Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Higher Secondary Exam

সব পুড়েছে, তবুও আজ পরীক্ষা দিতে যাবে বিকাশ

শনিবার রাত তখন আটটা-সাড়ে আটটা। ঢাকুরিয়া-সেলিমপুর রেললাইনের ধারের বস্তিতে কাজ সেরে তখন বাড়ি ফেরার পালা শুরু হয়েছে।

সবহারা: পোড়া ঝুপড়িতে নথির খোঁজে বিকাশ সর্দার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

সবহারা: পোড়া ঝুপড়িতে নথির খোঁজে বিকাশ সর্দার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৭
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে সেলিমপুরের ঝুপড়িতে ফিরলেও সন্ধ্যা নামার আগেই ব্যাগ নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যাধরপুরের বাড়িতে চলে গিয়েছিল বিকাশ সর্দার। ব্যাগ নিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যাওয়াই বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল ওই পরীক্ষার্থীকে। ফলে বই-খাতা পুড়ে গেলেও অক্ষত অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে সোমবার পরীক্ষায় বসতে পারবে সে।

শনিবার রাত তখন আটটা-সাড়ে আটটা। ঢাকুরিয়া-সেলিমপুর রেললাইনের ধারের বস্তিতে কাজ সেরে তখন বাড়ি ফেরার পালা শুরু হয়েছে। তেমনই কাজ ফেরত এক মহিলা দেখেন, পাশের ঝুপড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলেন, কেউ রান্না করছেন। ভুল ভাঙে কয়েক মিনিট পরে। বুঝতে পারেন, সেখানে আগুন লেগেছে। পাশের ঝুপড়িতে তখন শুধুই একটি ছেলে। দু’জনেই আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। কিন্তু বিকেলের পর থেকেই শুরু হওয়া হাওয়ায় কয়েক মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুনের হল্কা পাশের চারতলা ফ্ল্যাটেও ছড়িয়ে পড়ে।

তাতেই পুড়ে যায় বস্তির ১২-১৪টি ঝুপড়ি। যার মধ্যে ছিল বিকাশদের ঝুপড়িও। বাকি সব ক’টি ঝুপড়ির মতোই পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে তাদেরও সব কিছু। বিকাশের বাবা-মা বাঁচাতে পারেননি জমানো সঞ্চয়টুকুও। ছাই হয়ে গিয়েছে বিকাশের বইপত্র এবং যাবতীয় নোট। এমনকি মাধ্যমিকের মার্কশিট, সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে সব পরীক্ষার রেজাল্ট, স্কুলের পোশাকও। তবে ব্যাগে অ্যাডমিট কার্ড থাকায় সেটি বেঁচে গিয়েছে। যদিও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বাঁচাতে পারা যায়নি।

আজ, সোমবার তার বিজ়নেস স্টাডিজ়ের পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষা দেবে সে কী ভাবে? রবিবার বিকাশ জানাল, আগুনে সব পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েক জন তাকে বাকি পরীক্ষার কয়েকটি বই কিনে দিয়েছেন। তার কথায়, ‘‘নোটগুলি পুড়ে গেলেও বই পড়ে পরীক্ষা দিতে পারব।’’ বিকাশ দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলি বললেও তার মা অনিতার মুখে-চোখে তখনও আতঙ্ক। বারবার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে চলেছেন, ‘‘সত্যিই তোর অ্যাডমিট কার্ডটা ঠিক আছে তো?’’

যদিও পুলিশ এবং স্থানীয় কাউন্সিলর জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে গেলও বিকাশের পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধা হবে না। বিকাশ যে রামচন্দ্রপুর হাইস্কুলের পড়ুয়া, ইতিমধ্যেই সেখানকার প্রধান শিক্ষককে সব জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, আজ, পরীক্ষা কেন্দ্রে স্কুল থেকে তাঁদের লোক থাকবেন। বিকাশের পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধা হবে না।

বিকাশের পাশাপাশি বই-খাতা পুড়ে গিয়েছে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, দুই বোন পঞ্চমী ও পূর্ণিমা মণ্ডলের। তাদের দু’জনেরই বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। আজ কোনও পরীক্ষা না থাকলেও, আগামিকাল ইতিহাস পরীক্ষা। অথচ কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু দু’জনেরই সাহসী জবাব, ‘‘কিছু তো করার নেই। এত দিনের প্রস্তুতি যা রয়েছে, তা নিয়েই পরীক্ষায় বসব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Exam Fire Dhakuria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy