৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ শহরের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ কর্মসূচি। — ফাইল চিত্র।
কোথাও রাজনৈতিক মিছিল বা সভার জেরে নাজেহাল পরিস্থিতি। কোথাও স্কুল শুরুর আর ছুটির সময়ে যান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কালঘাম ছোটে ট্র্যাফিক পুলিশের। কোথাও আবার একসঙ্গে দু’-তিনটি লোকাল ট্রেন স্টেশনে ঢুকলে ভিড় সামলানো রীতিমতো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। বহু জায়গায় দিনভর যেমন খুশি রাস্তা পারাপার চলতেই থাকে। সেতুর উপর দিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ হলেও সেই বিধি মানেন না প্রায় কেউই। বার বার ঘোষণা এবং জরিমানা করেও দুর্ঘটনায় লাগাম পরানো যায় না।
চলতি বছরে ট্র্যাফিক গার্ড ধরে ধরে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে চাইছে লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগ। পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে, ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ শহরের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ কর্মসূচি। আর তা ঘিরেই একাধিক পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। লালবাজারের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের পরিকল্পনা করার পাশাপাশি, শহরের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডকেও নিজেদের মতো করে কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে যা ভাবা হচ্ছে, তাতে লাগামহীন হর্নের ব্যবহার এবং দূষণ নিয়ে আলাদা পদক্ষেপ করা হবে। সেই সঙ্গেই থাকছে গতি নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা আরও কতটা কমিয়ে ফেলে যায়, সেই বিষয়টিও।’’
ট্র্যাফিক গার্ড সূত্রের খবর, এই এক সপ্তাহ ধরে স্কুলপড়ুয়া, অভিভাবক এবং চিকিৎসকদের নিয়ে একাধিক কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে তারা। সেই সঙ্গে যে সমস্ত ট্র্যাফিক গার্ডে সমস্যা বেশি, সেগুলিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। যেমন, হাওড়া সেতু ট্র্যাফিক গার্ডের বড় সমস্যা হল, সেখানে দিনভর রাস্তা দিয়ে ট্র্যাফিক বিধি না মেনেই বেপরোয়া হাঁটাচলা (জে-ওয়াকিং) করা হয়। এ ক্ষেত্রে জে-ওয়াকিংয়ের মামলা করতে হয় কলকাতা পুলিশ আইনের ৬৬ নম্বর ধারায়, যাতে জরিমানা মাত্র ১০-৫০ টাকা। কিন্তু ঘোষণা বা জরিমানার পরেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। এই ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত হাওড়া সেতুতে একাধিক বার এমন হাঁটাহাঁটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই স্থির হয়েছে, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে এমন বিধিভঙ্গকারীদের হাতেই প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে দিয়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করানো হবে। শেষে তাঁদের গোলাপ দেওয়ারও চিন্তাভাবনা রয়েছে।
শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডে ট্রেনই হল চিন্তার কারণ। সকালে ও অফিস ছুটির সময়ে একাধিক ট্রেন স্টেশনে একসঙ্গে ঢুকলে যান নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পথে নেমে আসা মানুষ এবং বেপরোয়া গাড়ির জেরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ওই ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে ট্রেনযাত্রী ও শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকা-বেরোনোর গাড়িগুলিকে আলাদা করে সতর্ক করার ভাবনাচিন্তা হয়েছে। অটোচালক ও স্কুলপড়ুয়াদের নিয়েও অন্য রকমের কর্মসূচির কথা ভেবেছে রিজেন্ট পার্ক ট্র্যাফিক গার্ড। শ্যামবাজার ও উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের আবার চিন্তার মূলে রাতের লরি। তাই লরিচালকদের নিয়ে কর্মসূচির কথা ভাবনাচিন্তা চলছে দু’জায়গায়।
তবে, এ বছরের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে সব চেয়ে বেশি আলোচনা চলছে বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ড ঘিরে। মূলত চিংড়িঘাটা উড়ালপুলের একাধিক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সেখানে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ এবং পথচারীদের নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার করানোই মূল চ্যালেঞ্জ। ওই গার্ডের এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘চিংড়িঘাটা মোড়ে দুর্ঘটনা আটকানোই নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ। গত দু’মাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিয়ম মেনে চলে, এমন গাড়ি ধরে সেগুলির চালকদের পুরস্কৃত করা যায় কি না, তা-ও দেখছি। জরিমানা, শাস্তিতেও কাজ হচ্ছে না। পুরস্কার দিয়ে যদি হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy