ভাঙাচোরা: বর্ষা আসতেই ভাঙতে শুরু করেছে রাস্তা। কাঁকুড়গাছিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বর্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে পিচ নষ্ট হয়ে রাস্তা ভাঙছে সর্বত্র। পুরসভার দাবি, মার্চ থেকে জুন করোনার কারণে কোনও কাজ হয়নি। এ বার বর্ষার মধ্যেই ফের রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় পুরনো প্রশ্নই নতুন করে উঠতে শুরু করেছে, আদৌ কি বর্ষায় রাস্তা সারিয়ে ঠিকাদার ছাড়া আর কারও লাভ হয়? কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, শুকনো দিনগুলিতে রাস্তা মেরামতির কাজে গতি বাড়ানো হবে।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “লকডাউনের ফলে রাস্তার মেরামতির অনেক কাজ হয়নি। বর্ষার সময়ে কাজে অসুবিধা হয় ঠিকই। তবে এর মাঝে কয়েকটি শুকনো দিন পেলেই রাস্তা মেরামতির কাজ অনেকটাই করা হবে।’’ ইতিমধ্যে মূল শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কাজ হয়েছে বলেও পুরসভার দাবি।
রাস্তার আয়ু বাড়াতে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট সব সময়েই ব্যবহার করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু দূষণ ঠেকাতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ম্যাস্টিক তৈরি বন্ধ করে দেয় পুরসভা। ফলে শহরের রাস্তায় ম্যাস্টিকের ব্যবহার বছর খানেকের বেশি বন্ধ বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানান। তার জেরেও রাস্তা কমজোরি হয়ে গিয়েছে বলেও পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি।
পথের পাঁচালি
যেখানে কাজ হয়েছে
• এস এস কে এমের সামনে
• হরিশ মুখার্জি রোড
• চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের সামনের রাস্তা
• রেসকোর্স
• শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড
• রাখাল দাস আঢ্য রোড
• নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড (৮০ শতাংশ)
যেখানে কাজ চলছে
• সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড
• আলিপুর রোড
• মুকুন্দপুর
• সার্কাস অ্যাভিনিউ (দুই দিকের অংশ)
• বিভিন্ন বরো এলাকার অনেক রাস্তা
তাঁরা জানান, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ম্যাস্টিক রয়েছে। সাধারণত পাঁচ বছরের মধ্যে ম্যাস্টিকের রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। আবার নানা কারণে রাস্তা কাটার ফলেও ম্যাস্টিক নষ্ট হয়। ফলে নতুন করে সেগুলি করা দরকার। তৈরি করতে না পারায় বহিরাগত সংস্থার কাছ থেকে ম্যাস্টিক কিনে শহরের রাস্তায় ব্যবহারের কথাও ভেবেছিল পুরসভা। কিন্তু অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সমস্যায় তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বিকল্প উন্নত মানের কোনও প্রযুক্তি রয়েছে কি না, সেই খোঁজও করছে পুরসভা।
প্রতি বছর বর্ষার পরেই নভেম্বর মাসে রাস্তার মেরামতির কাজ শুরু হয়। গত বছরেও হয়েছিল। কিন্তু এ বার লকডাউনের জেরে কাজ আটকে গিয়েছে বলে দাবি পুরসভার। ইতিমধ্যেই বর্ষা এসেছে। সমস্যা বেড়েছে পুরসভার। সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভা এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এ ছাড়াও কেএমডিএ, পূর্ত দফতর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষেরও নিজস্ব রাস্তা রয়েছে। যদিও খানাখন্দ পেরিয়ে পথ চলা মানুষের দাবি, এ বার না হয় করোনা। অন্য সময়ে প্রতি বারই বর্ষার মুখে রাস্তা সারানো হয়। তার পরে বৃষ্টিতে রাস্তা ধুয়ে যায়। এ নিয়ে প্রতিবার সমালোচিত হয় পুরসভা।
আরও পড়ুন: নামেই মুক্তিকেন্দ্র, লাঠির ঘা আর গোপনীয়তায় বন্দি নেশা
পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন দফতরের রাস্তা থাকায় সমন্বয়ের অভাবে রাস্তা মেরামতি নিয়ে সমস্যা হয়। ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন মেরামতি-সহ নানা কাজে রাস্তা কাটা হলেও তা মেরামতি না করে ফেলে রাখার অভিযোগও করছেন তাঁরা। ফলে রাস্তায় খানাখন্দ থেকেই যায়। ‘কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ (কেআইআইপি)-এ শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিকাশির কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। সেখানে কাজ শেষের সাত দিনের মধ্যে রাস্তা সারাই করার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।
এক সময়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থার রাস্তা খারাপ হলে, সেগুলির কাজ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা থাকলে পুরসভা দ্রুত তা সারিয়ে দেবে।
কিছু ক্ষেত্রে পুরসভার রাস্তা দফতর ওই কাজ করলেও সামগ্রিক ভাবে তা হয়নি কেন? কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা রাস্তা দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রতন দে বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে যাদের রাস্তা শহরে রয়েছে, তাদের নিজেদের রাস্তা মেরামতির জন্য বলা হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরসভার বিভিন্ন বরোর অধীনে থাকা রাস্তার অবস্থার তালিকা দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে। বরো কর্তৃপক্ষকেও নিজেদের এলাকার রাস্তা সারাতে বলা হয়েছে।’’
কেএমডিএ জানিয়েছে, কলকাতা পুরসভা এলাকার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস ছাড়াও বন্দর এলাকার কিছু রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ তারাই করে। স্ট্র্যান্ড রোড-সহ বন্দর এলাকার ২২টি রাস্তা কলকাতা বন্দরের আওতায়। পুর এলাকার অন্তর্গত রেড রোড, ডায়মন্ড হারবার রোডের একাংশ-সহ প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তা তাদের আওতাধীন। বাকিটা কলকাতা পুরসভার অধীনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy