(বাঁ দিক থেকে) আরফান, আরবাজ ও কৌসর।
ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ ফাঁকা উড়ালপুলে উদ্দাম গতিতে ছুটে চলা এক মোটরবাইকে সওয়ার তিন যুবক। কারও মাথাতেই ছিল না হেলমেট। তার মাসুল দিতে হল তিন জনকেই। উড়ালপুলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় মোটরবাইকটি। ছিটকে পড়ে তিন যুবক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। পরে হাসপাতালে মারা যায় আরও এক যুবক। বুধবার ভোরে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের ঘটনা।
পুলিশ জানায়, সবেবরাত উপলক্ষে ষোলো আনা কবরস্থানে যাওয়ার জন্য মোটরবাইকে রওনা হয়েছিল তিন যুবক। উড়ালপুলের মাঝামাঝি ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম শেখ আরফান শাম্স (১৮), আরবাজ আহমেদ (১৭) এবং কৌসর আলি (১৮)। সকলেরই বাড়ি কড়েয়া থানার চামরু খানসামা লেনে। বাইক চালাচ্ছিলেন আরফান। নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই এই দুর্ঘটনা, বলছে পুলিশ।
এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে ভোরের রাস্তায় ট্রাফিক নিরাপত্তা নিয়ে। পুলিশের বক্তব্য, এমনিতে সকাল ছ’টার আগে পর্যন্ত শহরে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। রাত ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত রাস্তার নজরদারি থাকে থানার পুলিশ অফিসার এবং টহলদারি বাহিনীর হাতে। ফলে, কোনও আরোহী হেলমেট পরেছেন কি না বা কোনও মোটরবাইক নিয়ম লঙ্ঘন করছে কি না, ওই সময়ে তা নজর রাখার কথা সংশ্লিষ্ট থানার অফিসারদের। কিন্তু মঙ্গলবার সবেবরাত থাকা সত্ত্বেও ওই এলাকায় ভোরে কোনও পুলিশ অফিসার ছিলেন না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বস্তুত, স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
কিন্তু রাতের দিকে হওয়া ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনেও শহরে পুলিশি নজরদারি নেই কেন? কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ ছিল। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ওই এলাকাতেও এ দিন ট্রাফিক পুলিশ ছিল।’’
ফের দিনের ডিউটি শুরু হওয়ার আগেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ওই কর্তা। ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘উড়ালপুলের উপরে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে না। তবে উড়ালপুলের মুখে পার্ক সার্কাসে ট্রাফিক পুলিশ ছিল। এ দিন পুলিশ চলে যাওয়ার পরেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ তিনি জানান, হেলমেট না পরা বা বেপরোয়া গাড়ি চালানো নজরে পড়লেই পুলিশ জরিমানা করে। এই ধরনের ঘটনা রুখতে শহরে অভিযানও চলে।
এ দিকে, এক সঙ্গে তিন তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। শেখ আরফান শাম্সের ভাই আরতাজা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে জাগার পরে ভোরবেলা দাদা মোটরবাইক নিয়ে বেরোয়।’’ পারিবারিক সূত্রে খবর, আরফান দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। সে ছোটখাটো কাজ করত। আর এক নিহত যুবক আরবাজের মা তাসনিম কৌসর বলেন, ‘‘ভোরে আরবাজ আমাকে তার মোবাইল রাখতে দিয়ে বলল, কবরস্থানে যাচ্ছি। কিন্তু ষোলো আনা কবরস্থানে যাবে জানলে যেতে দিতাম না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, আর এক যুবক কৌসর এ দিন ভোরে বন্ধুদের সঙ্গে নমাজ পড়ার পরে ঠিক করেছিল, সে-ও ষোলো আনা কবরস্থানে যাবে। কৌসর একাদশ শ্রেণিতে পড়ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy