দুঃসাহসী: দেশে নতুন করে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। কিন্তু জনগণের বড় অংশ মাস্ক পরা নিয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এক্সাইড মোড়ের ছবি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র ভারতে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজারের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। আতঙ্কের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে মহারাষ্ট্র এবং কেরলের বর্তমান পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনগণের মধ্যে দূরত্ব-বিধি না মানা, মাস্ক না পরার প্রবণতা। কিছু জায়গায় তো আবার লকডাউন করার পথে হাঁটছে মহারাষ্ট্র সরকার। শুক্রবার থেকেই নিয়োগ করা হয়েছে ‘মার্শাল’। মাস্ক ছাড়া দেখা গেলেই সেখানে কম করে ২০০ টাকা জরিমানার কড়াকড়ি করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা কিংবা পশ্চিমবঙ্গ কোন পথে এগোবে?
গণপরিবহণ থেকে অফিসপাড়া, বাজার থেকে শপিং মল— রোজই মাস্কবিহীন জনতার ভিড় বেড়ে চলেছে। যদিও কলকাতা পুলিশ এখনও সেই ‘ধীরে চলো’ নীতিকেই আঁকড়ে থাকতে চাইছে। লকডাউন বা তার পরবর্তী কয়েক মাসের মতো মাস্ক পরানোর বিধি কার্যকর করতে সে রকম পুলিশি সক্রিয়তা কোথাওই দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। রোজই লালবাজারের তরফে মাস্ক না পরার জন্য দিনে কত জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই তথ্য নিয়ম করে জানানো হলেও কোনও ক্ষেত্রেই জরিমানা করার কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন কড়া না হলে যেখানে কোনও রকম করোনা-বিধি পালনের দায়বদ্ধতা দেখা যায় না, সেখানে জরিমানা না হওয়ার এই ‘ছাড়ই’ কি তবে আরও বেপরোয়া করে তুলছে মাস্কহীন জনতাকে?
শনিবারই অফিসের সময়ে ভিড়ে ঠাসা বাসে মাস্কহীন মাঝবয়সির কাছে প্রশ্ন ছিল, পুলিশ ধরলে কী করবেন?
শুভ্র দে নামের ওই ব্যক্তি বললেন, “মাস্ক না পরার জন্য পুলিশ এখন আর ধরে বলে তো শুনিনি। পুজোর সময়ে এক দিন অবশ্য আমাকে ধরেছিল। বলল, জরিমানা দিতে হবে না। স্রেফ ছবি তুলে মাস্ক হাতে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই ছবি নাকি পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে দিতে হয়।”
গড়িয়াহাট বাজারে শনিবারের কেনাকাটায় ব্যস্ত শ্রীরূপা কর্মকার নামে এক মহিলার আবার মন্তব্য, “মাস্ক আর লাগে না। করোনার সময়ে জনসংযোগ হিসেবে পুলিশ মাস্ক দিত, এখন অন্য ভাবে জনসংযোগ হচ্ছে।” পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বামী সুনীল কর্মকারের দাবি, “ধরলে শুধু নাম লিখে নিয়ে মাস্ক দিয়ে পুলিশ ছেড়ে দেয়। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় থাকলে আমরা কেন, সকলেই মাস্ক পরে আসবেন।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহামারি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সব কমিশনারেট এলাকার কমিশনারদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। অনুজ শর্মা কলকাতা পুলিশের কমিশনার থাকাকালীন একটি নির্দেশিকা জারি করেন। সেখানে প্রকাশ্যে থুতু ফেলার মতোই মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বেরোলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট এলাকায় পালন হওয়া বাধ্যতামূলক।
কলকাতার ক্ষেত্রে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলে প্রথমে সতর্ক করার কথা পুলিশের। এর পরে কলকাতা পুলিশ আইনের ৬২বি বা ৬৬ নম্বর ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ১০০ টাকা বা তারও বেশি জরিমানা হতে পারে মাস্কহীন ব্যক্তির। কিন্তু চলতি মাসে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স-ডে থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজো পার করে শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন করে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাস্ক না পরার কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও কোনও ক্ষেত্রেই জরিমানা করার কথা বলা হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র খাতায়কলমে। যদিও কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানই লালবাজার থেকে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) ও নবান্নে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা।
যা শুনে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “আইনের শাসনকেই তো দেখি শুধু ভয় পাওয়া হয় এখন। কড়াকড়ি না থাকলেই সব সচেতনতা উধাও হয়ে যায়। সেটা যদিও হওয়ার কথা নয়। তবু বলব, যদি পুলিশ-প্রশাসন আরও একটু কড়া হলে কাজ হয়, তা হলে সকলের ভালর জন্য সেটাই হতে হবে।”
চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, “অন্তত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রশাসনের সব স্তরেরই কড়া হওয়া দরকার। আমরা চিকিৎসকেরা বার বার বলেও তো কাজ হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হলে যদি মানুষের একটু হুঁশ ফেরে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy