নেই ট্যাক্সি। অসুস্থ প্রৌঢ়ের ঠাঁই হাওড়া স্টেশন চত্বরে।—নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া স্টেশনের সামনে শুয়ে কাতরাচ্ছেন জন্ডিসে আক্রান্ত প্রৌঢ়। হন্যে হয়ে ঘুরছেন স্ত্রী। ট্যাক্সির দেখা নেই! শেষে পুলিশকর্মীর সহায়তায় অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা হল। তাতেই হাসপাতালে রওনা দিলেন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা হিতেশ রায়বর্মন নামে ওই ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার সাতসকালেই শহর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল ট্যাক্সি। ফলে নাজেহাল হয়েছেন মানুষ। বাড়তি পাওনা বেলা পৌনে দশটা নাগাদ শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে কাটা পড়ে এক তরুণের মৃত্যুর জেরে মেট্রো বিভ্রাট।
এ দিন থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ও বিএসসি পার্ট ওয়ান অনার্স পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে নাকাল হন ছাত্রছাত্রীরা। রাস্তার বেরিয়ে ট্যাক্সির দেখা পাননি শিয়ালদহের বাসিন্দা কঙ্কণা সিংহ। মেট্রোয় গিয়ে শোনেন, বিভ্রাট। অগত্যা ফের শিয়ালদহে ফিরে ট্রেনে নিউ আলিপুরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছন।
ভোগান্তি হয় জেলা বা ভিন্ রাজ্য থেকে আসা লোকেদেরও। সকাল থেকেই দূরপাল্লার ট্রেনে হাওড়া-শিয়ালদহে পৌঁছেছেন অনেকে। গন্তব্যে পৌঁছতে অগত্যা কেউ কেউ মালপত্র নিয়ে ভিড় বাসেই চেপেছেন। কেউ বা বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করেছেন। সকালে মুম্বই মেলে ইনদওর থেকে শহরে পৌঁছন রবি জৈন। সঙ্গে স্ত্রী ও চার মাসের শিশুপুত্র। ঝাড়া তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ট্যাক্সির দেখা নেই। শেষে এক কুলির মধ্যস্থতায় গাড়ি ভাড়া করে বাগুইআটি যান তিনি। অসুস্থ মাকে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করেছিলেন আসানসোলের শুভম দত্তও। হাওড়া স্টেশনের স্ট্যান্ড তখন মাছি তাড়াচ্ছে।
আচমকা ট্যাক্সি ধর্মঘটের সুযোগও নিয়েছেন ট্যাক্সিচালকদেরই একাংশ। সকালে শিয়ালদহ স্টেশনের প্রি-পেড স্ট্যান্ড ছিল ফাঁকা। তবে স্টেশন চত্বরেই ছিল তিন-চারটি ট্যাক্সি। যাত্রীদের অভিযোগ, মওকা বুঝে ওই চালকেরা শিয়ালদহ থেকে সাঁতরাগাছির ভাড়া হেঁকেছেন ৬০০ টাকা! শাট্লে মাথাপিছু ২০০ টাকা! ভিড় বেড়েছে বাসেও। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে রীতিমতো বাদুড়ঝোলা।
সকাল থেকে যখন ট্যাক্সি না পেয়ে দুর্ভোগ, দুপুরে নাকাল করেছে ট্যাক্সিচালকদের মিছিল। দুপুর একটা নাগাদ দলে দলে ট্যাক্সিচালক ধর্মতলার দিকে যেতে থাকেন। দুটো নাগাদ তিনটি ট্যাক্সি সংগঠনের ডাকে মিছিল ধর্মতলা থেকে রওনা দেয় কলেজ স্কোয়ারের দিকে। ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা মোড়। পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের জেরে যানজট ছড়ায় শিয়ালদহ, ওয়েলিংটন, বৌবাজার, মৌলালিতেও।
এ দিন মিছিলকারীদের একাংশ ধর্মতলার মোড়ে যানজটে দাঁড়ানো কয়েকটি ট্যাক্সির চালককে মিছিলে যোগ দিতে বলেন। অভিযোগ, ওই চালকেরা রাজি না হওয়ার তিন-চারটি ট্যাক্সিতে ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সকালেও মুদিয়ালিতে ট্যাক্সি চালাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু আগে থেকে কোনও ঘোষণা না করে এ ভাবে ট্যাক্সি ধর্মঘট করা হল কেন? মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা, সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর এক নেতা বলছেন, ধর্মঘটের কোনও নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল না। শুধু মিছিলেরই ডাক দেওয়া হয়েছিল। “তবে মিছিলে যোগ দিলে চালকেরা যে গাড়ি চালাবেন না, এটাই স্বাভাবিক।”মন্তব্য ওই নেতার। কিন্তু কেন এই মিছিল-ধর্মঘট?
মিছিলকারীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে ট্যাক্সিচালকদের উপরে পুলিশি জুলুম মাত্রা ছাড়িয়েছে। যাত্রী প্রত্যাখান করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা হচ্ছে। প্রত্যাখান না করলেও নানা ছুতোয় জরিমানা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সিটুর ওই নেতা বলছেন, “প্রশাসনকে বারবার বলেও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা রাস্তায় নেমেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy