সময়ের বড্ড অভাব। সারা দিন সকলে শুধু ছুটছে। কাজের তাড়া, খাওয়ার তাড়া, এমনকি ঘুমেরও তাড়া। দ্রুত গতির জীবনে হাত ফস্কে বেরিয়ে যাচ্ছে এক একটা মিনিট, এক একটা ঘণ্টা। যেন চোখেই দেখা যায় না। আর এরই মাঝে নিজের জন্য সময় বার করা কেবল মুশকিল নয়, যেন ‘না-মুমকিন’। আর তাই নতুন ট্রেন্ডের প্রস্তাবনা।
৯টা-৫টার চাকরিতে যাওয়ার আগে নিজের জন্য ৫টা-৯টা। অর্থাৎ অফিস থেকে ফিরে ক্লান্তির চোটে সম্ভব নয় বলেই, অফিসে যাওয়ার আগের সময়টিকে নিজের জন্য তুলে রাখা। আর সেটিকেই বলা হচ্ছে, ‘৯টা-৫টার আগে ৫টা-৯টা’।
নতুন এই জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য, ধরন, উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন আমেরিকার এর মনোবিদ র্যামোন ফোর্ড। সেগুলি জানার পরই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এই ট্রেন্ড আপনার জন্য উপযুক্ত কি না।

দ্রুত গতির জীবনে হাত ফস্কে বেরিয়ে যাচ্ছে এক একটা মিনিট, এক একটা ঘণ্টা। ছবি: সংগৃহীত।
‘৯টা-৫টার আগে ৫টা-৯টা’ ট্রেন্ডটি কী?
এই ট্রেন্ডটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা যতটাই সহজ, অনেকের কাছে এই অভ্যাস তৈরি করা ততই কঠিন। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে দিনের প্রথম চার ঘণ্টা কেবল নিজের দিকে মন দিতে হবে। নিজের যত্ন নিতে হবে। তার পর নির্দিষ্ট সময়ে প্রস্তুত হয়ে কাজে বেরিয়ে পড়তে হবে।
নিজের প্রতি যত্নের সংজ্ঞা হিসাবে মনোবিদ জানালেন, এমন কিছু কার্যকলাপ, যা আপনার শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবে। কী কী ধরনের কাজ হতে পারে?
১. সময় নিয়ে স্বাস্থ্যকর জলখাবার বানিয়ে খাওয়া
২. ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা
৩. ধ্যান করা
৪. বই পড়া বা লেখালেখি করা
৫. প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো
৬. পেশার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করা
৭. শখের কাজ করা
অফিসের কাজের চাপে নাস্তানাবুদ হয়ে যাওয়ার আগে অর্থবহ উপায়ে শান্তিতে সময় কাটানোই এটির লক্ষ্য।

আপনি কি নিশাচর? তা হলে ভোরে ওঠার অভ্যাস আপনার জন্য ভাল নয়। ছবি: সংগৃহীত।
উপকারিতা কী?
নিজের জন্য সময় বার করার মতো ভাল কী-ই বা হতে পারে। এই ধরনের রুটিনে নিজেকে বেঁধে ফেললে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন। সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছে হলে সময়কে সে ভাবে বেঁধে নিতে পারেন। সারা দিন মেজাজ ভাল থাকবে। ফলে অফিসের কাজের চাপকেও আর একটু সহজে সামলাতে পারবেন। নিজেকে ভাল কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখলে আপনারও ভাল লাগবে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
বাস্তবে কি সকলের পক্ষে এই রুটিন মেনে চলা সম্ভব? অপকারিতাগুলি কী কী?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত সব কিছুর জন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘যদি আপনি অনেক রাতে ঘুমোন, এবং ভোর ভোর উঠে পড়েন, তা হলে ঘুম ভাল হবে না। তাতে কোনও কাজেই সফল হতে পারবেন না। উল্টে শরীর আরও খারাপ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মনও।’’
কাদের এই রুটিন এড়িয়ে চলা উচিত?
১. আপনি কি নিশাচর? তা হলে ভোরে ওঠার অভ্যাস আপনার জন্য ভাল নয়।
২. বেশি ক্ষণ ভাল ঘুম হয় না? তা হলেও এই রুটিন আপনার জন্য নয়।
৩. যাঁরা রাতের শিফটে কাজ করেন, তাঁদের জন্যও এই অভ্যাস ক্ষতিকারক।
৪. ঘুম সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হলেও এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৫. ছুটির আগের দিন রাত জেগে আড্ডা বা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন? সে ক্ষেত্রে নতুন রুটিন আপনার জন্য উপযুক্ত নয়।
৬. কোনও অসুস্থতা, আঘাত থেকে সেরে উঠছেন সদ্য? তা হলেও এই ট্রেন্ড মেনে চলা ঠিক নয়।
সুতরাং, পর্যাপ্ত ঘুম সবার আগে প্রয়োজন। সেটি নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই এই ট্রেন্ডের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলা যেতে পারে।