—প্রতীকী চিত্র।
প্লাস্টিক বর্জনে গোটা রাজ্যের মধ্যে এক সময়ে অন্যতম মডেল হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীন বাঙুর। আজও সেখানে সেই ধারাই চলছে। তবে প্লাস্টিক বর্জনের এই সদিচ্ছা সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে বাঙুরেই। দমদমের তিন পুরসভা এলাকায় সর্বত্র সেই মডেল অনুসরণ করার চেষ্টা হলেও সে ভাবে সাফল্য আসেনি। লাগাতার সচেতনতার প্রচার, প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকায় নজরদারি থেকে শুরু করে জরিমানা আদায়ের কাজ হলেও এখনও প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহারে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ আসেনি। উত্তর দমদমে ছবিটা অনেকটা উজ্জ্বল হলেও আরও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। অন্তত তিন পুরসভার বিভিন্ন বাজার এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গার ছবি তেমনটাই বলছে। চলতি বছরে নিকাশি নালা সাফ করতে গিয়েও তিন পুর কর্তৃপক্ষের তেমনই উপলব্ধি।
ওই তিন পুরসভা সূত্রের খবর, বাজার এলাকাগুলিতে আগের তুলনায় ১২০ মাইক্রনের থেকে কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার কমেছে। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ঠিক একই ভাবে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে খাবার সরবরাহের ব্যবসায় প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক মিলছে। কোথাও কোথাও প্লাস্টিকের জমে থাকার জেরে নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হওয়ার মত অবস্থাও হয়েছে।
উত্তর দমদম পুরসভা ইতিমধ্যে বর্জ্য পৃথকীকরণে বিশেষ সাফল্য লাভ করেছে। পৃথক ভাবে পুজোর ফুল, বেলপাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সূত্রেই সরকারি নির্দেশিকা মোতাবেক প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রী নিয়ন্ত্রণেও পদক্ষেপ করেছে পুরসভা। তাদের দাবি, প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে নজরদারি থেকে শুরু করে জরিমানা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস জানান, ব্যবসায়ী থেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ হচ্ছে। তবে তাঁদের সাড়া মিললেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মত পুরসভার।
একই ভাবে সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট জানান, প্লাস্টিক বর্জনে পুরসভা একান্ত ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আশানুরূপ সাড়া এখনও মেলেনি। সেখানেও নিকাশি নালা সাফ করতে গিয়ে মিলছে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক। যদিও বাসিন্দাদের বড় অংশের দাবি, পার্শ্বস্থ বিভিন্ন পুর এলাকায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি পুর এলাকায় এই কাজ পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাই সমস্ত জায়গায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে হলে তার উৎপাদন বন্ধ করা আগে জরুরি। পাশাপাশি বাসিন্দাদের দাবি, বিকল্প সামগ্রীর জোগানও বাজারে থাকা প্রয়োজন।
সেখানেই প্রশ্ন ওঠে যে, একই সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়েও বাঙুর এলাকায় কী ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে পারছেন বাসিন্দারা? এক সময় দক্ষিণ দমদমের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্লাস্টিক বর্জনে সফল হয়েছিল বাঙুর। সেখানে এই বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি এবং তৎপরতা চোখে পড়ে। বর্তমানে স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি বনশ্রী চট্টোপাধ্যায় জানান, প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দারাও সাড়া দিয়েছেন তাতে। সেই কারণেই সাফল্য এসেছে। কোনও সময় প্লাস্টিক ব্যবহারের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।
দমদমের অন্যান্য এলাকায় বাঙুর মডেল কেন অনুসরণ করা যাচ্ছে না?
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ সঞ্জয় দাসের দাবি, বাঙুর এলাকার সব স্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। পুরসভার বাকি এলাকায় এখনও সেই অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। পুরসভা এলাকার মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও লাগোয়া অন্যান্য পুর এলাকা থেকে প্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। তবুও প্রচার থেকে শুরু করে নজরদারিতে জোর বাড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy