Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Newtown

বহু ভাড়াটের তথ্যই নেই, ক্ষোভে ফুঁসছে আবাসন

আবাসনের তিনটি গেট ও কয়েকটি মাত্র ভবনে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। নজরদারি ওইটুকুই।

ফাঁকা: নিউ টাউনের সেই আবাসন চত্বরে লোকজন নেই। বৃহস্পতিবার।

ফাঁকা: নিউ টাউনের সেই আবাসন চত্বরে লোকজন নেই। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

নিউ টাউনের আবাসনে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে পঞ্জাবের দুই সমাজবিরোধীর মৃত্যুর ঘটনায় নড়াচড়া শুরু হয়েছে সব মহলেই।

বৃহস্পতিবার ওই আবাসনে ঢুকতেই দেখা গেল, নিরাপত্তারক্ষীরা প্রতিটি গাড়ির নম্বর লিপিবদ্ধ করছেন। কে কার কাছে যাচ্ছেন, তা-ও লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু, গাড়ি তল্লাশি বলতে যা বোঝায়, তার নামগন্ধও নেই।

আবাসনের তিনটি গেট ও কয়েকটি মাত্র ভবনে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। নজরদারি ওইটুকুই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিরাপত্তা ও নজরদারিতে বিস্তর ফাঁক রয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাকে বার বার জানিয়েও সুরাহা হয়নি।

কুড়ি হাজারেরও বেশি ফ্ল্যাট ওই আবাসনে। আট হাজারের বেশি ফ্ল্যাটে লোকজন রয়েছেন। অধিকাংশই ভাড়াটে। যাঁদের সম্পর্কে কোনও তথ্য অন্য বাসিন্দাদের কাছে নেই। তিন ধরনের ফ্ল্যাট রয়েছে।

এক-এক ধরনের ফ্ল্যাটের জন্য আলাদা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমিটি রয়েছে। কিন্তু সব ধরনের ফ্ল্যাট মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কোনও সংগঠন নেই। এমন অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে গেলে ৮০ শতাংশ বাসিন্দার সম্পর্কে তথ্য জানা প্রয়োজন। সেই তথ্য রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার কাছে রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, চাইলেও তারা সেই তথ্য দেয় না।

ফলে আবাসনে কারা থাকছেন, কারা যাতায়াত করছেন, সে বিষয়ে অন্ধকারে বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই আবাসনে ছিঁচকে চুরি থেকে গোলমাল, বহিরাগতদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। ভিন্ রাজ্যের পুলিশ এসে ভাড়াটেদের গ্রেফতার করেছে, এমন ঘটনাও একাধিক বার ঘটেছে।

বাসিন্দারা জানান, ২০১৮ সালে পঞ্জাবের দুই তরুণ-তরুণী একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। মাঝেমধ্যেই তাঁদের বাড়িতে পার্টি হত। এক বার বছর শেষের পার্টির প্রবল দাপাদাপি সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলেন বাসিন্দারা। যার জেরে তাঁদের মার খেতে হয়েছিল। পরে পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

ওই আবাসনের একটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মৈনাক কাঁড়ারের বক্তব্য, ‘‘ওই দুই অপরাধীর সঙ্গে পুলিশের যে গুলির লড়াই হল, তাতে তো কোনও বাসিন্দাও মারা যেতে পারতেন। আমাদের দাবি, ভাড়াটেদের তথ্য অবিলম্বে যাচাই করে দেখা হোক। রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কিংবা স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্ব নিক।’’

অন্য একটি কমিটির কর্তা সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বহিরাগতদের আনাগোনা সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা। একাধিক অপরাধের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের আনাগোনাও লেগেই আছে। পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, প্রতিটি শিফটে প্রায় ১০০ জন রক্ষী সেখানে নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন।

পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টার যে ফ্ল্যাটে ছিল, সেটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল অন্য এক জনের নামে। যে দালালের মাধ্যমে তা নেওয়া হয়, সেই সুশান্ত সাহা জানান, ওই আবাসনে কেউ ফ্ল্যাট ভাড়া নিলে প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিচয়পত্র নিয়ে চুক্তিপত্র তৈরি করে পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশি যাচাইয়ের পরেই চাবি হস্তান্তরিত হয়।

গোটা নিউ টাউন জুড়েই ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ দেশের বহু মানুষ ভাড়ায় থাকেন। পুলিশ বলছে, চুক্তিপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি জমা দিলে তবেই তা যাচাই করা হয়। কিন্তু সে তথ্য জমা না দিলে কে কোথায় ভাড়া আছেন, জানা মুশকিল। হিডকো এবং এনকেডিএ সূত্রের খবর, সম্পত্তিকর আদায়ের প্রক্রিয়ায় ক’টি বাড়িতে ভাড়াটে আছে আর ক’টি বাড়িতে নেই, সেই তথ্য মেলে। কিন্তু তা গোপনও করেন অনেকে।

অতএব, নিউ টাউনে বহিরাগতদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য প্রশাসনের কাছে নেই। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতির সুযোগে নাশকতামূলক কাজকর্ম ঘটানো খুব সহজ। বুধবারের ঘটনা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।

পুলিশের এক কর্তার দাবি, স্থানীয় হোটেল ও অতিথিশালাগুলিতে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হয়। ভাড়াটেদের তথ্য জমা পড়লে যাচাইও করা হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা তদন্তে দেখা হচ্ছে। আগামী দিনে সমস্যা সমাধানে নিশ্চিত ভাবে পদক্ষেপ করা হবে। ওই আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

residence Newtown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy