যে আবাসনে লুকিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, যেখানে গুলিযুদ্ধ, সেখানে এখন কড়া পুলিশি পাহারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মালিক জানেন না, কে তাঁর ফ্ল্যাটের ভাড়াটে! প্রথমে যিনি ভাড়া নিলেন, তিনি নিজে থাকছেন, না কি অন্য কেউ ভাড়ায় আছেন, হিসেব নেই সে সবের। ভাড়াটেও জানেন না, তাঁর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটের আসল মালিক কে!
দালাল-চক্রের কল্যাণে এই মুহূর্তে কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে একাধিক হাত ঘোরা এমন ফ্ল্যাটের রমরমা ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ। বসবাসের জন্য নেওয়া সেই সব ফ্ল্যাটে আদতে কী হয়, তার হিসেবই থাকে না! প্রতিবেশী তো বটেই, পুলিশও এ বিষয়ে অন্ধকারেই থাকে বলে অভিযোগ। বুধবার পর্যন্ত যেমন ছিল নিউ টাউনের সাপুরজি এনক্লেভ ‘বি’ ব্লকের ১৫৩ নম্বর বিল্ডিংয়ের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি। সেখানে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ে দুই ‘গ্যাংস্টার’ নিহত হওয়ার পরে তদন্তে উঠে এসেছে, আকবর আলি নামে সিআইটি রোডের এক বাসিন্দা ওই ফ্ল্যাটটির মালিক। ঘটনাটি ছিল এ রকম, সুমিত কুমার নামে হরিয়ানার বাসিন্দা এক ব্যক্তি ওই এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়ার জন্য নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত সৌরভ কুমার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সৌরভই সাপুরজি এলাকায় কাজ করা সুশান্ত সাহা নামে এক দালালের সঙ্গে সুমিতের যোগাযোগ করিয়ে দেন। সুশান্ত নিজেই মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ১১ মাসের চুক্তিপত্র করে গত ২৩ মে সাপুরজির ওই ফ্ল্যাটটি দিয়ে দেন।
ঘটনার পরে পুলিশ সুমিতের খোঁজ শুরু করেছে। পাশাপাশি দালাল এবং ফ্ল্যাটের মালিক নথিপত্র যাচাই করে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এ-ও জানা যাচ্ছে, নিউ টাউনের এই ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ভাড়াটে এবং মালিকের বিস্তারিত তথ্য, দু’পক্ষের সই এবং ভাড়াটের ছবি-সহ একটি কাগজ স্থানীয় থানায় জমা করা ছিল। পুলিশের স্ট্যাম্প মারা সেই কাগজ প্রকাশ্যে আসার পরে জানা গিয়েছে, এই আবাসনের সব ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পুলিশও সেই নথি খতিয়ে আদৌ দেখেনি? যদিও নথি খতিয়ে দেখার রীতি বহু জায়গায় মানা হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অনেকেই বিষয়গুলো জানেন না। সবটাই হয় এলাকার নেতা-দাদার মদতপুষ্ট দালালের ইচ্ছেয়। কোনও ফ্ল্যাট ওঠার পরে তার ছবি নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় দালালেরা। ফ্ল্যাট কেউ কিনতে চাইলে অন্য কথা, নয়তো দালালেরাই ভাড়া বসিয়ে নেন। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে মালিক জানতেও পারেন না কত টাকায় আর ক’মাসের চুক্তিতে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। একটি ফ্ল্যাট দেখিয়ে একাধিক জনের থেকে টাকা তোলারও অভিযোগ ওঠে কখনও।
মধ্য কলকাতার এক দালাল সমীর ঘোষাল বললেন, “ফ্ল্যাট কেনার পরে অনেকেই আমাদের হাতে দিয়ে দেন। মালিকের যদি মাসে আট হাজার টাকা লাগে, আমরা ১৩-১৪ হাজার টাকার কমে ভাড়া বসাই না।” মালিক জানতে পারলে? ওই দালালের দাবি, “আমরা এলাকার ছেলে। দূরে বসে কলকাঠি নাড়তে গেলে ফ্ল্যাটটাই বেহাত হয়ে যাবে।” যাদবপুরের ফ্ল্যাট-বাড়ির দালাল নিখিল সাহা আবার বললেন, “আধার কার্ড বা ভোটার কার্ডের একটা করে প্রতিলিপি দিয়ে দিলেই হয়ে যায়। কারও উপরে সন্দেহ হলে পাঁচ মাসের ভাড়া একেবারে অগ্রিম নিয়ে নিই।”
নিয়ম অনুযায়ী, ভাড়াটের নথি পুলিশের কাছে জমা করতে হয়। চুক্তির মেয়াদ বাড়লেও থানায় জানানোর কথা। কলকাতার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কারও বসবাসের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কিন্তু নতুন ভাড়াটের তথ্য পুলিশকে জানানোর কথা। দালাল-চক্রের পাল্লায় পড়ে সেটা কেন হচ্ছে না দেখতে হবে। এটা পুলিশকেও দেখতে বলব।” কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক বলেন, “থানাগুলিকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
নিউ টাউনেরই দালাল সনৎ ঘোষের যদিও দাবি, “সাপুরজির ঘটনার পরে একটু আলোচনা হচ্ছে এই যা। ক’দিন পরেই আবার সব যে কে সে-ই হয়ে যাবে। ফ্ল্যাট ঘুরবে হাতে হাতেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy