ফাইল চিত্র।
রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন চার-পাঁচ জন। তাঁদের পিছনে বাঁশ হাতে তাড়া করেছেন শ’খানেক যুবক। প্রত্যেকেরই মুখ মাস্ক বা গামছায় ঢাকা। সামনের চার-পাঁচ জনকে লক্ষ্য করে উড়ে আসছে গালিগালাজ আর ইটের টুকরো। মঙ্গলবার রাতে এ জে সি বসু রোড এবং হসপিটাল রোডে ওই ভাবে যাঁরা দৌড়ে পালাচ্ছিলেন, তাঁরা কোনও অপরাধী বা দুষ্কৃতী নন। কলকাতা পুলিশের ডিসি (কমব্যাট ব্যাটেলিয়ন) নভেন্দ্র সিংহ পাল-সহ আরও কয়েক জন পুলিশকর্তা। পিছনে ধাওয়া করা যুবকেরা কমব্যাট ব্যাটেলিয়ন বা স্পেশ্যাল ফোর্সেরই সদস্য।
এর আগে রাজ্য পুলিশের ইএফআর কিংবা আইআরবি ব্যাটেলিয়নের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখালেও রাস্তায় নেমে এক জন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিককে এ ভাবে মারধর করার ঘটনা ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের একাধিক কর্তা। কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানায় ওসি হিসেবে কাজ করা এক প্রাক্তন পুলিশকর্তার মতে, ‘‘দাবিদাওয়া, অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে তা ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল। রাস্তায় নেমে অবরোধ কিংবা ডিসি-কে তাড়া করে মারধর করাটা পুলিশকর্মীদের কাজ হতে পারে না।’’
লালবাজার জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আপাতত বাহিনীর সদস্যদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, বাহিনীতে এ রকম গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা মেনে নেওয়া হলে আগামী দিনে ফের তা ঘটতে পারে। তাই বুধবার পিটিএস-এ গিয়ে প্রতিটি ইউনিটের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন শীর্ষ কর্তারা। যদিও কী নিয়ে কথা হয়েছে, তা কেউ জানাতে চাননি।
মঙ্গলবার যে ভাবে পুলিশকর্মীরা নিজেদের মুখের বেশির ভাগ অংশ গামছা বা মাস্কে ঢেকে ডিসি-কে মারধর করেছেন, তা পূর্ব-পরিকল্পিত হতে পারে বলেও অনুমান করছেন শীর্ষ কর্তারা। এ দিকে, ওই রাতে পিটিএস-এর বিক্ষোভকে সমর্থন করছেন বিভিন্ন থানার নিচুতলার কর্মীদের একাংশ। ওই রাতেই বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীদের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে সেই বিক্ষোভের ভিডিয়ো। নিচুতলার কর্মীদের অনেকেরই মতে, বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের একাংশের খারাপ ব্যবহারের কারণেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। না-হলে তাঁদের অবস্থা ঠিক কেমন, তা মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিনই জানতে পারতেন না।
পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘আমাদেরও সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। বাড়িতে পরিবারের সকলে রয়েছেন। বাজার থেকে হাসপাতাল, সর্বত্রই পাঠানো হচ্ছে আমাদের। অথচ, থানা থেকে মাত্র এক বারই মাস্ক আর গ্লাভস দেওয়া হয়েছিল। এখন নিজেদেরই সব কিনতে হচ্ছে।’’ প্রতিটি থানাকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে পুলিশকর্মীদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা পিপিই কিনতে। নিচুতলার কর্মীদের বক্তব্য, টাকা না দিয়ে জিনিসগুলি কিনে দেওয়া উচিত ছিল।
পুলিশকর্মীদের এই ক্ষোভের কথা অজানা নয় লালবাজারের কর্তা থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদের। তাই করোনা, লকডাউন এবং আমপানের এই পরিস্থিতিতে বাহিনীর সদস্যেরা যাতে কাজের উৎসাহ হারিয়ে না ফেলেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পিটিএস-এ গিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুলিশের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, আধিকারিককে নিগ্রহ করেও কি পার পেয়ে যাবেন পুলিশকর্মীরা? তা হলে আগামী দিনে বাহিনীর অন্যেরাও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে কী হবে?
অন্য দিকে, জখম ডিসি-র শরীরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাঁশের ঘায়ে মাথায় কেটে গিয়েছে তাঁর। এ দিন দুপুর পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখতে যান রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের একাধিক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy