নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকার আবেদন নাকচ হয়েছিল আগেই। এ বার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সরস্বতী পুজোর অঞ্জলিতেও ব্রাত্য হয়েই থেকে যেতে হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্য শিক্ষাকর্তাদের। তবে অঞ্জলি দেওয়ার অনুমতি না মিললেও পুজোর বিশেষ খাবার পাবেন তাঁরা।
প্রতি বছরের মতো প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের গ্রন্থাগারে বাগ্দেবীর আরাধনার আয়োজন করা হচ্ছে এ বারেও। বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরাই ওই পুজো করেন। এ বার পুজো করবেন জয়ন্ত চক্রবর্তী নামে ব্যাঙ্ক প্রতারণার মামলায় বিচারাধীন এক বন্দি।
জেল সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। ‘তেইশ-চুয়াল্লিশ’ ওয়ার্ডে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিংহ,অশোক সাহা ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। পার্থ, মানিক-সহ বাকি শিক্ষাকর্তারা জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর কাছে এ বার সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু জেল সূত্রের দাবি, আদালতের নির্দেশ মতো এবং পার্থদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আপাতত তাঁদেরসেই ইচ্ছে বাতিল করেছেন জেল কর্তৃপক্ষ।
জেল সূত্রের দাবি, পহেলা বাইশ ও তেইশ-চুয়াল্লিশ ওয়ার্ড থেকে পুজোর স্থান, অর্থাৎ গ্রন্থাগারেরদূরত্ব প্রায় ৩০০ মিটার। মাঝখানে জেল কর্তৃপক্ষের অফিসের পরে বিপজ্জনক বন্দিদের থাকার ‘এক-দশ’ ওয়ার্ড। এর পরে মসজিদ এবং মন্দির পেরিয়ে তবেই পৌঁছনো যায় গ্রন্থাগারে। কিন্তু কারারক্ষীদের একাংশ জানাচ্ছেন,পার্থদের উপরে ক্ষুব্ধ অধিকাংশ সহবন্দিই। যাতায়াতের পথে প্রায়ই তাঁদের লক্ষ্য করে কটূক্তি করা হয়। পুজোর সময়ে প্রায় চারহাজার বর্গফুটের গ্রন্থাগারে একত্র হয়ে অঞ্জলি দেবে জেল হেফাজতে থাকা অধিকাংশ বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। সেখানে পার্থ-সহ শিক্ষাকর্তাদের নিয়ে যাওয়া অনেকটাই ঝুঁকির হয়ে যেতে পারে। জেলকর্তারাজানাচ্ছেন, পার্থকে সেল থেকে বার করে পুজোর জায়গায় নিয়ে যেতে হলে কোর্টের নির্দেশ মতো বাকি বন্দিদের সেলের মধ্যে রাখতে হবে। তাই বাকি বন্দিদের আটকে রেখে শুধুমাত্র পার্থকে অঞ্জলি দেওয়ানোর ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব।
অন্য দিকে, সহবন্দিদের সঙ্গে সুবীরেশ-শান্তিপ্রসাদের অঞ্জলি দেওয়ানোর ব্যবস্থা করাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তাতেহামলার আশঙ্কা থাকছে। সাধারণত ওই শিক্ষাকর্তাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অন্য বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বজায় রাখা হয়। এক জেলকর্তার কথায়, ‘‘শিক্ষাকর্তাদের ইচ্ছা প্রকাশের পরে অঞ্জলি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁদের আবেদন নাকচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’
প্রসঙ্গত, এ বার দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে সংশোধনাগারের পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে চেয়েছিলেন পার্থ। সেইঅনুষ্ঠানে একাধিক উচ্চপদস্থ জেলকর্তা উপস্থিত ছিলেন। পার্থের বর্তমান ঠিকানা, ‘পয়লা-বাইশ’ ওয়ার্ডের পিছনের ক্লাবে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সে বারও পার্থের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। ফলে পুজোর চার দিন সেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই কেটেছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর।
তবে জেল সূত্রের দাবি, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে সংশোধনাগারে বিশেষ মেনুর আয়োজন করা হচ্ছে। সকালের মেনুতে থাকছে লুচি-বোঁদে, দুপুরে আলু-ফুলকপি-মটরশুঁটি দিয়ে খিচুড়ি এবং পাঁচমিশালি আনাজের তরকারি। রাতে রুটির সঙ্গে বন্দিদের পাতে পড়বে ছোলার ডাল ও বাঁধাকপির তরকারি।
এক জেলকর্তার কথায়, ‘‘পার্থ-সহ বাকি শিক্ষাকর্তারা হয়তো দীর্ঘদিন সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই অঞ্জলি দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই ব্যবস্থা করা না গেলেও ওই দিনের বিশেষ মেনু পৌঁছে দেওয়া হবে তাঁদের সেলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy