Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
The Ganga

The Ganga: ‘গঙ্গাহীন কলকাতা’ কি ভবিষ্যৎ? দূষণে বাড়ছে আশঙ্কা

আবেদনে কাজ হবে কি? না কি, পরিবেশবিদদের আশঙ্কা মতো ‘গঙ্গাহীন’ কলকাতাই ভবিষ্যৎ? গঙ্গার প্রবহমান স্রোতই হয়তো এর উত্তর জানে!

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে কলকাতার গঙ্গার জল এবং নর্দমার জলের মধ্যে কোনও ফারাক করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, গঙ্গার দু’পাশ ক্রমাগত বোজানোর ফলে অদূর ভবিষ্যতে কি কলকাতা ‘গঙ্গাহীন’ হয়ে পড়তে পারে? এমনটাই আশঙ্কা নদী-বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদদের একাংশের।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে একটি মামলা নিয়ে দিনকয়েক আগে দেওয়া জাতীয় পরিবেশ আদালতের এক নির্দেশ। যেখানে কলকাতার গঙ্গা এবং সংলগ্ন ঘাটের দূষণ রোধ, ঘাটগুলির সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যতে দূষণ রোধের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানানোর জন্য যে ভাবে পরিবেশ আদালত কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়কেই ‘কড়া’ নির্দেশ দিয়েছে, তাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পরিবেশবিদ মহল। সংশ্লিষ্ট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছে আদালত। সেই কমিটিকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে গঙ্গার ঘাটের পরিস্থিতি দেখে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে।

যদিও পরিবেশবিদদের একাংশের প্রশ্ন, এর পরেও গঙ্গার দূষণ রোধ করা যাবে তো? কারণ, প্রতিদিন নিকাশি নালার মাধ্যমে অপরিশোধিত তরল বর্জ্যের গঙ্গায় মেশা, পর্যাপ্ত সংখ্যক নিকাশি পরিশোধন প্লান্টের (এসটিপি) অভাব, এমনকি চালু প্লান্টগুলির মধ্যেও অনেকগুলিরই অকেজো হয়ে পড়ে থাকা— এই সব সমস্যা তো বহু দিনের। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘কলকাতার গঙ্গার জল ও নর্দমার জলের মধ্যে ফারাক করা যাচ্ছে না বহু জায়গায়। বর্জ্য ফেলার কারণে ক্রমশ বুজে আসছে গঙ্গার দুই পাড়। এমন চলতে থাকলে গঙ্গাহীন কলকাতা আর বেশি দূরে নয়!’’

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে গঙ্গাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির কারণে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশের গঙ্গার দূষণ নিয়ে মাঝেমধ্যেই সরব হয় এই রাজ্যের শাসক দল। আবার পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গার অবস্থা নিয়ে পাল্টা মন্তব্য শোনা যায় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের মুখে। কিন্তু গঙ্গার দূষণ একই থেকে যায়।’’

এমনিতে গঙ্গায় মেশা অপরিশোধিত তরল বর্জ্যের পরিমাণ এবং তা পরিশোধনের জন্য এসটিপি-র সংখ্যার অপ্রতুলতার বিষয়টি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রস্তাবিত-সহ দেশে মোট এসটিপি-র সংখ্যা ১৬৩১। যার মধ্যে ১০৯৩টি এসটিপি এই মুহূর্তে কাজ করছে, ১০২টি কাজ করছে না (নন-অপারেশনাল), ২৭৪টি নির্মীয়মাণ এবং ১৬২টি প্রস্তাবিত। দেশে দৈনিক তরল বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৭২,৩৬৮ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু নির্মীয়মাণ এবং প্রস্তাবিত ধরেও ১৬৩১টি এসটিপি-র পরিশোধনের সম্মিলিত ক্ষমতা দৈনিক ৩৬,৬৬৮ মিলিয়ন লিটার। অর্থাৎ, দৈনিক ফারাক ৩৫,৭০০ মিলিয়ন লিটারের!

যার ব্যতিক্রম নয় কলকাতাও। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘গঙ্গার জল দিয়ে সবাইকে শুদ্ধ করা হয়। কিন্তু গঙ্গাকে শুদ্ধ করবে কে?’’ এ দিকে, দৈনিক তরল বর্জ্যের উৎপাদনের নিরিখে দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ (দৈনিক ৫৪৫৭ মিলিয়ন লিটার)। মহারাষ্ট্র (৯১০৭ মিলিয়ন লিটার), উত্তরপ্রদেশ (৮২৬৩) ও তামিলনাড়ুর (৬৪২১) পরেই। রাজ্যের ৫০টি এসটিপি-র মধ্যে কাজ করছে মাত্র ২৪টি। সেগুলির মধ্যে আবার মাত্র আটটি এসটিপি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নির্ধারিত মাপকাঠি মেনে চলছে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী, উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুপ্রভা প্রসাদের আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, গঙ্গার ঘাটে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা ঠেকানো, ঘাটে পড়ে থাকা বর্জ্য থেকে যাতে নোংরা তরল গঙ্গায় না মেশে, সে জন্য নিয়মিত ঘাট পরিষ্কার, কতগুলি পুর এবং শিল্প নিকাশি বর্জ্য-নালা সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে পড়ছে তা চিহ্নিত করা এবং তার মাধ্যমে তরল বর্জ্যের গঙ্গায় গিয়ে মেশা-সহ গঙ্গা-দূষণ রোধে আবেদন করা হয়েছে।

তবে সেই আবেদনে কাজ হবে কি? না কি, পরিবেশবিদদের আশঙ্কা মতো ‘গঙ্গাহীন’ কলকাতাই ভবিষ্যৎ? গঙ্গার প্রবহমান স্রোতই হয়তো এর উত্তর জানে!

অন্য বিষয়গুলি:

The Ganga Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy