Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
স্টেম সেল পেয়ে সুস্থ ক্যানসার রোগী
Stem cell

Stem cell: দেশের সীমানা মুছে রক্তের বন্ধন গড়ল নতুন জীবন

স্টেম সেল দান এবং তার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রক্তের বন্ধনটা অবশ্য তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগেই।

দেখা: অতনু কিশোর ও তাঁর মা মাধবীরানির সঙ্গে কিশোর কে (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার।

দেখা: অতনু কিশোর ও তাঁর মা মাধবীরানির সঙ্গে কিশোর কে (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:৪২
Share: Save:

ওঁদের বাসস্থানের দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। একে অপরকে চোখে দেখেননি কেউ। মঙ্গলবার রাজারহাটের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের মঞ্চ মিলিয়ে দিল পদ্মা নদী ও আরবসাগরের তীরের সেই দুই বাসিন্দাকে। অচেনা যুবকেরা একে অপরকে জড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে গড়ে তুললেন আত্মীয়তা। সভাগৃহের দর্শকাসন থেকে সকলে তখন করতালি দিয়ে স্বাগত জানালেন তাঁদের।

স্টেম সেল দান এবং তার প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রক্তের বন্ধনটা অবশ্য তৈরি হয়েছিল পাঁচ বছর আগেই। আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা মেনে স্টেম সেল দাতা ও গ্রহীতার পরিচয় দু’বছর গোপন রাখতে হয়। পরে বাদ সেধেছিল কোভিড। তাই বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা অতনু কিশোর এবং কেরলের কুন্নুরের বাসিন্দা কিশোর কে একে অপরকে চিনলেন পাঁচ বছর পরে। কেরলের কিশোরের দেওয়া স্টেম সেলে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে ছক্কা হাঁকাতে তিনি প্রস্তুত, জানালেন বাংলাদেশের অতনু কিশোর। দু’জনেই বললেন, ‘‘এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। দেশ-কাল সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে আমরা এখন রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ।’’

সালটা ছিল ২০১৩। নবম শ্রেণির পড়ুয়া অতনুর তীব্র জ্বর ও ঘামের সমস্যা কমছিল না। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে রক্তের ক্যানসার। বাংলাদেশেই দেওয়া হয় কেমোথেরাপি। ২০১৭ সালে ফের রোগ মাথাচাড়া দেয়। মা মাধবীরানি বলেন, ‘‘সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। শেষ চেষ্টা করতে আসি রাজারহাটের হাসপাতালে।’’ সেখানকার পেডিয়াট্রিক হেমাটো-অঙ্কোলজি এবং সেলুলার থেরাপি বিভাগের চিকিৎসক রঘু কে এস জানান, দ্বিতীয় বার ক্যানসার ফেরায় অতনুর স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

কিন্তু জিনগত বৈশিষ্ট্যের (এইচএলএ বা হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) মিল না হলে সেটা সম্ভব ছিল না। স্টেম সেল দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয় অতনুর বোনকে। দু’জনের জিনগত বৈশিষ্ট্যে মিল না পেয়ে আশাহত হন মাধবীরা। রঘু কে এস বলেন, ‘‘খোঁজ শুরুর এক বছরের মধ্যেই একই জিনগত বৈশিষ্ট্যের স্টেম সেলের সন্ধান মেলে।’’ ২০১৭ সালেই তাঁর অফিস আয়োজিত স্টেম সেল দান কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী কিশোর কে। কিন্তু জানতেন না, কবে তাঁর স্টেম সেল অন্যের প্রাণ ফেরাতে কাজে লাগবে।

২৭ বছরের কিশোর বলেন, ‘‘এক বছরের মধ্যেই সেই সুযোগ এসেছিল। হাসপাতালে গিয়ে কয়েক ঘণ্টার প্রক্রিয়ায় স্টেম সেল দান করি। জানতাম না যে, আমারই নামের আর এক জনকে সেটা দেওয়া হবে।’’ রক্তের ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার মতো বিরল রক্তের অসুখে ভোগা রোগীদের পাশে দাঁড়ানো সংস্থা ‘ডিকেএমএস-বিএমএসটি
ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমেই কেরলের যুবকের স্টেম সেল পেয়েছিলেন বাংলাদেশের যুবক।

ওই সংস্থার সিইও প্যাট্রিক পল বলেন, ‘‘রক্তের ক্যানসারের রোগীদের জন্য স্টেম সেল প্রতিস্থাপনই বাঁচার চাবিকাঠি। কিন্তু ম্যাচিং স্টেম সেল দাতা খুঁজে পাওয়া সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো।’’ এ দেশে প্রতি পাঁচ মিনিটে এক জনের রক্তের ক্যানসার ও রক্তের অন্য রোগ সামনে আসে। এই রোগীদের বাঁচাতে উপযুক্ত দাতার প্রয়োজন। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে মিললেও, বাকি ক্ষেত্রে অসম্পর্কিত দাতার খোঁজ চালাতে হয় বলেই জানাচ্ছেন টাটা মেডিক্যাল সেন্টারের অধিকর্তা চিকিৎসক মামেন চান্ডি।

তাঁর কথায়, ‘‘ম্যাচিং দাতার অভাবে দেশে বিপুল সংখ্যক রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান না। তাই ব্লাড স্টেম সেল দানের জন্য মানবিকতার খাতিরে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। রক্তদান করলে যেমন কোনও ক্ষতি হয় না, তেমনই স্টেম সেল দানেও দাতার সমস্যা হয় না।’’

চিকিৎসকদের এই বার্তাই পরিচিতদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান দুই যুবক। কুন্নুরের কিশোরকে জড়িয়ে আমন্ত্রণ জানালেন মাধবী, ‘‘তুমিও আমার আর এক ছেলে। মায়ের বাড়িতে আসবে তো?’’ কেরলের দাদাকে পদ্মার ইলিশের স্বাদ দিতে চান অতনুও। এ সবের ফাঁকে বাংলাদেশের ভাইয়ের মোবাইলে নিজের নম্বরটা তখন রেখে দিতে ব্যস্ত কুন্নুরের যুবক।

অন্য বিষয়গুলি:

Stem cell
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy