বিলাসবহুল জাগুয়ার গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল ষষ্ঠী দাসের। নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক দিন আর গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়া হয়নি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পুষ্পা দাসের। স্কুলে যাওয়াও হয়নি। পড়াশোনা তো দূর অস্ত্, কয়েক দিন ধরে থানা-আদালতের চক্কর কেটেই দিন কাটছে তার। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মা ষষ্ঠী দাসের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি এমনই যে, সদ্য মাধ্যমিক পাশ করা মেয়েটির পড়াশোনা এখানেই থমকে যাবে কি না, সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে।
পুষ্পার বড় দিদি, বছর ছাব্বিশের পূজা দাস আগে বিউটি পার্লারের কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বছর দুয়েক আগে অসুস্থতার কারণে সেই কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, সে ভাবে কোনও কাজই করা চলবে না তাঁর। ফলে কার্যত ঘরবন্দি পূজার উপরেই এখন ছোট বোন পুষ্পাকে সামলানোর গুরুদায়িত্ব। আত্মীয়-প্রতিবেশীরা আপাতত দুই বোনের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেও এ ভাবে ক’দিন চলবে, বলতে পারছেন না কেউই।
গত রবিবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে বিলাসবহুল জাগুয়ার গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল বছর চল্লিশের ষষ্ঠীর। এ জে সি বসু রোড ধরে গড়িয়াহাটের দিকে যাওয়ার সময়ে গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে এসে আচমকা পিষে দিয়েছিল আনন্দপুর থানা এলাকার ভিআইপি বাজারের বাসিন্দা, পথচলতি ষষ্ঠীকে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। গত জানুয়ারিতে ষষ্ঠীর স্বামী মারা যাওয়ার পরে সংসারের হাল ধরতে কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিয়েছিলেন তিনি। মাধ্যমিক পাশ করার পরে পুষ্পাকে ভিআইপি নগর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করান। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট মেয়ের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করতেন মা-ই। এমনকি, একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরে ছোট মেয়েকে দু’জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তেও পাঠিয়েছিলেন তিনি। অভাবের সংসার হলেও মেয়ের পড়াশোনায় যাতে কোনও বাধা না আসে, তার জন্য ইদানীং আরও নতুন কোনও কাজের খোঁজ করছিলেন ষষ্ঠী। যদিও মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পড়াশোনার চিন্তা নয়, সংসারটা কী ভাবে চলবে— সেই চিন্তাতেই দিন কাটছে দু’বোনের। এমন অবস্থায় পুষ্পা আদৌ পড়াশোনাটা আর চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সেই চিন্তাতেও রয়েছেন পরিজনেরা।
এক আত্মীয় সানি দাস বলেন, ‘‘মেয়েদের তাদের দিদিমার কাছে রেখে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু ওঁর পক্ষেও তো ওদের দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ওঁর দেখাশোনা তো করতেন ষষ্ঠীই।’’ তবে গত কয়েক দিনে সেই বৃদ্ধাই ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন মা-হারা দুই নাতনির কাছে। আর এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘ষষ্ঠীর স্বামী মারা যাওয়ার পরে তাঁর মা-ই তাঁকে ভরসা জোগাতেন। এখন দুই নাতনিকে দেখতে তাঁকে কে ভরসা জোগাবে, জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy