা ভোটে সাফল্যের পর কলকাতায় দলীয় কাউন্সিলরদের পরস্পরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া এবং অনুগামীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা দলের ভাবমূর্তি জনমানসে ক্ষুণ্ণ করছে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরাজ মণ্ডল এবং ১১ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান তথা ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তীকে শোকজ় করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। আর এ বার নজর কসবা এলাকার দুই কাউন্সিলরের দিকে। তাঁরা হলেন ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিপিকা মান্না এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। খাস কলকাতায় দলের কাউন্সিলরদের এ ভাবে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলিকে বরদাস্ত করতে নারাজ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কড়া পদক্ষেপ করবেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
সম্প্রতি কসবায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় দুই কাউন্সিলরের অনুগামীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৬ জুন রাতে দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কসবার রাজডাঙা এবং ইন্দু পার্ক এলাকা। তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। ওঠে বোমাবাজি, গুলি চালানোর অভিযোগও। কাউন্সিলরের অনুগামীদের এ ভাবে পারস্পরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছিল দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। ঘটনার জেরে তৃণমূলের তরফে সতর্ক করা হয়েছিল ওই দুই কাউন্সিলরকে। তার পরেই যাদবপুরে স্বরাজ বনাম তারকেশ্বরের গোষ্ঠীর লড়াই প্রকাশ্যে আসায় ধামাচাপা পড়ে যায় লিপিকা-সুশান্ত দ্বন্দ্বের কথা। গত মঙ্গলবার রাত থেকে যাদবপুর-পাটুলি এলাকায় দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে অশান্তি ছড়ায়। সেখানে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর স্বরাজকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ১১ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সেই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সাত দিনের মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
তৃণমূল নেতৃত্বের এমন পদক্ষেপের পরেই ফের উঠে এসেছে লিপিকা-সুশান্তের দ্বন্দ্বের কথা। লিপিকা বলছেন, “আমার সঙ্গে কারও কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমি আমার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সে ক্ষেত্রে যদি কোনও অসুবিধা হয়, তা হলে প্রশাসন এবং দলকে অবশ্যই জানাব। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই।” প্রসঙ্গত, কসবা বিধানসভা এলাকা তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০১০ সালে ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসাবে প্রথম বার জেতেন সুশান্ত। ২০১৫ সালেও ওই ওয়ার্ড থেকে দ্বিতীয় বার জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রতীকে কাউন্সিলর হয়েছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশেই ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৎকালীন কাউন্সিলর শ্যামলকে সাহায্য করতেন সুশান্ত। ২০২১ সালের কলকাতার পুর নির্বাচনে সংরক্ষণের কারণে আর নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়ানো হয়নি তাঁর। তাই ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয় লিপিকাকে। আর সুশান্তকে পাঠানো হয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে। দু’জনেই জেতেন নিজ নিজ ওয়ার্ডে। এ ক্ষেত্রে লিপিকা অনুগামীদের অভিযোগ, ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও সুশান্তের অনুগামীরা এখনও ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। যার থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা দলের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর সুশান্ত বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার ছয়মাস আগেই আমাকে ওই ওয়ার্ডে যেতে বারন করেছেন। তারপর থেকেই আর আমি ওই ওয়ার্ডে যাই না। যে ঘটনা প্রসঙ্গে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই ঘটনায় কোনওভাবেই আমি যুক্ত নই। একটি বস্তিতে মারামারি ঘটনা ঘটেছিল। সেখান থেকেই গোলমালের সূত্রপাত, সেই ঘটনায় মোট ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাতে আমার পরিচিত কেউ নেই। তাই আমার বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের যে কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy