Advertisement
E-Paper

চার শর্ত লঙ্ঘন করে, বিনা অনুমতিতে রামনবমীর মিছিল! বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অভিষেক-নিশানায়

রামনবমীর মিছিল এবং তাতে অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে মিছিল ঘিরে বিচ্ছিন্ন অশান্তির ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়।

Abhishek Banerjee

অভিষেক জানান, দু’টি সংগঠনের তরফে হাওড়ার সংশ্লিষ্ট স্থানে রামনবমীর মিছিলের আবেদন করা হয়েছিল। কেউই প্রশাসনের কোনও ‘গাইডলাইন’ (শর্ত) মানেনি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ২০:০২
Share
Save

পুলিশের দেওয়া নির্দিষ্ট ‘গাইডলাইন’ (শর্ত) মেনে রামনবমীর মিছিল হয়নি বলে সরাসরি অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যে চিঠি মিছিলকারীদের সংগঠনকে দেওয়া হয়েছিল, তা জনসমক্ষে আনেন অভিষেক। অভিযোগ করেন, ওই গাইডলাইন সংবলিত চিঠি কোনও জবাব দেয়নি দু’টি হিন্দু সংগঠন। সংগঠন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, ‘‘প্রশাসনের অনুমতি, আদালতের নির্দেশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বিধি ছাড়া প্রত্যেক জায়গায় মিছিল করেছে এরা। এবং প্রত্যেকটাই বেআইনি।’’

অভিষেকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশের দেওয়া শর্ত আমরা মেনেছি। পুলিশের সঙ্গে দু’বার মিটিং হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হয়েছে। শুধু মাত্র হাওড়ার নির্দিষ্ট জায়গায় কেন অশান্তি হয়? এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।’’ তিনি চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, ‘‘সিসিটিভি দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করুক প্রশাসন। সত্য সামনে আসবে।’’

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পুলিশের অনুমতি না-থাকা সত্ত্বেও হাওড়ার একটি জায়গায় রামনবমীর মিছিল করে অশান্তি সৃষ্টি করেছেন কয়েক জন। আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, পুলিশের অনুমতি ছিল। সেই আবহেই শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করলেন, মিছিলের আবেদন জানালেও তার অনুমতিই দেয়নি পুলিশ! তার পরেও হাওড়ার একটি জায়গায় মিছিল হয়েছে। এবং সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের দেওয়া চারটি শর্তই লঙ্ঘিত হয়েছে।

শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক জানান, দু’টি সংগঠনের তরফে হাওড়ার সংশ্লিষ্ট স্থানে রামনবমীর মিছিলের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু দুটি সংগঠনই প্রশাসনের কোনও ‘গাইডলাইন’ (শর্ত) মানেনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন প্রত্যেক শোভাযাত্রার অনুমতি দেবে। কিন্তু সেই শোভাযাত্রা নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে করতে হবে। আর আবেদন করা মানেই তো পারমিশন দিয়ে দেওয়া হল, এমনও নয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গায়ের জোরে ওই রুট দিয়ে মিছিল করে গুন্ডামি চালানো হয়েছে। পুলিশকে একটি চিঠি দেন হাওড়ার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কনভেনার (আহ্বায়ক) ইন্দ্রদেও দুবে। পুলিশের তরফে মোট চারটে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ চিঠিটি পাওয়ার পর ২৮ মার্চ ইন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের তরফে চারটি বিষয়ে তাঁদের জবাব চানতে চাওয়া হয়। ২৯ মার্চের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, র‌্যালি দুপুর আড়়াইটের সময় শুরু হবে। ৫টায় শেষ হবে।’’ অভিষেক প্রশাসনের চিঠিটি তুলে ধরে দেখিয়ে বলেন, ‘‘গাইডলাইনের প্রথমে বলা হয়, এর আগে ওই এলাকায় র‌্যালি করার অনুমতিপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কত জন মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, সেটা জানাতে হবে। মিছিলে যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, সেই সদস্যদের তালিকা নির্দিষ্ট থানায় জমা করতে হবে। তৃতীয়ত, মিছিল থেকে কেউ উত্তেজক অঙ্গভঙ্গি বা স্লোগান দিতে পারবেন না। কোথা থেকে মিছিল হবে এবং কোথায় তা শেষ হবে। এবং চতুর্থত, ঠিক কোন সময় মিছিল শুরু এবং শেষ হবে, তা নিয়ে।’’

অভিষেকের অভিযোগ, এই গাইডলাইনের একটিরও জবাব দেয়নি দুই হিন্দু সংগঠন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, ‘‘প্রশাসনের অনুমতি, আদালতের নির্দেশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের বিধি ছাড়া প্রত্যেক জায়গায় মিছিল করেছে এরা। এবং প্রত্যেকটাই বেআইনি।’’

বেআইনি মিছিল করলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি কেন? অভিষেকের হুঁশিয়ারি, ‘‘নিশ্চিন্তে থাকুন, পদক্ষেপ হবে। এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা হবে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ঠিক অপরাধীদের ধরবে। কোথায় পালাবে? সুদীপ্ত সেনকে (সারদাকর্তা) কাশ্মীর থেকে তুলে এনেছিল। জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নয়ডা থেকে তুলে এনেছে।’’

অভিষেক বেশ কয়েক’টি ভিডিয়ো ক্লিপ দেখিয়ে অভিযোগ করেন, রামনবমীর নামে শোভাযাত্রা করে বাংলার আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করছে একটি রাজনৈতিক দল। তাঁর দাবি, ‘‘ওই রাজনৈতিক দলই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে এই অশান্তিতে দায়ী।’’ অভিষেকের অভিযোগ, ‘‘ওরা ২০১৬ সালে তিনটে বিধায়ক পাওয়ার পর রাজ্যটাকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করল। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ধর্মের নামে গুন্ডামি, মস্তানি করছে।’’ পর ক্ষণেই অভিষেকের আঙুল ঘুরে যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দিকে। অমিত শাহ কথিত ‘ক্রোনোলজি’ বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দু’ দিন আগে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন উনি। আধ ঘণ্টার বৈঠক করে কলকাতায় আসেন। তার পর শ্যামবাজারে বৈঠক করে বলেছিলেন, ‘টিভিতে নজর রাখুন’। তার পর শুরু হল গোলমাল। ক্রোনোলজি দেখুন।’’ অভিষেক কারও নাম না করলেও সম্প্রতি অমিতের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন শুভেন্দু। স্পষ্টতই অভিষেকের কটাক্ষ তাঁর প্রতিই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত কেন ওই ঘটনা নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ফোন করলেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক।

Abhishek Banerjee TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}