বিধাননগর পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
এক জন সিনিয়র পুর নেতা তাঁর আসনে বসে। যাঁর সঙ্গে তর্ক জুড়ে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন দুই পুরপ্রতিনিধি। ওই দু’জনকে সমর্থন জানিয়ে অন্য পুরপ্রতিনিধিদের টেবিল চাপড়ানোর শব্দে ফেটে পড়ছে অধিবেশন কক্ষ। বিরোধী কেউ নন, সকলেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য। বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুরে অনেকটা এমনই ছিল পুর বোর্ডের বৈঠকের পরিবেশ।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশ ছিল, কোনও বিতর্কিত বিষয় ঘিরে বাগ্বিতণ্ডা না করে পুর বোর্ডের বৈঠক করতে হবে। কিন্তু অন্দরের খবর, এ দিন সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই পুরনো বোর্ডের বৈঠকে আলোচ্য বিষয় কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকে চেপে ধরেন পুরপ্রতিনিধি প্রসেনজিৎ নাগ ও মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী। তাঁদের বক্তব্যকে সমর্থন করেন বাকি পুরপ্রতিনিধিদের অনেকে। এর পরে বৈঠক বন্ধ করে বেরিয়ে যান সব্যসাচী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীও। এ দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে বিধাননগরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে হারের পরে প্রকাশ্যেই কৃষ্ণার সমালোচনা করেছিলেন সব্যসাচী। তার পরে বোর্ডের একটি বৈঠকে সব্যসাচীর বিরুদ্ধে মন্ত্রগুপ্তির শপথ ভাঙার অভিযোগ আনেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি প্রসেনজিৎ। তাঁকে সমর্থন করেন দেবরাজ ও তাঁর অনুগামীরা। বিধাননগরের রাজনীতিতে সব্যসাচী ও দেবরাজের বিপরীত মেরুতে অবস্থানের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। বোর্ডের শেষ বৈঠকের আগে প্রসেনজিতের বক্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়। সেই কার্যবিবরণীতে সই করেছিলেন সব্যসাচী। যা নিয়ে পরে আর এক প্রস্ত জলঘোলা হয়েছিল। এর পরেই পুরমন্ত্রী দু’পক্ষকে সমস্যা মিটিয়ে নিতে নির্দেশ দেন।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকের শুরুতেই প্রসেনজিৎ তাঁর বক্তব্য বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা চান সব্যসাচীর কাছে। চেয়ারম্যান জানান, পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে এসেছিল পুর কমিশনারের কাছে। কমিশনারের থেকে তাঁর কাছে এসেছে। তখন প্রসেনজিৎ ও দেবরাজ প্রশ্ন তোলেন, পুরো ব্যাপারটি যদি আমলারাই ঠিক করবেন, তা হলে তাঁদের, অর্থাৎ পুরপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কোথায়?
সূত্রের খবর, এর জবাবে সব্যসাচী বলতে বাধ্য হন, গোটা বিষয়টি এসেছিল পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছ থেকে এবং তাঁর নির্দেশ মতো তিনি শেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে সই করেছিলেন। অর্থাৎ, সামগ্রিক বিষয়টিতে যে পুরমন্ত্রীর ভূমিকা ছিল, তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এর পরেও নিরস্ত করা যায়নি প্রসেনজিৎ ও দেবরাজকে। শেষমেশ বৈঠক মুলতুবি করে বেরিয়ে যান সব্যসাচী।
গত শনিবার ডেঙ্গিতে বিধাননগরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ দিনের বৈঠকে নাগরিক পরিষেবার এ হেন বিষয়টিও গুরুত্ব পায়নি। দেবরাজপন্থীদের বক্তব্য, সব্যসাচী চাইলে প্রসেনজিৎকে নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। সামগ্রিক ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এর বেশি কিছু বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy