গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
হতে পারে খাতায়-কলমে সে নাবালক। কিন্তু গণধর্ষণের মতো অপরাধে ১৬ বছরের কিশোরকেও ছাড় দেওয়া যায় না। এ কথা বলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন পকসো বিশেষ আদালতের বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস। ১২ বছরের এক বালিকাকে গণধর্ষণ ও নিগ্রহের অপরাধে ২১ বছরের তরুণ সুমন সরকার এবং ১৬ বছরের ওই কিশোরকে শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ধর্ষিতা বালিকার বিপদের আশঙ্কায় লালবাজারকে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে বলেছেন বিচারক।
গত ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, উল্টোডাঙা থানা এলাকায় বাসন্তী কলোনির একটি মাঠে রাত ৮টার পরে ১২ বছরের মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওই দু’জন ধর্ষণ ও নিষ্ঠুর ভাবে অত্যাচার করে। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী গণধর্ষণের অভিযোগ এবং পকসো আইনের ছ’নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ। সরকারি কৌঁসুলি বিবেক শর্মা জানিয়েছেন, মারধর খেয়ে মেয়েটি পিঠে ও শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছিল।
উল্টোডাঙার এই গণধর্ষণের ঘটনাটি অনেককে ২০১২-র ডিসেম্বরে নির্ভয়া-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেই ঘটনার তদন্তে জানা গিয়েছিল, ধর্ষকদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি নৃশংস ছিল এক কিশোর। তার কী শাস্তি হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। সমাজকর্মীদের অনেকের আপত্তি থাকলেও ওই কিশোরের শাস্তি হয়েছিল মাত্র তিন বছরের জন্য। ওই সময়টা নাবালক অপরাধীদের হোমে ছিল সে। উল্টোডাঙার এই ঘটনাটিতেও আদালতে ১৬ বছরের ওই কিশোরের তরফে দাবি করা হয়েছিল, সে নাবালক। কিন্তু গণধর্ষণের মতো অপরাধে ১৬ বছরের কিশোরকেও প্রাপ্তবয়স্ক বলে গণ্য করা উচিত বলেই সম্প্রতি লোকসভায় একটি বিল পাশ হয়েছে। বিচারক এ দিন তাঁর রায়ে সেই উদাহরণ দেন। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে ২০১৩-র জুলাইয়ের একটি রায়ের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন।
গণধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটির মা উল্টোডাঙায় পরিচারিকার কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। তার কিছু ক্ষণ বাদেই কাঁদতে কাঁদতে জখম অবস্থায় মেয়েটি বাড়ি ফিরে এসে সব বলে। সেই রাতেই উল্টোডাঙা থানায় গণধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয় এবং পুলিশ পরের দিন দু’জনকে গ্রেফতার করে। ধর্ষণকারীরা মেয়েটির পরিচিত। বিশ্বাসভঙ্গের এত বড় ঘটনায় সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক নিয়ে সংশয় তৈরি হবে বলেও এ দিন বিচারকের রায়ে মন্তব্য করা হয়েছে। দোষীদের অভিযোগকারিণী বালিকাকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতেও বলেছেন তিনি। এ ছাড়া, জেলা লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি-র তহবিল থেকে মেয়েটিকে আরও তিন লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy