উত্তর কলকাতার অলিগলি দিয়ে এঁকেবেঁকে দ্রুত গতিতে ছুটছে কালো রঙা একটি মোটরবাইক। পিছনে পাল্লা দিয়ে ধাওয়া করছে আর একটি মোটরবাইক। বৃহস্পতিবার সকালে এই দৃশ্য দেখে প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন, বোধহয় ‘ধুম’-এর মতো কোনও বলিউডি ছবির শ্যুটিং চলছে!
ভুলটা ভাঙল মিনিট কুড়ি পরে। যখন বড়তলা থানার কিছুটা দূরে গলির রাস্তা জুড়ে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে সংর্ঘষ এড়াতে মাঝরাস্তায় মোটরবাইক ফেলেই ছুট দিলেন সামনের বাইকের চালক ও আরোহী। ততক্ষণে পিছনের বাইকে থাকা যুবক ‘চোর চোর’ চিৎকার জুড়ে দিয়েছেন। তা শুনে টহলদার পুলিশকর্মীরা কিছুটা দৌড়েই ধরে ফেললেন পলাতকদের। আর তার পরেই জানা গেল আসল ঘটনা।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম মোটরবাইকটিতে ছিল দুই ছিনতাইবাজ। এ দিন সকালে প্রথমে কাশীপুর উদ্যানবাটীর কাছে এবং পরে জোড়াবাগান থানা এলাকার কোম্পানি বাগানে দুই মহিলার গলার হার ছিনতাই করে তারা। তাদের পালাতে দেখেই পিছনে বাইক নিয়ে ধাওয়া করেন কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা বিনীত কয়াল নামে এক যুবক। তাঁরই তৎপরতা ও সাহসিকতায় ওই দুই ছিনতাইবাজ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরা পড়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সৈয়দ মিরাজ এবং ওয়াহেদ হোসেন। দু’জনেরই বাড়ি মেটিয়াবুরুজে। মোটরবাইকটি সৈয়দের এবং ওয়াহেব বন্দর এলাকায় গাড়ি চালায়। ধৃতদের থেকে ছিনতাই হওয়া দু’টি সোনার হার উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, দু’টি ছিনতাইয়ের কথাই কবুল করেছে ধৃতেরা।
অপরাধের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হলেও দিনের বেলা পরপর দু’জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা শহরের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। লালবাজারের কর্তারা বারবার দাবি করেন, শহরের সর্বত্র সাদা পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি টহলরত পুলিশ রয়েছে। কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে সেই সব নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাতসকালে প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে দুষ্কৃতীদের মোটরবাইককে তাড়া করল অন্য একটি বাইক। তবু রাস্তায় কোথাও পুলিশের সাহায্য মিলল না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশেরই নিচুতলার কর্মীদের একাংশ।
তদন্তকারীরা জানান, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ বড়বাজারের বাঁশতলার বাসিন্দা পুনম শর্মা এবং সরলা শর্মা ছেলে-মেয়েদের স্কুলের গাড়িতে তুলে দিয়ে কোম্পানি বাগানের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই পিছন থেকে আসা একটি মোটরবাইকের আরোহী যুবক পুনমের গলার হার ছিনিয়ে বিডন স্ট্রিটের দিকে পালায়। বড়তলা থানার সামনে দাঁড়িয়ে পুনমদেবী জানান, গলা থেকে হার ছিনতাই হলে চিৎকার শুরু করেন তিনি। ওই সময়েই তাঁদের পিছনে থাকা অন্য একটি মোটরবাইকে আর এক যুবক ছিনতাইবাজদের ধাওয়া করে। পুনমদেবী জানান, তিনিও সরলাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে অটোয় চেপে বাইকের পিছনে রওনা দেন। তবে কিছু দূর গিয়ে আর বাইকটির হদিস পাননি। পরে ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুরো ঘটনা জানান তাঁরা। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই মহিলার অভিযোগ পেয়েই উত্তর কলকাতার সব থানা ও ট্রাফিক গার্ডকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য বিনীতের তৎপরতায় ধরা পড়ে যায় ছিনতাইবাজেরা।
বিনীত জানান, এ দিন সকালে ভূতনাথ মন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। যাওয়ার পথে হার ছিনতাই হতে দেখে দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন তিনি। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে জো়ড়াবাগান, শ্যামবাজার-সহ উত্তর কলকাতার বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে বড়তলা থানার সামনে ক্ষুদিরাম বসু সরণিতে একটি বাসের মুখোমুখি পড়ে যায় দুষ্কৃতীদের মোটরবাইকটি। নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে রাস্তায় উল্টে পড়ে ছিনতাইবাজরা। বিনীতের দাবি, রাস্তায় বাইক ফেলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি চিৎকার শুরু করেন। তাতেই টহলরত দুই পুলিশকর্মী ওই দু’জনকে ধরে ফেলে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, থানার কিছুটা দূরে ডিউটি করছিলেন বড়তলা থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ার মনোজ মিশ্র এবং জাভেদ আলম। ‘চোর চোর’ চিৎকার এবং দু’জনকে দৌড়ে আসতে দেখে তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন দু’জনে। চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন থানার ডিউটি অফিসার প্রতাপ কুণ্ডুও। ঘটনাস্থলেই ওই দুষ্কৃতীদের তল্লাশি করে একটি সোনার হার উদ্ধার হয়। লালবাজার সূত্রে খবর, জোড়াবাগানের আগে কাশীপুর উদ্যানবাটির সামনে পৃথা পাল নামে আর এক মহিলার হারও ছিনতাই করেছিল ওই দুষ্কৃতীরা। সেখানে থেকেই সোজা তারা জোড়াবাগানে পৌঁছয়। সেখানেই পুনমদেবীর হার ছিনতাইয়ের পরে একটি মোটরবাইক তাদের তাড়া করছে দেখে পালাতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলে ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় কাশীপুরের ছিনতাইয়ের কথা প্রথমে স্বীকার করেনি দুই দুষ্কৃতী। পরে থানার পিছনে একটি জায়গায় পরিত্যক্ত সিগারেটের প্যাকেট থেকে উদ্ধার হয় আর একটি সোনার হার। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, দুষ্কৃতীরা হারটিকে ওই প্যাকেটে ভরে শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে সেখানকার জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পুলিশকর্মীদের বুদ্ধিমত্তায় তা উদ্ধার হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। এর পরে কাশীপুরের ছিনতাইও কবুল করে ধৃতেরা।
অঙ্কন: অশোক মল্লিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy