Advertisement
E-Paper

বেহালার দুই স্কুলে তালা ভেঙে চুরি, প্রশ্নে নিরাপত্তার অভাব

দু’টি স্কুলেরই আলমারি ভেঙে লন্ডভন্ড করা হয়েছে ফাইলপত্র। চুরি গিয়েছে নগদ টাকা। গ্রামাঞ্চলের নির্জন এলাকায় মাঝেমধ্যে স্কুলে চুরির ঘটনা ঘটে।

ফাইল চুরি গিয়েছে কিনা, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

ফাইল চুরি গিয়েছে কিনা, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। —প্রতীকী চিত্র।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৫
Share
Save

খাস কলকাতার বেহালায় পর পর দু’রাতে দু’টি স্কুলে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটল। গত শনিবার রাতে চুরি হয়েছে বেহালার বাণীতীর্থ গার্লস হাইস্কুলে। আর রবিবার রাতে চুরি হয়েছে বেহালার জগৎপুরের রুক্মিণী বিদ্যামন্দিরে। দু’টি স্কুলেরই আলমারি ভেঙে লন্ডভন্ড করা হয়েছে ফাইলপত্র। চুরি গিয়েছে নগদ টাকা। গ্রামাঞ্চলের নির্জন এলাকায় মাঝেমধ্যে স্কুলে চুরির ঘটনা ঘটে। কিন্তু খাস কলকাতায় এই ভাবে পর পর চুরির ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি বলেই শিক্ষকদের দাবি। তাঁরা জানান, বহু দিন ধরেই তাঁরা স্কুলে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছেন। সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্যও বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রস্তাবই মানা হয়নি।

বাণীতীর্থ গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুল থেকে নগদ প্রায় ১২ হাজার টাকা চুরি গিয়েছে। স্কুলের সাতটি আলমারি তছনছ করা হয়েছে। প্রধান দরজার তালা তো ভাঙা হয়েছেই, সেই সঙ্গে অফিস এবং প্রধান শিক্ষিকার ঘরের তালাও ভাঙা হয়েছে। ফাইল চুরি গিয়েছে কিনা, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। রুক্মিণী বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক মেহেদি হাসান জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুল থেকে নগদ ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা চুরি গিয়েছে। আলমারি তছনছ করা হয়েছে। মেহেদি বলেন, ‘‘নিজেদের খরচে দারোয়ান নিয়োগ করেছিলাম। তিনি ছুটিতে ছিলেন।’’

শহরের বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরাই জানাচ্ছেন, এখন স্কুলে সরকারি নানা প্রকল্প চলে। সেই সব প্রকল্পের জরুরি নথিপত্র স্কুলেই রাখা থাকে। তা ছাড়া, স্কুলে থাকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাবরেটরির দামি জিনিসপত্র। নগদ টাকাও রাখা থাকে আলমারিতে। সব কিছু অরক্ষিত অবস্থায় রেখেই স্কুল ছুটির পরে তালা দিয়ে শিক্ষকদের বাড়ি চলে যেতে হয়।

নারায়ণদাস বাঙুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বললেন, ‘‘সরকার-পোষিত, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালাতেই হিমশিম অবস্থা হয়। স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা সম্ভব নয়। এক জন রক্ষী নিয়োগ করতেই মাসে অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ। এই খরচ সব স্কুল দিতে পারে না। এক সময়ে গ্রুপ ডি-তে নিরাপত্তারক্ষী, সাফাইকর্মী, কেয়ারটেকার নিয়োগ করা হত। এখন আর নিরাপত্তারক্ষী, সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয় না। আমরা ফের গ্রুপ ডি-তে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’’ সঞ্জয় জানান, তাঁদের স্কুলে দারোয়ান নেই। সিসি ক্যামেরা আছে।

তবে, প্রতিটি স্কুলের পক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব নয়। যেমন, বাণীতীর্থ গার্লস হাইস্কুলের তরফে শর্মিষ্ঠা জানান, তাঁদের স্কুলে মাধ্যমিকের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরে সেগুলি খুলে ফেলা হয়েছে। শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘গোটা স্কুলে স্থায়ী ভাবে সিসি ক্যামেরা লাগানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি এই স্কুলের নেই। মাসিক বেতনের রক্ষী রাখাও সম্ভব নয়।’’

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতার বহু স্কুলেই জায়গার অভাবে পাঁচিল দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই সব স্কুল আরও বেশি অরক্ষিত। এমনই একটি স্কুল উত্তর কলকাতার দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে জায়গার অভাবে পাঁচিল তোলা সম্ভব হয়নি। পিছন দিকের একটি ছোট অংশে পাঁচিল রয়েছে। স্কুলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে ঠিকই, তবে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে পারলে সব থেকে ভাল হত। কিন্তু সেই সামর্থ্য আমাদের নেই। এই বিষয়ে শিক্ষা দফতরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’

শিক্ষক নেতা তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর পূর্ণ সময়ের জন্য না-হলেও আংশিক সময়ের নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ তো করতেই পারে। শিক্ষা দফতরের বহু পদে আংশিক সময়ের কর্মী দিয়ে কাজ চলছে। স্কুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অন্তত আংশিক সময়ের রক্ষী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Behala Schools

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}