—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সওয়া কোটি দর্শকের ভিড়, ২৭ কোটি টাকার বই বিক্রির দাবি। বছর বছর কলকাতা বইমেলা সের্গেই বুবকার মতো নিজের রেকর্ড ভাঙছে। এ গ্রহের জনপ্রিয়তম বইমেলা নিয়ে গর্বের শেষ নেই আয়োজকদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রকাশনাকে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু বাংলা বইয়ের স্বত্ব বিশ্ববাজারে মেলে ধরার ক্ষেত্রে এত বড় বইমেলার ভূমিকা কার্যত শূন্য। ২০২৪-এও সেই ধারা অটুট থাকল।
“বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের চিলতে অংশে ফ্লেমিশ ভাষা থেকে যা বিপুল অনুবাদ হয়, সেটুকুই বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষা মিলিয়ে অনুবাদ সাহিত্যকে টেক্কা দেবে”— এই বইমেলাতেই আফশোস করছিলেন ব্রিটিশ লেখক, সম্পাদক, অনুবাদক ড্যানিয়েল হান। দিল্লি, রাজস্থান, চেন্নাই, মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কোচি, ওড়িশা, গুয়াহাটি এবং কলকাতাকে নিয়ে ভারতে প্রকাশনা শিল্প বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, এ দেশে লেখক, প্রকাশকের মধ্যে চুক্তির রীতিই বিরল। ফলে, ভাল বই ভাষান্তরের স্বত্ব বিক্রি করে বিপুল লাভের সুযোগ থেকে লেখক, প্রকাশক দু’জনেই বঞ্চিত হচ্ছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা আড়াই দশক আগেও রুশ ভাষায় তর্জমা হয়েছে। কিন্তু তিনি মনে করেন, “কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ছাড়া এই ভাষান্তরের ভুবন সংগঠিত নয়।”
এ বইমেলায় শুধু ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্যাভিলিয়নেই আড়াই লক্ষের কাছাকাছি জনসমাগমের কথা বলছিলেন তাদের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। তাঁর প্রশ্ন, “এত বড় বইমেলায় বিশিষ্ট লেখক, প্রকাশকদের কাজের অনুবাদ স্বত্ব-বিক্রির একটা হলও থাকবে না? বইমেলার মাঠে না-হোক, আশপাশে কোনও সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার সময়েই এটা হতে পারত।” প্রকাশক এবং বই বিক্রেতা গিল্ডের কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “আমাদের বইমেলা লেখক-পাঠকের সংযোগ সেতু। এ যুগে স্বত্ব কেনাবেচা তো জ়ুম মিটিংয়েও সম্ভব।”
কিন্তু অনেকের মত, এর জন্য বাংলা ভাষা বা সাহিত্যের একটা বাজার তৈরি করাও উচিত। সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্যান্টি’ উপন্যাসটি ব্রিটিশ প্রকাশকের চোখে পড়ে দিল্লি বইমেলার মাঠে। প্রকাশক ডেবোরা স্মিথ তখন লেখকদের মধ্যে শক্তিশালী এশীয় কণ্ঠস্বর খুঁজছেন। এর পরে সঙ্গীতার আরও নানা উপন্যাস ভাষান্তরেও সফল। লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় নানা লেখকের স্বত্ব কেনার নিশানা করে এখানকার প্রকাশকদের অনেককেই নিয়মিত যেতে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি তামিলনাডু সরকারের ডাকে তামিল বই
অনুবাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার হাতছানিতে চেন্নাইয়ে জড়ো হন দেশবিদেশের প্রকাশকেরা। কিন্তু এ রাজ্যে সরকারি, বেসরকারি পরিসরে তেমন চেষ্টা নেই।
বিদেশি প্রকাশকদের সঙ্গে নানা প্রকল্পে শরিক এষা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জাপান, কোরিয়ার সাহিত্য ইউরোপে একটা আগ্রহ তৈরি করেছে। চেষ্টা করলে বাংলা নিয়েও তা করা সম্ভব।” ব্রিটিশ কাউন্সিলের সমীক্ষা মতে, বাংলা সাহিত্যের বিশ্বব্যাপী বাজার থাকলেও তার প্রসার অসংগঠিত। বহির্বিশ্বে অনেকে আবার বাংলা বলতে বাংলাদেশকেই বোঝে।
চোখ-কান খোলা রাখলে তর্জমার স্বত্ব কেনাবেচার সুযোগ যে যথেষ্টই, তা জোর গলায় বলছেন প্রকাশক অপু দে। তাঁর মতে, “চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গ এখনও বাংলাদেশকে টেক্কা দিতে পারে।” তবে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশককুলের সচেতনতার হাঁড়ির হাল। গিল্ডকর্তারা বলছেন, গুন্টার গ্রাস বইমেলায় আসার বছরে জার্মান প্রকাশকদের সঙ্গে গাঁটছড়ার চেষ্টা হলেও বিষয়টি জমেনি। রাশিয়ার কিছু প্রকল্পেও রুশ বই তর্জমায় অনুদান পান কয়েক জন প্রকাশক। তাঁদেরও কেউ কেউ দায়সারা ভাবেই কাজটা সেরেছেন বলে শোনা যায়! বইমেলা কেন্দ্রিক বই প্রকাশ জমে উঠলেও ভাষান্তরের গুরুত্বটাই অনেকের মাথায় ঢোকেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy