প্রতীকী চিত্র।
‘চেটেপুটে বাঙালি’। নববর্ষের ভোজ মাত্র ৪৫ টাকায়! মিলবে লুচি, ছোলার ডাল, পোলাও, খাসির মাংস, চাটনি, পাঁপড় আর রসগোল্লা। এখনই বরাত দিলে পাবেন ৪৫ টাকায়। বাংলা বর্ষবরণের দিন যত এগিয়ে আসবে, ততই দাম বাড়বে!
মেসেজে আরও লেখা, এই মেনুই শুরু হয়েছিল প্লেট প্রতি ৩৫ টাকায়। প্রচুর বরাত আসায় দশ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে! নববর্ষের সস্তা ভোজনের এমনই টোপ গিললে পস্তাতে হবে শেষকালে। যেমনটা হয়েছেন মানিকতলার বাসিন্দা দেবদুলাল রুদ্র। ৪৫ টাকার লোভে বেরিয়ে গিয়েছে তাঁর ৪৫ হাজার টাকা।
প্রতি বর্ষবরণে বড় করে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয় মানিকতলার রুদ্র বাড়িতে। এই টাকায় এত সব পদ তো দূরের কথা, ভাল জায়গায় চারটে লুচি আর মিষ্টিও হয় না। তাই ভাল সুযোগ ভেবে বরাত দিতে গিয়েছিলেন দেবদুলাল। কয়েকটি লিঙ্কে আঙুল ছোঁয়াতেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায় ৪৫ হাজার টাকা। লালবাজারে ছুটে বেড়ানোর মধ্যেই তিনি বললেন, ‘‘পুলিশ বলছে, এ সব করতে গিয়ে আমি নাকি এমন একটা অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করে ফেলেছি, যাতে আমার ফোনের দখল হ্যাকারের হাতে চলে গিয়েছে। খাওয়ানোর নামে এ ভাবে হাতসাফাই!’’
লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই যে কোনও উৎসবের নামে হাতসাফাইয়ের নতুন নতুন পন্থা বার করছে সাইবার প্রতারকেরা। কখনও খাবারের ‘অফার’ দেওয়া হচ্ছে, কখনও কম টাকায় বেড়াতে যাওয়ার নাম করে পাতা হচ্ছে প্রতারণার ফাঁদ। সেই সঙ্গেই রয়েছে বিশেষ দিনে ছাড়ের টোপে অনলাইনে পোশাক বা প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ। লালবাজার সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে নববর্ষের খাবারের নামে সব থেকে বেশি প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। ১৫ দিনে এমন ১২টি অভিযোগ এসেছে লালবাজারের সাইবার শাখায়। বিধাননগর এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেট মিলিয়ে এমন অভিযোগ ২৮টি। প্রায় সব ক’টি ক্ষেত্রেই হয় বর্ষবরণের ছাড়ের নামে পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করে অথবা ভুয়ো ওয়েবসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে অজান্তেই প্রতারিত ব্যক্তি তাঁর ফোনে বা কম্পিউটারে হ্যাকিং অ্যাপ নামিয়েছেন। এর পর ছাড় পেতে সামান্য কিছু টাকা তখনই দিয়ে দিতে খোয়া গিয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হাজার হাজার টাকা।
পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া, সিঁথির সঞ্জয় বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘খাবার আনানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে সংস্থা থেকে ফোন আসে। বলা হয়, ওই খাবারই আরও তিন প্লেট বিনামূল্যে পাওয়ার কথা। তারা জানাতে ভুলে গিয়েছে। তা পেতে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে ১০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। যা নাকি ফেরত দেওয়া হবে। টাকা পাঠানোর মিনিটখানেকের মধ্যেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮২ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়।’’ যাদবপুরের রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় নামে আর এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘নববর্ষে বন্ধুরা এক রকম টি-শার্ট পরব বলে নামী বহুজাতিক সংস্থায় ১২টি টি-শার্ট অর্ডার করি। সব ক’টি ৮০০ টাকায় পাওয়া যাবে বলা হয়। টি-শার্ট তো আসেইনি, বরং কিউআর কোড স্ক্যান করিয়ে ১৮৭০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, ওই কোডই আসলে টাকা হাতানোর পথ।’’
লালবাজারের সাইবার শাখার কর্তাদের পরামর্শ, যে কোনও ছাড়ের মেসেজ সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। কোনও সংস্থায় টাকা পাঠানোর আগে দেখে নিতে হবে, তাদের ওয়েবসাইট আদৌ বৈধ কি না। এ জন্য ওয়েবসাইটের ইউআরএল ভাল করে দেখতে হবে। প্রতারকেরা অনেক সময়েই অক্ষর অদলবদল করে ওয়েবসাইটের নাম নকল করে। সতর্ক হতে হবে সে ব্যাপারেও।
লালবাজারের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, কোনও ছাড়ই আকাশকুসম হতে পারে না। ভাল খাওয়ার ও খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত ঠিক আছে। এর বেশি অঙ্গীকার করলেই সতর্ক হোন। প্রতারিত হলে দ্রুত পুলিশে খবর দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy