Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
pet dog

Cemetary: কবরস্থান অপ্রতুল, পোষ্য-মৃত্যুতে ভোগান্তি

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১২ সালে কেন্দ্রের পশুসুমারি অনুযায়ী, কলকাতায় পোষ্য কুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরসভা থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সারমেয়র সংখ্যা ছিল ৩৪৫টি।

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৪
Share: Save:

হঠাৎ রক্তবমি শুরু হয়েছিল ‘সন্দেশ’-এর। একের পর এক চিকিৎসককে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। অভিযোগ, বেশির ভাগ চিকিৎসকই জানান, করোনার মধ্যে বাড়ি গিয়ে রোগী দেখছেন না। সল্টলেকের এক বাসিন্দার আদরের পোষ্য সন্দেশ অবশ্য কোনও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো সময়টুকুও দেয়নি। রাতেই মৃত্যু হয় তার।
এর পরে শুরু হয় আর এক সমস্যা। মৃত পোষ্যকে কোথায় কবর দেওয়া হবে, তা নিয়ে রাতভর চলে টানাপড়েন। অভিযোগ,
পোষ্যকে কবর দেওয়ার সরকারি কেন্দ্রে ফোন করলে জানানো হয়, রাতে কিছু করা সম্ভব নয়। পরের দিন রবিবারেও কিছু করা যাবে না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি জায়গায় খোঁজ করতে গিয়ে খরচ শুনে কার্যত মাথায় হাত পড়ে ওই পরিবারের। অভিযোগ, বিশাল অঙ্কের টাকা হাঁকা হয় সেই সব জায়গা থেকে। শেষে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার কবরস্থানে শেষ আশ্রয় পায় সন্দেশ। পোষ্যের মৃত্যুর পরে এমন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকেরই। তাঁদের অভিযোগ, শহরে পোষ্যের সংখ্যা বাড়লেও সেই হারে তাদের জন্য হাসপাতাল বা কবরস্থান নেই। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১২ সালে কেন্দ্রের পশুসুমারি অনুযায়ী, কলকাতায় পোষ্য কুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরসভা থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সারমেয়র সংখ্যা ছিল ৩৪৫টি। পুরসভা জানিয়েছে, বর্তমানে শহরে পোষ্য রয়েছে কমপক্ষে ৪০ হাজার। অথচ, পুরসভার খাতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত সারমেয়র সংখ্যা মাত্র ৮০। তাদের জন্য চিকিৎসা বা কবরস্থান— কোনও কিছুরই পরিকাঠামো তেমন নেই শহরে। ফলে হয়রানি বাড়ছে পোষ্যের অভিভাবকদের।

সূত্রের খবর, কলকাতা পুর এলাকায় শুধুমাত্র বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই সরকারি ভাবে পোষ্যদের কবর দেওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আগে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কবর দেওয়া গেলেও কোভিড-কালে সেই সময়সীমা কমে দাঁড়িয়েছে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। খরচ ২৫০০ টাকা। সেই সঙ্গে কিনে দিতে হয় দশ বস্তা নুন। পোষ্যকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে নিউ টাউনেও। হিডকো-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘নিউ টাউন
অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-র কাছে এক একর জায়গায় ২৪ ঘণ্টা পোষ্যদের কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’’ এখানেও খরচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু অভিযোগ, কোনও সরকারি জায়গাতেই রাতের জরুরি সময়ে পরিষেবা মেলে না। তাই রাতবিরেতে ছুটতে হয় ঠাকুরপুকুরের কাছে একটি বেসরকারি সংস্থার কবরস্থানে। সেখানে খাতায়কলমে খরচ এক থেকে দেড় হাজার টাকা হলেও পরিস্থিতি বুঝে অতিরিক্ত টাকাও চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই সংস্থার তরফে বাসবী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শুধু আমরাই ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’ কিন্তু বাকিদের পরিষেবার এই হাল কেন? বেলগাছিয়া ভেটেরিনারি ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রুদ্রদেব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রাতে বেলগাছিয়ায় শিয়ালের অত্যাচার চলে, কাজ করা যায় না। লোকবলেরও অভাব রয়েছে। দু’জন কর্মী করোনায় মারা গিয়েছেন।’’

পশুপ্রেমী তথা অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়ের আফশোস, ‘‘আসলে পোষ্যদের প্রতি আমরা কতটা সদয় হতে পেরেছি, শহরে ওদের চিকিৎসা বা কবরস্থানের পরিকাঠামোর অভাবই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। পুরসভার কাছে আবেদন, অবিলম্বে মৃত পোষ্যদের কবর দেওয়ার জায়গা চিহ্নিত করা হোক।’’
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় সমস্যা। ধাপায় মৃত পোষ্যদের নতুন কবরস্থান তৈরির বিষয়ে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

pet dog Bengal Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy