Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengali New Year

১০ বছরের উষ্ণতম পয়লা বৈশাখ দেখল কলকাতা, আরও বৃদ্ধি পাবে অস্বস্তি?

কয়েক পা দূরে কলেজ স্ট্রিটের চেহারাও একই। কাঠফাটা রোদ্দুরে জনমনিষ্যিহীন রাস্তায় শুধু কয়েকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। সেগুলির নীচে ছায়া খুঁজে জিভ বার করে জিরোচ্ছে পথ-কুকুরের দল।

A Photograph of dance in Bengali New Year in Kolkata

স্বাগত: নববর্ষের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শনিবার, যাদবপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৪
Share: Save:

দুপুর রোদে শিয়ালদহের একটি কাগজের দোকানে বসে ঢুলছেন দোকান-মালিক। নতুন ফুল দিয়ে সাজানো দোকানের দরজা। ঠান্ডা পানীয়ের পাত্র রাখা চেয়ারের উপরে। দরজার দু’দিকে দুটো এয়ার কুলার (বাতাস ঠান্ডা করার যন্ত্র) বসানো। কিন্তু, ভরা উৎসবের দিনেও চার দিক ফাঁকা। হালখাতা হচ্ছে না? প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘চার দিকে সব পুড়ছে, আর পয়লা বৈশাখ!’’

কয়েক পা দূরে কলেজ স্ট্রিটের চেহারাও একই। কাঠফাটা রোদ্দুরে জনমনিষ্যিহীন রাস্তায় শুধু কয়েকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। সেগুলির নীচে ছায়া খুঁজে জিভ বার করে জিরোচ্ছে পথ-কুকুরের দল। পাশেই একটি বিয়ের কার্ডের দোকানের মালিক বললেন, ‘‘কখনও করোনা, কখনও গরম। ব্যবসাটা শেষ হতে চলল। পয়লা বৈশাখে এমন হাঁসফাঁস অবস্থা শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না।’’

আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মনে পড়ার কথাও নয়। কারণ, গত দশ বছরের মধ্যে শনিবারই ছিল উষ্ণতম পয়লা বৈশাখ। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে হাঁসফাঁস করতে করতেই কাটল বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে কার্যত লোকশূন্য হয়ে রইল রাস্তাঘাট। সন্ধ্যার দিকে কিছুটা ভিড় দেখা গেল বড়বাজার, বৌবাজার, গড়িয়াহাটের মতো বাজার এলাকায়। তবে, শহরের শপিং মলগুলিতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সিনেমা হল এবং রেস্তরাঁগুলিতেও ভিড় ছিল।

প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের এমনই একটি শপিং মলে ছবি তোলার মাঝে কলেজপড়ুয়া সুনয়না ঘোষাল বললেন, ‘‘গরমের কথা ভেবেই শপিং মলে ঘুরতে এসেছি।’’ পাশেই আর এক কলেজপড়ুয়া নিখিল গুপ্ত বললেন, ‘‘এর পরে সিনেমা দেখব। তার পরে খেয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা। তখন অতটা গরম লাগবে না।’’ বালিগঞ্জের একটি রেস্তরাঁর বাইরে আবার দেখা গেল, ক্রেতার লম্বা লাইন পড়েছে। একই রকম শাড়ি পরা একদল তরুণীর মধ্যে এক জন জানালেন, তাঁদের বাড়ি কসবায়। সকালে রাজডাঙার একটি ক্লাবের উদ্যোগে প্রভাতফেরি ছিল। সেখান থেকেই সকলে মিলে খেতে এসেছেন। তরুণী বলেন, ‘‘গরমে অবস্থা খারাপ। কিন্তু উৎসবে আনন্দ করতে হলে একটু কষ্ট করতেই হয়।’’

এ দিন শহরের নতুন দ্রষ্টব্য ছিল রাজভবন। শনিবার থেকেই রাজভবন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বছর তেরোর ছেলেকে নিয়ে সেখানে হাজির স্কুলশিক্ষক রঘুনাথ মণ্ডল। বললেন, ‘‘পয়লা বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য। তাই ছেলেকে রাজভবন দেখাতে এনেছি।’’

এমন ঐতিহ্যের কথাই শোনাচ্ছিলেন বড়বাজারের সত্তরোর্ধ্ব স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুকমল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘হালখাতা শব্দটির গায়ে ফারসি গন্ধ রয়েছে। ফারসিতে হাল মানে নতুন। পশ্চিম বা উত্তর ভারতে হিন্দু ব্যবসায়ীরা দেওয়ালিতে হালখাতা পুজো করলেও পূর্ব ভারত তথা বাংলায় পয়লা বৈশাখেই ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার সময়।’’ তিনি বলেন, ‘‘এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কর আদায়ের জন্য আকবরের অর্থমন্ত্রী টোডরমল জোর দিয়েছিলেন আঞ্চলিক সুবিধায়। রবিশস্যের ফসল ওঠার পরে লোকের হাতে অর্থ, সম্পদ থাকত। তাই পয়লা বৈশাখের মধ্যে কর জমা দিতে হত। আকবরের আমল থেকেই পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব। এতেই সমৃদ্ধি, নতুন শুরু, নতুন প্রত্যাশা মিশে যেতে থাকে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি দিনে।’’

কিন্তু উৎসব সুখের হল কোথায়? আবহাওয়া দফতর বলছে, এ দিন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছিল। তাপমাত্রা শুক্রবারের চেয়ে সামান্য কমেছিল। কিন্তু আজ, রবিবার থেকে জলীয় বাষ্প সরে যাবে, উত্তর-পশ্চিমের গরম হাওয়াই ফের বইবে। তাপমাত্রা এক-দুই ডিগ্রি বাড়তে পারে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy