ভাঙা পা নিয়ে নেত্রীর ধর্নাস্থলে হাজির হলেন তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। — প্রতীকী ছবি।
রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না মঞ্চের সামনে হুইলচেয়ার। বসে রয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। দেখেই মমতা নেমে এলেন মঞ্চ থেকে। কথা বললেন কুণালের সঙ্গে। একটু পরে কুণালকে নিয়ে হুইলচেয়ার গেল গাছের ছায়ায়। ঘণ্টাখানেক থাকার পরে গাড়িতে করে চলে গেলেন। দূর থেকে এর সবটাই দেখা গিয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কী কথা হল নেত্রী মমতার সঙ্গে? শুধুই কুশল প্রশ্ন? না, অনেক পরামর্শও পেলেন কুণাল।
ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট, হাসপাতালে চিকিৎসা, অপারেশন, টানা বিশ্রাম। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এমনটাই জীবন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের। বাড়িতে শুয়ে আছেন কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয়। প্রথম দিকে তো তাঁর নিজের দায়িত্বে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরে ভাঙা পা নিয়ে চলেও যান। কুণালের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা যায় চিকিৎসকের ধমক খেয়ে আপাতত বাড়িতেই বিশ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে দলীয় কাজের জন্য মস্তিষ্কের বিশ্রাম বন্ধ করেননি। রোজই নানা টুইট, আধশোয়া হয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে চলেছেন।
বুধবার রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা। সব দলেরই ছিল কর্মসূচি। তৃণমূলের আবার দুটো। একটি মমতার ধর্না। দ্বিতীয়টি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহিদ মিনারের সভা। সাধারণ ভাবে হলে দু’টিতেই কুণালের থাকার কথা ছিল। কিন্তু কোনওটিতেই তাঁকে দেখা যায়নি। বুধবার দু’টি জায়গাতেই খুব ভিড় ছিল। সে কারণেই বৃহস্পতিবার ফাঁকায় ফাঁকায় মমতার ধর্নাস্থল থেকে ঘুরে এলেন বলে জানিয়েছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘দলের এত বড় দু’টি কর্মসূচি কিন্তু আমায় চিকিৎসকের নির্দেশে ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। ভিড়ের জন্য যেতে পারিনি। আর মনে হচ্ছিল, দলের সর্বময় নেত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন ধর্নায় বসে রয়েছেন তখন এক বার তো যেতেই হবে। তাই সকালে ফাঁকায় ফাঁকায় গিয়ে ঘুরে এসেছি।’’
কী কথা হল দিদির সঙ্গে? কুণাল বলেন, ‘‘আমি অভিভূত যে, পৌঁছেছি জেনেই মমতাদি নিজে চলে আসেন। আমার পায়ের খোঁজ নেন। অনেকে আমায় মঞ্চে ধরে ধরে তুলবেন বলেছিলেন, কিন্তু আমি রাজি হইনি। পাশে একটা গাছের ছায়ায় গিয়ে বসেছিলাম।’’ ঘণ্টাখানেক ছিলেন কুণাল। সেই সময়ে মমতা কুণালের জন্য ছাতা নিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন। কুণাল বলেন, ‘‘দিদি তো সকলের খোঁজখবর রাখেন সব সময়। আজকেও আমি যে হেতু অসুস্থ, তাই আমার মাথায় ছাতার জন্য তিনি উতলা হয়ে ওঠেন। আমি অবশ্য জানিয়ে দিই, দরকার হবে না। আসলে আমি ছায়াতেই ছিলাম।’’
মমতা গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে পায়ে চোট পেয়েছিলেন নন্দীগ্রামে। এর পরে সেই চোট নিয়েই হুইলচেয়ারে বসে প্লাস্টার করা পা নিয়ে গোটা রাজ্য চষে বেড়িয়েছিলেন। তা থেকেই কি প্রেরণা কুণালের? প্রশ্ন শুনে কুণাল বলেন, ‘‘দিদির সব কিছুই আমার কাছে প্রেরণা। আমার একার নয়, সবার কাছে প্রেরণা। আজ সেই কথাও বললেন। ভাঙা পা নিয়ে অত ঘোরাঘুরির জন্য এখনও দিদির কিছু কিছু সমস্যা হয়। সেটা স্মরণ করিয়ে আমাকেও সাবধানে থাকতে বলেছেন।’’ ধর্না মঞ্চে যাওয়ার অনুমতি দিলেও, শারীরিক কারণেই চিকিৎসকরা বেশি সময় থাকতে বারণ করেছিলেন। তাই ঘণ্টাখানেক থেকেই তিনি চলে আসেন বলে জানিয়েছেন কুণাল।
নেত্রী ধর্নায় বসেছেন বলে ভাঙা পা নিয়ে যেতে হবে? এটাকে তো সমালোচকরা ‘লোকদেখানো’ বলতেই পারেন? কুণালের জবাব, ‘‘যাঁরা বলবেন, তাঁরা বলবেন। লোকদেখানোর জন্য করলে তো মঞ্চে উঠে যেতাম। ধরে ধরে মঞ্চে তোলা হলে তো আরও বেশি লোক দেখত। বুধবারেও ছাত্র যুবর সমাবেশে যেতে পারতাম। স্ট্রেচার বা হুইলচেয়ারে করে তুললে আরও বেশি লোক দেখত। আমি ও সব করি না।’’ একই সঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘আমার জীবনের স্বর্গ-নরক দর্শনে ও সব সস্তা জিনিস আমি ফেলে এসেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy