কৃষলাল রজক।
বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মৃত্যু হল এক কিশোরের। শুক্রবার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার এই ঘটনায় রহস্য তৈরি হয়েছে। জন্মদিন উপলক্ষে গিয়ে কেন সে পুকুরে নেমেছিল, তা নিয়ে অন্ধকারে মৃতের পরিবার। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীদের মতে, সেই রিপোর্ট এলেই স্পষ্ট হবে কী ভাবে মৃত্যু ঘটল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম কৃষলাল রজক (১৬)। বাড়ি ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া রোডে। বাবা, মা ছাড়াও তার এক দিদি রয়েছেন। খুশবুলাল রজক নামে সেই তরুণী জানান, লকডাউনে তাঁর বাবার চাকরি চলে যায়। তাই ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই স্কুল ছেড়ে দেয় কৃষ। শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে এসে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন রিজেন্ট পার্কের পূর্ব পুটিয়ারির বাসিন্দা সর্বজিৎ সিংহ নামে এক তরুণ ও তাঁর এক বন্ধু। বছর আঠারোর সর্বজিৎ তাঁর ভাইয়ের স্কুলেই পড়াশোনা করতেন বলে দিদির দাবি। সম্প্রতি সর্বজিৎও পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন।
তরুণী বলেন, ‘‘নিজের জন্মদিন পালন করতে ভাইকে নিয়ে গিয়েছিল সর্বজিৎ। সন্ধ্যায় ভাইয়ের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও ভাই ফিরছে না দেখে ওর নম্বরে ফোন করি আমরা। বেশ কয়েক বার বেজে গেলেও কেউ ধরেনি। এর পরে ফোন ধরে পুলিশ। আমাদের বলা হয়, ভাইকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই যেন চলে যাই।’’ তরুণীর দাবি, হাসপাতালে গেলে তাঁদের জানানো হয়, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে কৃষের। ডুবে গিয়েছিলেন সর্বজিৎ-ও। কিন্তু তিনি কোনও মতে বেঁচে যান। কিন্তু জন্মদিনের নিমন্ত্রণে গিয়ে কৃষ কেন পুকুরে নামল, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না খুশবুরা।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্বজিৎ ও তাঁর পরিবার একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাতেও রহস্য কাটেনি। পুলিশ জেনেছে, জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ সর্বজিৎদের পূর্ব পুটিয়ারির বাড়িতে যায় কৃষ। তাদের সঙ্গে আরও এক কিশোর ছিল। সর্বজিতের মা রাজদীপ কৌর পুলিশকে জানান, তিনি তাঁর ছোট ছেলেকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন। দুপুরে বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন সর্বজিতেরা। এর পরে অন্য কিশোর বাড়ি ফিরে যায়। স্কুল থেকে ফিরে রাজদীপ দেখেন, সর্বজিতেরা কেউ বাড়িতে নেই। এর পরে সর্বজিতের বাবা রাজবিন্দর সিংহের কাছে তাঁর ছেলের ঘটনার কথা জানিয়ে ফোন আসে।
সর্বজিৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই বন্ধু মিলে পুকুরে স্নানকরবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সেই মতো পোশাক বদলে বাড়ির কাছের মহেশ পুকুরে যান তিনি ও কৃষ। কিন্তু জলে নামার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পা পিছলে পড়ে যায় কৃষ। সর্বজিৎ তাকে ধরতে গেলে তিনিও জলে তলিয়ে যেতে থাকেন। এর পরে দু’জনকে কোনও মতে উদ্ধার করেন স্থানীয় কয়েক জন। দ্রুত তাঁদের পাঠানো হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা কৃষকে মৃত ঘোষণা করেন। সত্যিই কৃষ স্বেচ্ছায় পুকুরে গিয়েছিল কি না, বা এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এ দিন কৃষদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় আত্মীয়দের ভিড়। কৃষের মা লক্ষ্মী রজক কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। শুধু বলেছেন, ‘‘কুসঙ্গে পড়া আটকাতে ছেলেটাকে পড়াব ভেবেছিলাম। তার মধ্যেই এমন ঘটে গেল! বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, এই তো কৃষ এসে ডাকবে, খাবার খেতে চাইবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy